বিষ্ণুপুরে মিছিল। নিজস্ব চিত্র
পর পর দু’দিনে খুন হয়ে গিয়েছেন এক দলীয় কর্মী, পায়ে কুড়ুলের কোপ পড়েছে অন্য এক কর্মীর। অথচ পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। তাই পুলিশের বিরুদ্ধে তদন্তে গড়িমসির অভিযোগ তুলে সরব হলেন পুরুলিয়ার বিজেপি নেতৃত্ব।
বলরামপুরের সুপুরডি গ্রামের কলেজ পড়ুয়া ত্রিলোচন মাহাতোকে খুন করে ঝুলিয়ে দেওয়ার অভিযোগের এ বার সিবিআই তদন্ত চাইল বিজেপি। এই দাবি নিয়ে শুক্রবার দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষকে চিঠি পাঠালেন জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী। তাঁর অভিযোগ, পুলিশ জানাচ্ছে তদন্ত চলছে। অথচ ঘটনার দু’দিন পরে শুক্রবার পর্যন্ত পুলিশ এক জনকেও গ্রেফতার করতে পারেনি। তাঁর অভিযোগ, খুনের পিছনে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের হাত থাকায় রাজ্য পুলিশের তদন্তে আস্থা নেই। একমাত্র সিবিআই তদন্ত হলেই প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটিত হবে বলে তিনি আর্জি জানিয়েছেন।
এ দিকে, বুধবার রাতেই বরাবাজারের শিরোমণিপুর গ্রামের বিজেপি কর্মী গৌরাঙ্গ ওরাংকেও তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা পায়ে কুড়ুলের কোপ মারে বলে বিজেপি অভিযোগ তুলেছিল। সেই ঘটনাতেও কেউ গ্রেফতার হয়নি। এই সমস্ত ঘটনাকে সামনে রেখেই শুক্রবার বিজেপির এক প্রতিনিধি দল জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের সঙ্গে দেখা করেন। বিদ্যাসাগরবাবু বলেন, ‘‘আমরা অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছি।’’ তৃণমূল নেতৃত্বকে তিনি সিবিআই তদন্ত করানোর জন্য চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন।
তবে বুধবার ত্রিলোচনের দেহ উদ্ধারের পরেই বলরামপুরের তৃণমূল নেতা সৃষ্টিধর মাহাতো ওই ঘটনায় তাঁদের দল কোনও ভাবে যুক্ত নয় বলে দাবি করে সিআইডি তদন্তের আর্জি জানিয়েছিলেন। এ দিন তৃণমূলের বলরামপুর ব্লক সভাপতি সুদীপ মাহাতো দাবি করেন, ‘‘কত রক্তের বিনিময়ে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলরামপুরে। সেই দিন ফিরে আসুক আমরা চাই না। আমরাও চাই উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত হোক। প্রয়োজনে আমরাও সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।’’
জেলা পুলিশের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, ত্রিলোচনের সঙ্গে ভোটের দিন এলাকার যে ছ’জনের ঝগড়া হয়েছিল বলে তাঁর বাবা থানায় অভিযোগ করেছিলেন, তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। এখনও পর্যন্ত বিশেষ কোনও সূত্রে পুলিশ পায়নি বলে জানানো হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে বলরামপুর বাজারে গিয়ে ত্রিলোচন কোথায় কোথায় গিয়েছিলেন, তা জানার চেষ্টা করছে পুলিশ। সে দিন বিকেলে তাঁর সঙ্গে কেউ ছিলেন কি না বা কেউ তাঁকে ফোন করে বলরামপুরে ডেকেছিলেন কি না সেই বিষয়গুলিও খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।
তবে এখনও পর্যন্ত পুলিশের কাছে খবর এসেছে, সে দিন বলরামপুরে কোনও একটি খাবারের দোকানে কিছু খেয়ে তাঁকে হাটের দিকে যেতে দেখেছিলেন কেউ কেউ। উল্লেখ্য, মঙ্গলবার বলরামপুরে সাপ্তাহিক হাট বসে। এই দিনটিতে বলরামপুরে প্রচুর বাইরের লোকের ভিড় হয়। সেই সুযোগটাই কি আততায়ীরা কাজে লাগিয়েছে? এই বিষয়টিও মাথায় রয়েছে তদন্তকারীদের।
কারণ, অন্য দিন হলে সচরাচর পরিচিত লোকজনদেরই রাস্তাঘাটে আনাগোনা থাকে। কিন্তু, মঙ্গলবার সাপ্তাহিক হাটের দিনে বাইরের প্রচুর লোক ভিড় করেন। সেই অচেনা মানুষের ভিড়ের মধ্যে থেকে কেউ ত্রিলোচনকে আলাদা জায়গায় টেনে নিয়ে গেলে তা অনেকের নজর এড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে, তদন্তে পুলিশের কাছে একটা বিষয় পরিষ্কার, পূর্ব পরিকল্পিত ভাবেই এই খুন করা হয়েছে। খুনের উদ্দেশ্যেই তাঁকে মোটরবাইকে করে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু এই অপহরণের ঘটনা বলরামপুর-সুপুরডি রাস্তায় ঘটেছিল, না কি অন্য কোথাও ঘটেছিল, তা জানার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা। আবার মঙ্গলবার রাত পৌনে ন’টা নাগাদ ত্রিলোচন ফোন করে তাঁর দাদাকে অপহরণের কথা জানান। আততায়ীরা তাঁকে ধরার পরেও ফোন করার সুযোগ কী করে ত্রিলোচন পেলেন, কিংবা আততায়ীরাই তাঁকে সেই সুযোগ কেন দিলেন, তা নিয়েও ধোঁয়াশা রয়েছে। জেলা পলিশ সুপার জয় বিশ্বাসের সংক্ষিপ্ত মন্তব্য, ‘‘ঘটনার তদন্ত চলছে।’’
শাসকদলের বিরুদ্ধে এ দিন দুই জেলাতেই ভোট ও তার পরবর্তী সময়ে পুলিশের মদতে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে বিজেপির নেতা-কর্মীরা পথে নেমেছিলেন। বিভিন্ন থানায় বিক্ষোভ দেখানো হয়। অনেক জায়গায় মুখে কালো কাপড় বেঁধে মৌনী মিছিল হয়। ওন্দা থানার বিক্ষোভ কর্মসূচিতে ছিলেন দলের সহ-সভানেত্রী রাজকুমারী কেশরী।