প্রস্তুতি: পুরুলিয়ার একটি স্কুলে তোলা নিজস্ব চিত্র।
উঁচু নাটমঞ্চের একধারে পাখোয়াজ, তবলা, হারমোনিয়ামের সারি। ওস্তাদদের হাতের জাদুতে সব যেন হঠাৎ জীবন্ত হয়ে উঠেছে। সেই তালে নীচে বসে থাকা কয়েকশো শ্রোতার কেউ কেউ মাথা দুলিয়ে যাচ্ছেন, কেউ বা হাতের মুদ্রায় তবলার বোল দিয়ে যাচ্ছেন। জাফরি কাটা দেওয়ালের ওপাড় থেকে রাজবাড়ির মহিলারা গান শুনছেন।
এ দৃশ্য অবশ্য কয়েক দশক আগেই উধাও হয়েছে। সেই রাজতন্ত্র নেই। কালের নিয়মে সুরের জাদুকরেরা নাটমঞ্চে অন্যদের জায়গা ছেড়ে চলে গিয়েছেন। তবে প্রথা মেনে সোমবার সন্ধ্যায় মানবাজারের পাথরমহড়া রাজবাড়ির নাটমঞ্চে এ বারও বসন্তের গান পরিবেশিত হল। রাজবাড়ির বর্ষীয়ান প্রতিনিধি বিষ্ণুপুর ঘরানার গায়ক গোরাচাঁদ নারায়ণ দেব হারমোনিয়ামে হাত ঠেকিয়ে বলে ওঠেন— ‘‘এ তো শুধু বসন্তের গান নয়, এ ঈশ্বরকে আবাহন।’’ তাঁর গলায় ভেসে ওঠে— ‘‘মীরা কে প্রভু গিরিধর নাগর...’’
নাটমঞ্চের চারপাশে ঝুরি নামিয়ে দেওয়া বট ও ঘোড়ানিমের পাতার ফাঁকে আদুরে চাঁদ উকিঝুকি দিচ্ছিল। যেন সুরের সন্ধ্যায় সাক্ষী হতে সেই চাঁদও হাজির। আলোর ব্যবস্থা ছিল না। চাঁদের মোহময়ী পরিবেশ গানের মূর্ছনাকে অন্যমাত্রায় পৌঁছে দিয়েছিল। একে একে নাটমঞ্চে ওঠেন এলাকার সঙ্গীত শিক্ষক বলরাম দত্ত, গায়িকা মানসী মিশ্র, সংযুক্তা রায় প্রমুখ।
অন্যতম ব্যবস্থাপক শিবশঙ্কর নারায়ণদেবের চোখে স্মৃতি ভেসে ওঠে—‘‘এই নাটমঞ্চে কত শিল্পী গেয়েছেন। হোলি উপলক্ষে তখন বাড়িতে আত্মীয় স্বজনদের ভিড় লেগে থাকত। ছোটবেলায় হারমোনিয়াম, তবলা নাটমঞ্চে পৌঁছে দিতে পারলে তখন আমাদের পায় কে! এখন সেই বোলবোলা নেই। তবে হোলির দিন এলে আমরা একটু অন্যরকম হয়ে পড়ি। হোলির ক’দিন গানবাজনা, শিল্পীদের আনাগোনা, কেশর দেওয়া লাড্ডু বিলি— সে একটা অন্যরকম দিন গেছে।’’
বসন্ত আবাহনের সূত্র ধরে পাথরমহড়া নাটমঞ্চে সোমবার সন্ধ্যায় যেন ইতিহাস ফিরে এল।