Visva-Bharati University

প্রথম দিনেই সাঁতারে দাপাল দৃষ্টিহীন ছাত্রেরা

আর পাঁচটা পড়ুয়ারা মতো দৃষ্টিহীনেরাও যাতে সুইমিং পুল গিয়ে সাঁতারের অভ্যাস করতে পারেন, সেই ব্যবস্থা এবার বিশ্বভারতীতে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শান্তিনিকেতন শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০১৮ ০৭:১০
Share:

প্রতীকী ছবি।

এ বছরের রবীন্দ্র জন্মোৎসবে বিশ্বভারতীর পূর্বপল্লি ছাত্রাবাসের দৃষ্টিহীন আবাসিকদের সঙ্গে বেশ কিছুটা সময় কাটিয়েছিলেন ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য সবুজকলি সেন। কথা দিয়েছিলেন, আর পাঁচটা পড়ুয়ারা মতো দৃষ্টিহীনেরাও যাতে সুইমিং পুল গিয়ে সাঁতারের অভ্যাস করতে পারেন, সেই ব্যবস্থা করবেন। হল তেমনটাই। বৃহস্পতিবার মৃত্যুঞ্জয়, সুব্রত, গৌরাঙ্গরা সাঁতারে ভর্তি হলেন। সাঁতারের অভ্যাসও করলেন বেশ কিছু সময়। এ দিন ওই সুইমিং পুলেই স্কুলগুলির জেলাস্তরের নির্বাচনী প্রতিযোগিতা হয়।

Advertisement

পূর্বপল্লি ছাত্রাবাসের মৃত্যুঞ্জয়, কার্তিক, শিবনাথ, বিজয়দের কেউ জন্মান্ধ, কেউ বড় বয়সে দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন। এ বছর ৯ মে, ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য সবুজকলি সেন ছাত্রাবাসে গিয়ে সেখানকার ১২ জন আবাসিক দৃষ্টিহীন ছাত্রদের খেলার ব্যাট, বিশেষ শব্দ উচ্চারিত বল, উইকেট উপহার হিসেবে তুলে দেন। ছাত্রাবাসের দৃষ্টিহীন ছাত্রদের অনেকেই সাঁতারে জাতীয় স্তরের বিজয়ী। তাই তাঁদের আবদার ছিল, যাতে বিশ্বভারতীর সুইমিং পুল ব্যবহার করতে পারেন। এ বার সেই ব্যবস্থা করলেন সবুজকলি। বিশ্বভারতী সুইমিং পুল ম্যানেজিং কমিটিকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, গরমের পরেই যেন ওই ছাত্রেরা সুইমিং পুলে সাঁতার অভ্যাস করার জন্য ভর্তি হতে পারে। সেই মতো ব্যবস্থা করে কমিটি।

সাঁতার অভ্যাসের জন্য বিশ্বভারতীর পড়ুয়াদের প্রতি মাসে ২৭০ টাকা দিতে হয়। কিন্তু, এই ছাত্রদের জন্য কোনও মাসিক ফি রাখা হয়নি। এ ছাড়াও দৃষ্টিহীন ছাত্রেরা যাতে ঠিক করে বিভাগে পৌঁছতে পারে, সে জন্য বিশ্বভারতীর নিজস্ব টোটো আছে। এ বার সুইমিং পুল যাওয়ার জন্যেও আলাদা একটি টোটোর ব্যবস্থা করে দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। স্নাতকোত্তর প্রথম বর্ষের ছাত্র মৃত্যুঞ্জয় পুরকাইত জন্মান্ধ হয়েও সাঁতারে জাতীয় স্তরে লড়েছেন। তিনি বললেন, ‘‘আবার সুইমিং পুল গিয়ে সাঁতার অভ্যাস করতে পারব। খুব আনন্দ হচ্ছে।’’ সুইমিং পুল ম্যানেজিং কমিটি সূত্রে জানানো হয়েছে, প্রতিটা বিভাগ থেকে পড়ুয়াদের সাঁতার অভ্যাসের সুযোগ করে দেওয়া হবে। আর সবুজকলি সেন বলছেন, ‘‘সে দিন ওদের আবদার শুনে বুঝেছিলাম সাঁতারটা ওরা মন থেকে ভালবাসে। তাই সকলের চেষ্টায় এই ব্যবস্থা করা সম্ভব হল।’’

Advertisement

এ ছাড়াও এ দিন বিশ্বভারতী সুইমিং পুলে ‘ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিল ফর স্কুল গেমস অ্যান্ড স্পোর্টস’এর উদ্যোগে জেলাস্তরের নির্বাচনী প্রক্রিয়া হয়। প্রতিযোগিতায় লাভপুর, বোলপুর, সিউড়ির বিভিন্ন স্কুলের ৩৩ জন প্রতিযোগী যোগ দেন। ৫০ মিটার বাটারফ্লাই, ২০ মিটার ফ্রি স্টাইল, ৫০ মিটার ব্যাকস্ট্রোক সহ আরও কয়েক’টি ইভেন্টে প্রতিযোগিতা হয়। উপস্থিত ছিলেন বিশ্বভারতীর স্পোর্টস বোর্ডের সহকারী নির্দেশক অভিজিৎ থান্দার, জেলা কাউন্সিলের সদস্য চন্দন সাহা। কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক প্রলয় নায়েক মনে করেন, ‘‘গ্রামবাংলার ছেলেমেয়েদের মধ্যে সাঁতারের জনপ্রিয়তা বাড়ছে, এটা ইতিবাচক।’’

সুইমিং পুলের তত্ত্বাবধায়ক অশোককুমার গুণ এবং জনসংযোগ আধিকারিক ভ্রমর ভাণ্ডারী জানালেন, খুব শীঘ্রই ‘লাইফ সেভিং সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া’ এবং বিশ্বভারতীর মধ্যে একটি মউ স্বাক্ষরিত হবে। যার ফলে বিশ্বভারতী ‘লাইফ সেভিং ট্রেনিং কোর্স’ চালু করতে পারবে। যে কোনও প্রতিষ্ঠানের পড়ুয়ারা এই কোর্স করতে পারবেন। তবে শারীরশিক্ষা বিভাগের পড়ুয়াদের জন্য ভবিষ্যতে চাকরির ক্ষেত্রে বিশেষ সুযোগ থাকবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন