বার্ধক্য ভাতার অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ধৃত সাঁইথিয়ার ব্লক আধিকারিক সন্দীপন প্রামাণিককে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পেরেছে, তিনি শুধু নিজের ও স্ত্রী-র অ্যাকাউন্টেই নয় অফিসের আরও ৮ ব্যক্তির অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে তছরুপের জাল ছড়িয়েছিলেন। সরকারি প্রকল্পের টাকা জমা পড়ত সেই সব অ্যাকাউন্টে। পরে যা এসে জমা হত তাঁর নিজের ও স্ত্রী অ্যাকাউন্টে। চলতি বছরের ১৩ মার্চ থেকে ১৯ জুন পর্যন্ত তাঁদের অ্যাকাউন্টে ১.২৫ লক্ষ টাকা মতো জমা পড়েছে।
পুলিশ ও প্রশাসন সূত্রে খবর, ‘ইন্দিরা গাঁধী ন্যাশানাল ওল্ড এজ পেনসন স্কিম’ বা সংক্ষেপে আইজিএনওপিএস, আইজিএনডি (ডিসেবেল্ড) পিএস বা, আইজিএনডব্লু (উইডো) পিএস-এর মতো সরকারি প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ করে সন্দীপনবাবু রীতিমতো জাল ফেঁদেছিলেন। সাঁইথিয়া ব্লক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ব্লকের অধীন দু’একটি পঞ্চায়েত থেকে ওই প্রকল্পের প্রাপকদের নামের তালিকা নিয়ে বিডিওর কাছে অভিযোগ জমা পড়ে। এরই মধ্যে বার্ধক্য প্রকল্পের প্রাপকদের প্রাপ্য অর্থের হিসেব করতে গিয়ে ব্লকেরই এক কর্মীর সন্দেহ হয়। তিনিও বিষয়টি বিডিওকে জানান।
ঘটনা হল, এর পরই ব্লক প্রশাসন নড়েচড়ে বসে। তদন্ত করতে গিয়ে দেখা যায়, যাঁর দায়িত্বে ওই প্রকল্প সেই সন্দীপন প্রামাণিক ও তাঁর স্ত্রীর নাম রয়েছে বার্ধক্য ভাতার তালিকায়! তাঁদের অ্যাকাউন্টে কখনও ৯,৮০০ টাকা, কখনও বা ১৮,৪০০ টাকা করে একাধিকবার জমা পড়েছে। তদন্তে প্রকাশ, শুধু প্রামাণিক দম্পতি নয়, ব্লকের আট কর্মীর নামেও প্রতিমাসে একই ভাবে বার্ধক্য ভাতা উঠেছে।
তেমন দুই কর্মীর হলেন বিপদতারণ দাস ও গোপাল শর্মা। সংবাদমাধ্যম দেখে এড়িয়ে গেলেও পুলিশকে তাঁরা জানিয়েছেন অনেক তথ্য। পুলিশকে দেওয়া তাঁদের বয়ানে জানা গিয়েছে, সন্দীপনবাবু তাঁদেরকে বলতেন, তিনি সফটওয়্যারে কাজ করেন। সফটওয়্যারে কাজ করার জন্য তাঁর প্রাপ্য টাকা তিনি বিপদতারণবাবুদের অ্যাকাউন্টে জমা করতে চান। সেই টাকা জমাও হত মাঝে মধ্যে। জমা পড়লে, সন্দীপনবাবু নিজেই জানিয়েও দিতেন। নাম না করে এক অস্থায়ী কর্মী বলেন, ‘‘টাকা জমা পড়ত। উনি সঙ্গে সঙ্গে আমাদেরকে জানাতেন যে, তোমার অ্যাকাউন্টে এত টাকা জমা পড়েছে। আমরা তা তুলে দিয়ে দিতাম।’’
গোপালবাবু পুলিশকে এও জানিয়েছেন যে, এই ঘটনার দু’চারদিন আগে তাঁর অ্যাকাউন্টে ২১ হাজার টাকা ঢুকেছিল। এবং তা তিনি সন্দীপনবাবুর অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করে দিয়েছেন।
পুলিশ জানায়, এভাবেই চলছিল সন্দীপনবাবুর তছরুপ চক্র। তাঁর অ্যাকাউন্টে মাত্র তিন মাসে ১.২৫ লক্ষ টাকা জমা পড়েছে। পুলিশি হেফাজতে সন্দীপনবাবু ও ব্লকের কর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ বিপদতারণ ও গোপালদের মতো আরও ছ’জনের অর্থাৎ মোট আট জনের নাম জানতে পেরেছে। যাঁদের অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকিয়ে নিজের অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করিয়ে নিতেন ওই অফিসার।
জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, বিআইও সন্দীপনবাবুর এই দুর্নীতির সঙ্গে আর কোন কোন কর্মী জড়িত আছেন কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ব্লক সুত্রের খবর, বিআইও সন্দীপন প্রামাণিক ২০১১ সালের ১ জুন সাঁইথিয়া ব্লকের বিআইও পদে কাজে যোগ দেন। পুলিশ তদন্ত করে দেখছে যে, তিনি কবে থেকে এই দুর্নীতি করেছেন। বিডিও অতনু ঝুরি ইতিমধ্যেই তাঁর অ্যাকাউন্ট এবং কম্পিউটার সিল করে দিয়েছেন।
পুলিশ জানায়, গত ১৬ তারিখ সিউড়ি আদালত থেকে পাঁচ দিনের পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়েছিল। আগামী মঙ্গলবার তাঁকে ফের আদালতে তোলা হবে। জেলাশাসক পি মোহন গাঁধী বলেন, ‘‘তদন্ত ঠিক পথেই এগোচ্ছে।’’