House

Bhadu Sheikh and Anarul Hossain:: গাড়িচালক, রাজমিস্ত্রি থেকে প্রাসাদের মালিক ভাদু-আনারুল, রাজার নীতিতেই কি রাজা?

বগটুই গ্রামে নিহত বড়শাল গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান ভাদু শেখ এবং ধৃত তৃণমূল নেতা আনারুল হোসেন দু’জনেই প্রাসাদোপম বাড়ির মালিক।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রামপুরহাট শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০২২ ২০:০৫
Share:

বাঁ দিকে ভাদু শেখের বাড়ি, ডান দিকে আনারুল হোসেনের বাড়ি। নিজস্ব চিত্র

কেউ ছিলেন ছোট ব্যবসায়ী, কেউ বা রাজমিস্ত্রি। আগের পেশা যাই হোক, বগটুই-কাণ্ডে নিহত বড়শাল গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান ভাদু শেখ এবং ধৃত তৃণমূল নেতা আনারুল হোসেন দু’জনেই প্রাসাদোপম বাড়ির মালিক। যা নিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, রাজনীতির সিঁড়ি বেয়েই কি এমন উল্কার গতিতে উত্থান দু’জনের?

Advertisement

সোমবার রাতে রামপুরহাটের বগটুই মোড়ে খুন হয়েছিলেন ভাদু। তাঁকে বোমা মেরে খুন করে দুষ্কৃতীরা। এর পর ওই রাতেই বগটুই গ্রামে পুড়ে মৃত্যু হয় কয়েক জনের। যা নিয়ে তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি। স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, এক সময় মুরগির ব্যবসা ছিল ভাদুর। ছোট গাড়িও চালাতেন তিনি। কখনও আবার পুলিশের গাড়িও চালাতেন। যদিও তখন সক্রিয় রাজনীতি থেকে দূরেই থাকতেন ভাদু। পরে অবশ্য নিজেই গাড়ির ব্যবসা শুরু করেন। এর পর পাথর, বালি খাদানের গাড়ি থেকে নেওয়া টোলের দেখভাল করাও শুরু করেন। ২০১৮ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়ে বড়শাল পঞ্চায়েতের উপপ্রধান হন ভাদু। ওই সময় থেকেই উল্কার গতিতে উত্থান ঘটে তাঁর।

বগটুই গ্রামের বাসিন্দা ভাদু। সেখানে তাঁর একটি একতলা বাড়ি রয়েছে। তার কিছুটা অংশে এখনও প্লাস্টার হয়নি। কিছুটা অংশে রংও নেই। কিন্তু সেই ভাদুরই একটি প্রাসাদোপম বাড়ি রয়েছে বগটুই মোড়ের কাছে। রাস্তার ধারে বেশ কিছুটা জায়গার উপর ভাদু তৈরি করেছিলেন মার্বেল বসানো ঝাঁ চকচকে তিন তলা ওই বাড়ি। যেন রাজপ্রাসাদ। এসি, ঘর সাজানোর আধুনিক সরঞ্জাম সব কিছুই আছে ওই বাড়িতে।

Advertisement

ভাদুর মতো বগটুই-কাণ্ডে নাম জড়িয়ে যাওয়া তৃণমূল নেতা আনারুল হোসেনও এমন এক প্রাসাদের মালিক। বৃহস্পতিবার পুলিশ গ্রেফতার করেছে আনারুলকে। স্থানীয়েরা জানাচ্ছেন, এক সময় রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন আনারুল। কংগ্রেস ছেড়ে তিনি যোগ দিয়েছিলেন তৃণমূলে। ধীরে ধীরে তিনি ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল এবং রামপুরহাটের বিধায়ক আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের। এর পর দল আনারুলকে রামপুরহাট এক নম্বর ব্লকের সভাপতি হিসাবেও নিয়োগ করে। সাংগঠনিক দিক থেকে বগটুই গ্রামও ছিল তাঁর আওতায়। তৃণমূলের একটি অংশের মতে, রামপুরহাটের দণ্ডমুণ্ডের কর্তা ছিলেন আনারুল। যদিও, গ্রেফতার হওয়ার পর আনারুলকে দলীয় পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছে দল। এই আনারুলের ঝাঁ চকচকে একটি দোতলা বাড়ি রয়েছে রামপুরহাট লাগোয়া সন্ধিপুর এলাকায়। বাড়ির সামনে বাঁধানো লন। ভিতরে মোজাইক করা। রয়েছে এসি-সহ অন্যান্য আধুনিক সরঞ্জামও।

ভাদু বা আনারুল নতুন নন। তালিকায় অনেকেই আছেন। যেমন, এর আগে নন্দীগ্রামের বাসিন্দা তথা নিজের নির্বাচনী এজেন্ট শেখ সুফিয়ানের প্রাসাদের মতো বাড়ি দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন স্বয়ং দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পূর্ব মেদিনীপুরের ভগবানপুরের তৃণমূল নেতা নান্টু প্রধানের প্রাসাদের মতো বাড়ি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল একটা সময়ে। ভাদুর মতো খুন হয়েছিলেন নান্টুও।

লালগড়ের ধরমপুরে অনুজ পাণ্ডের বাড়ি। — ফাইল চিত্র।

বুধবার বগটুই গ্রামে গিয়েছিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। ভাদুর বাড়ি দেখে তাঁর মন্তব্য, ‘‘এ তো বিশাল মহল! ওই গ্রামে তো ছোট বাড়ি দেখলাম। এরা প্রত্যেক গ্রামে সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছে।’’ যদিও সেই ‘মহল’ প্রতিষ্ঠার অভিযোগ রয়েছে সেলিমের দলের নেতার বিরুদ্ধেও। পশ্চিম মেদিনীপুরের লালগড়ের ধরমপুরের সিপিএম নেতা অনুজ পাণ্ডের বিরুদ্ধেও এমন প্রাসাদের মতো বাড়ি তোলার অভিযোগ উঠেছিল একটা সময়ে। যদিও ২০০৯ সালে অনুজের সেই বাড়ি ভেঙে চুরমার করে দেয় মাওবাদীরা। যে ঘটনার নেতৃত্বে ছিলেন মাওবাদী নেতা বিকাশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন