বাধা পেরিয়ে করে মাধ্যমিকে

পড়াশোনাই আলো দেয় সমাপ্তিকে

স্রেফ মনের জোর আর অদম্য ইচ্ছে। এই দুই থাকলে হার মানে শারীরিক প্রতিবন্ধকতাও। দৃষ্টিশক্তি ছাড়াই মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসে সে কথা প্রমাণ করেছে বড়াসিনি নন্দলাল উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী সমাপ্তি দেওঘরিয়া।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০১৭ ০১:৪৪
Share:

ভরসা: রাইটারের হাত ধরে পরীক্ষাকেন্দ্রে। নিজস্ব চিত্র

স্রেফ মনের জোর আর অদম্য ইচ্ছে। এই দুই থাকলে হার মানে শারীরিক প্রতিবন্ধকতাও। দৃষ্টিশক্তি ছাড়াই মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসে সে কথা প্রমাণ করেছে বড়াসিনি নন্দলাল উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী সমাপ্তি দেওঘরিয়া।

Advertisement

পুরুলিয়া ২ ব্লকের লিপানিয়া গ্রামের বাসিন্দা সমাপ্তি ছোটবেলা থেকেই দৃষ্টিহীন। বাবা সুনীল দেওঘরিয়া একটি বেসরকারি সংস্থায় নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করেন। পরিবারে অভাব আছে। মেয়ে দৃষ্টিহীন হওয়ায় তাকে সুনীলবাবু ভর্তি করেছিলেন বিবেকানন্দ নগরের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষায়তনে। সুনীলবাবু জানান, ওই স্কুলে ক্লাস সিক্স পর্যন্ত ব্রেইল পদ্ধতি মেনে পড়াশোনা করেছিল সমাপ্তি। তার পর সাংসারিক সমস্যার কারণে সেখানে আর মেয়েকে পড়ানো হয়ে ওঠেনি। বাড়ির কাছের স্কুলে ভর্তি করেন মেয়েকে।

ব্রেইলে অক্ষর পরিচয় হওয়ার পর থেকেই কোনও বিষয় শুনে তা মোটামুটি আত্মস্থ করে নিতে পারার সহজাত ক্ষমতা রয়েছে সমাপ্তির। সুনীলবাবুর কথায়, ‘‘এখন স্কুলে কী পড়ায়, তা মেয়ে বাড়িতে এসে আমাদের বলে। আমরা বই থেকে পড়ে বলে দিলে ও নিজেই ব্রেইলে করে নেয়। নিজেই পড়া মুখস্ত করে। বেশ কিছুদিন আগেই ও বলেছিল, বাবা আমি মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে চাই। মেয়ের ইচ্ছা ফেলতে পারিনি। ওকে মাধ্যমিক দিতে উৎসাহ দিয়েছি।’’

Advertisement

সমাপ্তির পরীক্ষাকেন্দ্র কুস্তাউর উচ্চ বিদ্যালয়ে। পরীক্ষার দিনগুলিতে লিপানিয়া গ্রামের বাড়ি থেকে বাবাই মেয়েকে কোনও দিন বাসে, কোনও দিন সাইকেলে পরীক্ষাকেন্দ্রে নিয়ে যান। সমাপ্তির স্কুলেরই দশম শ্রেণির ছাত্রী পম্পা মাহাতো তার ‘রাইটার’ বা লেখক হয়ে পরীক্ষা দিচ্ছে। কুস্তাউর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলাই মণ্ডল বলেন, ‘‘দৃষ্টিহীন পরীক্ষার্থীদের জন্য লেখক নিয়ে পরীক্ষা দেওয়ার বিধি রয়েছে। এই পরীক্ষার্থীও ওর থেকে নিচু ক্লাসের এক ছাত্রীকে লেখক হিসেবে নিয়ে পরীক্ষা দিচ্ছে। ওই ছাত্রী প্রশ্নপত্র দেখে প্রশ্ন পড়ে সমাপ্তিকে জানাচ্ছে। সমাপ্তি উত্তর বললে সে তা উত্তরপত্রে লিখছে।’’ তিনি জানান, সমাপ্তিকে আলাদা একটি ঘরে বসানো হয়েছে। বিধি মেনে সে অতিরিক্ত ৪৫ মিনিট সময় পাচ্ছে। পুরুলিয়া জেলা মাধ্যমিক পরীক্ষা পরিচালন সমিতির আহ্বায়ক কামাক্ষ্যা প্রসাদ ত্রিপাঠী জানান, ওই দৃষ্টিহীন পরীক্ষার্থীর জন্য যা সহায়তা করা প্রয়োজন, তাই করা হচ্ছে। হাল ছাড়তে নারাজ সমাপ্তিও। তার কথায়, ‘‘আমি লেখাপড়া শিখে জ্ঞানের আলোয় সব দেখতে চাই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন