হাত-খালি: ভোট নেই। তাই কাজও কম বিষ্ণুপুর শহরের বৈলাপাড়ার একটি ছাপাখানায়। ছবি: শুভ্র মিত্র
কেউ ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে ফ্লেক্স ছাপানোর নতুন যন্ত্র কিনেছিলেন। কেউ বিয়েবাড়ির বরাত ছেড়েছিলেন সভার ছবি তোলার ডাকের আশায়। এখন সবার মাথায় হাত। বিষ্ণুপুর মহকুমার ছ’টি ব্লকের কোথাও ভোটই হচ্ছে না।
ছ’টি ব্লকের ৫৬টি পঞ্চায়েত। আসন ৭৫৩টি। পঞ্চায়েত সমিতির আসন ১৫৭টি। মহকুমায় জেলা পরিষদের আসন রয়েছে ১৩টি। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সর্বত্র জিতে গিয়েছে শাসকদল। দীর্ঘ দিন ধরে ব্যবসা করে আসছেন শহরের ডেকরেটর পঞ্চানন পাল। তিনি বলেন, ‘‘ছ’টা পঞ্চায়েত ভোট পার করলাম। এমনটা আগে কখনও হয়নি। লক্ষাধিক টাকা ঋণ নিয়েছি পরিবারের গয়না বন্ধক রেখে। নতুন বাঁশ, প্যাণ্ডেলের যাবতীয় উপকরণ কিনে তৈরি ছিলাম। সব মাঠে মারা গেল।’’ বিষ্ণুপুরে ছাপাখানা রয়েছে সঞ্জীব চৌধুরীর। নতুন কেনা যন্ত্রে ধুলো জমছে তাঁর দোকানে। বললেন, ‘‘লোকসভা বা বিধানসভার তুলনায় পঞ্চায়েত ভোটে আমাদের কাজের চাপ বেশি থাকে। এ বার তো আমাদের এলাকায় ভোটই হল না। দক্ষিণ বাঁকুড়া থেকে কিছু বরাত পেয়েছি। কিন্তু সেটা সামান্য।’’ সঞ্জীব জানান, ফরমাস মতো প্রচারের জিনিস পৌঁছে দিতে অস্থায়ী কর্মী নিয়োগ করেছিলেন। তাঁরাও বসে রয়েছেন এখন।
প্রচার মানে তো শুধু নরম-গরম কথা নয়, তার বিস্তর আয়োজন দরকার হয়। প্যান্ডেল বাঁধা, বসার জায়গা তৈরি, কর্মীদের যাতায়াতের জন্য গাড়ি— আরও কত কী! বিষ্ণুপুরের একটি ছাপাখানার কর্ণধার কালিদাস দে বলেন, ‘‘আমার অনেক টাকার কাঁচামাল পড়ে রইল। কিন্তু খারাপটা লাগছে অন্য জায়গায়। ভোটের সময়টায় ছাপাখানাগুলিতে মাস তিন-চার অনেক শ্রমিক কাজ পেতেন। সেই খেটেখাওয়া মানুষগুলির বিস্তর ক্ষতি হল।’’
বিষ্ণুপুরের কয়েক জন দেওয়ালচিত্র শিল্পী বলেন, ‘‘আমরা রঙের ডিবে নিয়ে পাশাপাশি দেওয়ালে বিভিন্ন দলের প্রচারের ছবি আঁকতাম। কত রঙ্গ, ছড়া, ব্যঙ্গচিত্র। আমাদের তো দল নেই, তুলি আছে। এ বার বড্ড খালি খালি লাগছে।’’