ফলন: বাঁকুড়া জেলার বিভিন্ন গ্রামে মাঠে পড়ে ফসল। অভিজিৎ সিংহ
ফাল্গুন মাস শেষ হতে চলল। কিন্তু এ বার বাঁকুড়া জেলার বহু জমিতেই বাঁধাকপি, ফুলকপি রয়ে গিয়েছে। বাজারে দাম না মেলায় চাষিরা মাঠ থেকে ফসল তুলতে ভরসা পাচ্ছেন না।
বাঁকুড়া ১ ব্লকের ভূতশহর, ভাদুল এবং ওন্দা ব্লকের তপোবন, সানতোড়, সাহাপুর, প্রতাপপুর প্রভৃতি গ্রামে সব্জি চাষ ভালই হয়। ওই সব এলাকায় গেলে দেখা যাচ্ছে, এখন বিঘের পর বিঘে জমিতে এক কেজি, দেড় কেজি, দু’কেজি ওজনের বাঁধাকপিতে মাঠ ভরে রয়েছে। শুকনো মুখে ভরা খেতের দিতে চেয়ে আছেন গ্রামের চাষিরা। অথচ এই সময়ে অন্যবছর বোরো ধানের চাষ শুরু হয়ে যায়। এ বার কেন উল্টোচিত্র?
চাষি থেকে জেলা কৃষি ডেপুটি ডিরেক্টর সবার মুখে এক কথা— ‘‘নোট বাতিলের জেরে বাইরের পাইকারি ব্যবসায়ীরা না আসাতেই এই অবস্থা।’’ চাষিরা এও অভিযোগ করছেন, ‘‘ফসল কেনার সরকারি কোনও পরিকাঠামো নেই। তাই উৎপাদিত সব্জি এ ভাবে জমিতেই পড়ে রয়েছে। তাঁদের আশঙ্কা, এ বার ধনে-প্রাণে মরা ছাড়া কোনও উপায় নেই।
বাঁকুড়া ১ ব্লকের ভূতশহর গ্রামের চাষি গৌতম ঘোষ জানান, প্রতি বছরের মতো এ বছরও তিনি তিন বিঘে জমিতে বাঁধাকপি চাষ করেছেন। এ জন্য বিঘে প্রতি প্রায় ৬০০০ টাকা করে ১৮ হাজার টাকা খরচ করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘গত বছর পাইকারি ব্যবসায়ীরা এসে জমি থেকে প্রতিটি বাঁধাকপির দাম পাঁচ টাকা করে দিয়ে কিনে নিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু এ বছর মরসুমের মোক্ষম সময়ে কেন্দ্র সরকার নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় পাইকারী ব্যবসায়ীরা তেমন আসছেন না। স্থানীয় বাসিন্দাদের নামমাত্র দামে কিছু কপি বিক্রি করছি। কিন্তু তাতেও লোকসান ঠেকানো যাবে বলে মনে হচ্ছে না।’’
ওন্দার সানতোড় গ্রামের সুজিত কুণ্ডু, দিলু ঘোষ বলেন, ‘‘অন্যান্য বছর কলকাতা, দুর্গাপুর, ঝাড়খণ্ড থেকে প্রচুর পাইকারী ব্যবসায়ী এসে কপি নিয়ে যেতেন। কিন্তু এ বছর তাঁদের দেখা নেই। উৎপাদিত ফসল কেনার মতো আমাদের রাজ্য সরকারের যদি কোনও পরিকাঠামো থাকত, তাহলে আমরা বেঁচে যেতাম।’’
জেলার কৃষি দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর আশিস বেরা বলেন, ‘‘যে কোনও মরসুমের শুরুতেই উৎপাদিত ফসলের ভাল দাম পাওয়া যায়। কিন্তু এ বার শীতকালীন সব্জির ফলন ভাল হলেও মোক্ষম সময়েই কেন্দ্র সরকারের নোট বাতিলের জেরে চরম সর্বনাশের মুখে পড়েছেন চাষিরা। কারণ সেই সময় সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বড়বড় পাইকারি ব্যবসায়ীদের হাতে নগদ টাকার অভাবে মাল কেনাবেচা বন্ধ থাকায় খেতেই সব্জি পড়ে রয়েছে।’’