কুষ্ঠরোগ নির্মূল করতে ফের ঝাঁপাচ্ছে জেলা

কুষ্ঠ জীবাণু-বাহিত রোগ। এই নিয়ে প্রচার, সমীক্ষা চলে। তার পরেও সচেতনতার অভাব এবং রোগ নিয়ে অহেতুক কুণ্ঠার জন্য আক্রান্তদের অনেকেই চিহ্নিত হন না।

Advertisement

দয়াল সেনগুপ্ত

সিউড়ি শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:২৬
Share:

কুষ্ঠ জীবাণু-বাহিত রোগ। এই নিয়ে প্রচার, সমীক্ষা চলে। তার পরেও সচেতনতার অভাব এবং রোগ নিয়ে অহেতুক কুণ্ঠার জন্য আক্রান্তদের অনেকেই চিহ্নিত হন না। অনেক সময় বঞ্চিত থেকে যান চিকিৎসা থেকেও।

Advertisement

সেই খামতি পূরণ করতে জাতীয় কুষ্ঠ দূরীকরণ কর্মসূচির অঙ্গ হিসাবে গত এপ্রিল থেকে ‘আশা বেসড সারভেইল্যান্স ফর লেপ্রসি সাসপেক্ট’ শুরু হয়েছে। কারও শরীরে আসাড় কোনও দাগ আছে কি না, প্রতি মাসে নির্দিষ্ট জনসংখ্যা ধরে বাড়ি বাড়ি সমীক্ষা চালাচ্ছেন আশাকর্মীরা। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের উপলব্ধি, তার পর থেকেই জেলায় কুষ্ঠ রোগী চিহ্নিত হাওয়ার হার বাড়ছে।

বীরভূম জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক হিমাদ্রি আড়ি বলছেন, ‘‘আগের থেকে এই রোগ নিয়ে সচেতনতা এসেছে। আরও বেশি করে নতুন রোগী চিহ্নিত হচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে আশাকর্মীদের অবশ্যই ভূমিকা রয়েছে।’’

Advertisement

চিকিৎসকেরা মনে করাচ্ছেন, কুষ্ঠ ক্রনিক সংক্রামক রোগ। ‘মাইক্রো ব্যাক্টেরিয়াম লেপ্রি’ নামক জীবাণুর দ্বারা এই রোগের সংক্রমণ ঘটে। আক্রান্ত রোগীর হাঁচি বা সর্দি-কাশি বা অন্য শ্বাসনালী-ক্ষরিত পদার্থের মাধ্যমে সংক্রমণ ছড়ায়। সংক্রমণ ঘটলে প্রথমে চামড়ায় প্রভাব দেখা যায়। রোগীর শরীরে তামাটে, ফ্যাকাশে অসাড় দাগ দেখা যায়। কিন্তু, চামড়ায় দাগ হলেও এই রোগে আসল ক্ষতি হয় স্নায়ুতে। তখন অঙ্গহানি বা শরীরে বিকৃতি হতে পারে। জীবাণু শরীরে প্রবেশ ও তার প্রকাশের মধ্যে কমপক্ষে চার, পাঁচ বছর সময় লাগে। কোনও ক্ষেত্রে সেই সময়কাল ১০-১৫ এমনকি ২০ বছর পর্যন্ত হতে পারে। প্রথম প্রথম শুধু দাগ ছাড়া কোনও অসুবিধা না থাকায় বা সচেতনতার অভাবে রোগী-চিহ্নিত করে তাঁকে চিকিৎসার আওতায় নিয়ে আসা যথেষ্ট সমস্যার। কেউ কেউ আবার জেনেও লোকলজ্জার ভয়ে এড়িয়ে যান চিকিৎসা।

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, কুষ্ঠ দূরীকরণ কর্মসূচির আওতায় ২০০২ সালে যখন এমডিটি (মাল্টি ড্রাগ থেরাপি) শুরু হওয়ার পর থেকে কুষ্ঠরোগের প্রাদুর্ভাব বা ব্যাপকতা কমতে থাকে। সেই সময় প্রতি দশ হাজারে কুষ্ঠরোগীর সংখ্যা যেখানে ৫৭.৬০ জন ছিল, সেটাই ২০১৬ সালের মার্চ পর্যন্ত নেমে এসেছে একের থেকেও কম, ০.৬৬ জনে। চিন্তার বিষয় হল, নতুন করে যে সব রোগী চিহ্নিত হচ্ছেন শতাংশের হিসেবে তাঁদের মধ্যে অঙ্গহানির সংখ্যা বেশি।

জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, মহাত্মা গাঁধীর তিরোধান দিবস ৩০ জানুয়ারিকে প্রতি বছর কুষ্ঠরোগ বিরোধী দিবস হিসাবে পালন করা হয়। গত দু’বছর ধরে মাইক্রো-লেভেলে সচেতনতা বাড়াতে ‘স্পর্শ কুষ্ঠ প্রচার অভিযান’ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। এ বারও ৩০ তারিখ ওই কর্মসূচি পালিত হবে। এ ছাড়া বছরে এক দু’বার ‘অ্যাক্টিভ লেপ্রসি সার্চ’ কর্মসূচি নেওয়া হয়। এমন ব্যয়বহুল কর্মসূচি পালিত হলেও একটা নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে হওয়ার জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে কুষ্ঠরোগী চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে খামতি থেকে যাচ্ছিল। তখনই ‘আশা বেসড সারভেইল্যান্স ফর লেপ্রসি সাসপেক্ট’ কর্মসূচি শুরু হয়।

জেডএলও বা জোনাল লেপ্রোসি অফিসার ইন্দ্রনীল আচার্য চৌধুরী বলছেন, ‘‘আমরা প্রতি মুহূর্তে নজরদারি করছি। কিন্তু, আশারা নিয়মিত সমীক্ষা চালানোয় কুষ্ঠ রোগ বা রোগী সম্বন্ধে কুসংস্কার দূর করতে এবং প্রাথমিক স্তরেই রোগীদের চিহ্নিত করতে এই কর্মসূচি কাজ দিচ্ছে।’’ জেডএলও আরও জানাচ্ছেন, রোগ যাতে না ছড়ায়, তার জন্য নতুন করে চিহ্নিত হয়েছেন এমন আক্রান্তদের সংস্পর্শে থাকা ২০ জনকে বয়স অনুযায়ী প্রতিষেধক পেপ খুব শীঘ্রই খাওয়ানো হবে।’’

জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, একবার কুষ্ঠ রোগী চিহ্নিত হলে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে রোগী ওষুধ খাচ্ছেন কি না বা যত্ন নিচ্ছেন কি না মাইক্রো লেভেলে সেই নজরদারি আশাকর্মীরাই করে থাকেন। তাঁরা যেহেতু প্রায় এক হাজার জনসংখ্যা উপরে কাজ করেন, তাই তাঁদের জনসংযোগ ভাল। ঠিক হয়, শুধু আক্রন্তের দেখভাল নয়, প্রতি মাসে এক জন আশাকর্মী তাঁর এলাকায় পুরুষ, মহিলা ও শিশুসহ ১০০ জনকে নির্দিষ্ট করবেন। এবং দেখবেন তাঁদের শরীরে কোনও সন্দেহজনক দাগ রয়েছে কি না। দাগ নিয়ে সন্দেহ থাকলে প্রথমে উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের দায়িত্ব থাকা এএনএম-এর কাছে নিয়ে আসবেন। সেখানে থেকে বাছাইদের পাঠানো হবে ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসকদের কাছে। রোগ চিহ্নিত হলে ওষুধ খাওয়ানো শুরু। বীরভূমে এপ্রিল থেকে ২০০ বেশি নতুন রোগী চিহ্নিত হয়েছেন। তাঁরা কী ভাবে যত্ন নেবেন সেটার জন্য পরামর্শ ও কিট দেওয়া হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন