রক্ষীর মাথা ফাটিয়ে লুঠ দোকানে

শুক্রবার রাতে আনাড়ায় রেলওয়ে মার্কেটে গয়নার দোকানের এই ডাকাতিতে ক্ষুব্ধ রেলশহরের বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পাড়া শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০১৭ ০১:২০
Share:

লোপাট: আনাড়ায় লুঠের পরে। আহত রক্ষী (ইনসেটে)। —নিজস্ব চিত্র।

গয়নার দোকানের পিছনের দেওয়াল ভাঙা দেখেই চমকে গিয়েছিলেন নৈশ প্রহরী। গভীর রাতে বন্ধ দোকানের ভিতরে আলো জ্বলতে দেখে তিনি বুঝে যান, গোলমাল কিছু হচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গেই বাঁশি বাজিয়ে লোকজনকে সতর্ক করতে গিয়েছিলেন। সেই বাঁশি কানে যেতেই ভিতর থেকে কয়েকটা লোক বেড়িয়ে এসে দুম করে তাঁর মাথায় বন্দুকের বাঁটের বাড়ি বসান। মাথা ফেটে যাওয়া নৈশরক্ষীকে দড়ি দিয়ে বেঁধে দোকানের ভিতরে ফেলে রেখে ঘণ্টাখানেক ধরে সিন্দুক ভেঙে গয়না লুঠ করে পালাল দুষ্কৃতীরা। তাঁর সঙ্গে এক এনভিএফ কর্মীকে বেঁধে রাখা হয়েছিল বলে স্থানীয় সূত্রে দাবি করা হলেও পুলিশ তা মানতে চায়নি।

Advertisement

শুক্রবার রাতে আনাড়ায় রেলওয়ে মার্কেটে গয়নার দোকানের এই ডাকাতিতে ক্ষুব্ধ রেলশহরের বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা। নিরাপত্তার অভাবের অভিযোগ তুলে শনিবার ব্যবসায়ীরা দল বেঁধে আনাড়া ফাঁড়িতে গিয়ে বিক্ষোভ দেখান। পাড়া থানার ওসি বিশ্বজিৎ মণ্ডল ফাঁড়িতে গিয়ে ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলার পরে পরিস্থিত স্বাভাবিক হয়। সোনার দোকানের মালিক উত্তমচন্দ্র দে-র দাবি, দুষ্কৃতীরা সিন্দুকে রাখা কয়েক লক্ষ টাকার সমস্ত গয়না লুঠ করেছে। পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। তবে এ দিন রাত পর্যন্ত পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।

আনাড়ায় গত কয়েকমাস ধরেই ছোটখাটো চুরির ঘটনা ঘটছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, কয়েকটি মিষ্টির দোকান-সহ রেল আবাসনে চুরি হয়েছে। তবে ঘণ্টাখানেক ধরে চৌকিদারকে বেঁধে এই ধরনের লুঠপাটেরর ঘটনা সাম্প্রতিক কালে হয়নি।

Advertisement

রেলওয়ে মার্কেটের উত্তমবাবুর দোকানে দুষ্কৃতীরা হানা দেয় আনুমানিক রাত সাড়ে বারোটা নাগাদ। ওই মার্কেটে ২০-২২টি দোকান রয়েছে। ব্যবসায়ীদের ঠিক করে দেওয়া প্রহরী বীরপ্রতাপকে রাতে বাজারে টহল দেন। শনিবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, দোকানের পিছন দিকে সরু গলি রয়েছে। সেই গলি দিয়েই দুষ্কৃতীরা এসেছিল। তারা পিছনের দেওয়াল ভেঙে দোকানের ভিতরে ঢুকেছিল। দোকানের ভিতরে লণ্ডভণ্ড অবস্থা। হাট করে খোলা লোহার সিন্দুক।

নৈশপ্রহরী বীরপ্রতাপ বলেন, ‘‘রোজকার মতোই মার্কেটের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে পাহারা দিচ্ছিলাম। রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ পাহারা দিতে গিয়ে সোনার দোকানের পিছনের দিকে দেখি, দেওয়াল ভাঙা। দোকানের ভিতরে আলো জ্বলছে দেখে সন্দেহ হওয়ায় সবাইকে সতর্ক করতে বাঁশি বাজাই। সঙ্গে সঙ্গে কয়েকজন লোক দোকান থেকে বেরিয়ে এসে মাথায় বন্দুকের বাঁট দিয়ে আঘাত করে। তারপরে হাত বেঁধে দোকানের ভিতরে ফেলে রাখে।’’

তারপরে অবশ্য লুঠপাটে বিরাম হয়নি। বীরপ্রতাপ জানিয়েছেন, দুষ্কৃতীরা সংখ্যায় ১০-১২ জন ছিল। কয়েকজনের মুখ মাফলার দিয়ে ঢাকা থাকলেও, অনেকের মুখে খোলা ছিল। কয়েক জন জুতো পরে থাকলেও অনেকে খালি পায়ে, হাফ প্যান্ট পরে এসেছিল। তারা নিজেদের মধ্যে বাংলাতেই কথা বলছিল। দোকানের একা পাশে রাখা লোহার বড় সিন্দুক দুষ্কৃতীরা খুলে সোনা ও রূপোর গয়নাগুলো সব ব্যাগে ভরে নেয়। তারপরে প্রায় আড়াইটে নাগাদ দোকান থেকে তারা বেরিয়ে যায়। বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ওই প্রহরীর সঙ্গে বাজারে টহল দিচ্ছিলেন এক এনভিএফ কর্মীও। তাঁকেও দুষ্কৃতীরা বেঁধে রেখেছিল। যদিও পুলিশ তা মানতে চায়নি।

প্রায় এক ঘণ্টা ওই অবস্থায় বীরপ্রতাপ দোকানের ভিতরে পড়েছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘মাথা ফেটে রক্ত ঝরছিল। যন্ত্রণাও হচ্ছিল। পরে এক সিভিক ভলান্টিয়ার টহল দিতে দিতে ওই দোকানের পিছনের দিকে আসেন। তিনিই পুলিশ ফাঁড়িতে খবর দেন।’’

খবর পেয়ে দোকানে পুলিশ আসে। ডেকে পাঠানো হয় দোকানের মালিক উত্তমচন্দ্রবাবুকে। তিনি বলেন, ‘‘কাক ভোরে পুলিশের ফোন পেয়েই বুঝেছিলাম খারাপ কিছু ঘটেছে। কিন্তু দোকানের ভিতরে ঢুকে সিন্দুক ভেঙে এই ভাবে সমস্ত সোনা, রূপোর গয়না লুঠ করবে দুষ্কৃতীরা ভাবিনি।” দোকানের লোহার সিন্দুক শক্তপোক্ত বলেই বাড়িতে না রেখে সমস্ত গয়না তিনি দোকানের সিন্দুকেই রেখেছিলেন।

এক দিকে এলাকায় ছোটখাটো চুরির ঘটনা বেড়েছে, তার পরে এই ভাবে ঘণ্টাখানেক ধরে লুঠপাটের ঘটনা হওয়ায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে এলাকায়। এ দিকে, আনাড়া ফাঁড়ির লোকবল আগের থেকে বেড়েছে। আগে এই ফাঁড়িতে এক জন এএসআই পদমর্যাদার অফিসার দায়িত্বে ছিলেন। এখন সাব-ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার অফিসারকে ফাঁড়ির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাঁর অধীনে এএসআই, কনস্টেবল, সিভিক ভলান্টিয়ার্স ও এনভিএফ কর্মী আছেন। ফাঁড়ির লোকবল বাড়ানো হলেও এলাকায় অপরাধমূলক কাজকর্ম কমছে না কেন, এই প্রশ্ন তুলে এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ ও ব্যবসায়ীরা ফাঁড়িতে বিক্ষোভ দেখান।

তাঁদের অভিযোগ, ‘‘গত দেড় মাসে এলাকায় কয়েকটি মিষ্টির দোকানে ও নিউ কলোনি এলাকায় রেলের আবাসনে চুরি হয়েছে। তার পরে ঘণ্টাখানেক ধরে চৌকিদারকে বেঁধে রেখে সোনার দোকানের লুটপাঠের ঘটনা ঘটল।” পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার জন্যই এই ধরনের অপরাধমূলক কাজ এলাকায় শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন