জামানত বাজেয়াপ্ত হলেও লড়েছেন, ছেদ এ বার

পঞ্চায়েত নির্বাচনে তিন বার লড়েও কোনওবারই জয়ের মুখ দেখেননি স্বামী-স্ত্রী। ফি-বার জামানতও বাজেয়াপ্ত হয়েছে। কিন্তু, ভোটে লড়ার নেশাটা যেন পেয়ে বসেছিল দুবরাজপুরের হেতমপুর পঞ্চায়েতের বাসিন্দা অজয় ও তাঁর স্ত্রী মাধুরী বাগদির। এ বারই ছেদ পড়েছে তাতে।

Advertisement

দয়াল সেনগুপ্ত

দুবরাজপুর শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০১৮ ০১:১১
Share:

অজয় ও তাঁর স্ত্রী মাধুরী বাগদি। দুবরাজপুরের হেতমপুরে।

পঞ্চায়েত নির্বাচনে তিন বার লড়েও কোনওবারই জয়ের মুখ দেখেননি স্বামী-স্ত্রী। ফি-বার জামানতও বাজেয়াপ্ত হয়েছে। কিন্তু, ভোটে লড়ার নেশাটা যেন পেয়ে বসেছিল দুবরাজপুরের হেতমপুর পঞ্চায়েতের বাসিন্দা অজয় ও তাঁর স্ত্রী মাধুরী বাগদির। এ বারই ছেদ পড়েছে তাতে।

Advertisement

কেন?

ওঁরা বলছেন, ‘‘ভোট নিয়ে যা চলছে, দেখেছেন তো। আমাদের ছেলেপুলে নেই। বুড়ো বয়সে মার খেয়ে হাত-পা ভাঙলে দু’বেলা দু’মুঠো খাবারও যে জুটবে না।’’

Advertisement

হেতমপুরের আট নম্বর সংসদের বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, ভোটে দাঁড়িয়ে তিনবার হারতে হয়েছে। এমনকি প্রতিবারই জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। তা সত্ত্বেও প্রতিবার নকশাল (সিপিআইএল) সমর্থিত নির্দল প্রার্থী হিসেবে অজয় অথবা ওঁর স্ত্রী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকেন। শর্ত একটাই— মহিলা সংরক্ষিত আসন হলে স্ত্রী-কে দাঁড় করান। নতুবা নিজেই লড়েন দিনমজুর অজয়। এ বারও মহিলা সংরক্ষিত আসন ছিল। লড়তে চেয়েছিলেন মাধুরী। কিন্তু, সেটা না পারায় মনখারাপ দম্পতির।

মাধুরী বলছেন, ‘‘হারলেও মনে হতো জেতা-হারা জীবনের অঙ্গ। জিততে পারলে মানুষের হয়ে কাজ করব। কিন্তু, এ বার দাঁড়াতে চেয়েছিলাম নিজের জন্যই। দু’টি কারণে হল না। এক, স্বামী কয়েক মাস ধরে অসুস্থ। চিকিৎসা করানোর পয়সাটুকু নেই। দুই, স্বাস্থ্যবিমার কার্ড পাইনি। ডিজিটাল রেশন কার্ড পাওয়ার পর দেখি দিনমজুরি করা আমাদের পরিবারটা এপিএল হয়ে গিয়েছে। তাই চেয়েছিলাম দাঁড়াতে।’’ অজয় বলছেন, ‘‘অসুস্থ শরীরেও স্ত্রী-র প্রস্তাবক হিসেবে ব্লকে যেতে চেয়েছিলাম। সাহসে কুলোয়নি।’’

আরও পড়ুন: মনোনয়ন তুললাম, এ বার শান্তি দাও, কেঁদে ফেললেন প্রৌঢ়া

প্রতিবেশী ও ওই সংসদের বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, প্রায় সাড়ে তেরোশো ভোটার রয়েছে ওই সংসদে। প্রথম দু’বার দাঁড়িয়ে তেমন ভোট না পেলেও, গতবার কিছুটা বেশি ভোট পেয়েছিলেন মাধুরী। গত বার ছ’জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন। এ বার শাসকদলের হয়ে একমাত্র প্রার্থী সান্ত্বনা হাজরা। বিজেপি, সিপিএমের অভিযোগ, চেষ্টা করেও শাসকদলের ‘উন্নয়নের ঢালে’ আটকে মনোনয়ন দিতে না পারেননি তাঁরা। নির্দল হয়েও মাধুরী যদি দাঁড়াতেন, তা হলেও হয়তো শিকে ছিঁড়ত পারত। সংগঠন, অর্থবল না থাকলেও বিরোধীদের নির্বাচনে লড়তে না পারার আক্ষেপ থেকেই হয়তো সুবিধা পেতেন ওই প্রৌঢ়া।

বিজেপির এক নেতার কথায়, ‘‘হতে পারত অনেক কিছুই। কিন্তু, সশস্ত্র ‘উন্নয়ন’ এখানেও বাধা হয়ে দাঁড়াল।’’ তথ্য বলছে, শুধু পঞ্চায়েতের ওই আসন কেন, বিরোধীরা গোটা ব্লকের ১০ পঞ্চায়েতের কোনও আসনেই মনোনয়ন দিতে পারেনি। ওই নেতার দাবি, ‘‘যে ক’টি বিরোধী মনোনয়ন হয়েছে বলা হচ্ছে, তা সবই শাসকদলের কারসাজি।’’ তৃণমূলের দাবি, ‘‘বাজে কথা। কোথাও, কাউকে মনোনয়ন জমা দিতে বাধা দেওয়া হয়নি। বিরোধীদের অস্তিত্ব নেই বলেই এ সব অজুহাত উঠছে।’’

এত দিন সিপিআইএলের হয়ে প্রার্থী হতেন দম্পতি। সংগঠনের জেলা সম্পাদক শৈলেন মিশ্র বলেন, ‘‘গণতন্দ্র বিপন্ন। সাধারণের অধিকার কেমন করে লঙ্ঘিত হয়েছে, তা অজয় বা মাধুরীর মতো প্রান্তিক মানুষদের নির্বাচনে লড়তে না পারা থেকেই বোঝা যায়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন