ভাগ্যিস সে দিন আশ্রয় দিয়েছিল

কড়া নাড়ার খটখট শব্দ শুনে গৃহকর্তার মনে হয়েছিল, ভরসন্ধ্যায় কে এল? কিন্তু দরজা খুলেই অচেনা একরত্তি ছেলেটাকে দেখে তিনি তাজ্জব হয়ে গিয়েছিলেন।

Advertisement

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০১৭ ০২:০১
Share:

কড়া নাড়ার খটখট শব্দ শুনে গৃহকর্তার মনে হয়েছিল, ভরসন্ধ্যায় কে এল? কিন্তু দরজা খুলেই অচেনা একরত্তি ছেলেটাকে দেখে তিনি তাজ্জব হয়ে গিয়েছিলেন। তাঁকে আরও অবাক করে দিয়ে ছেলেটি আর্জি জানিয়েছিল— ‘‘আমাকে থাকতে দেবেন?’’ স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। সাতপাঁচ ভেবে তিনি ওই বালককে বাড়ি ফিরে যেতে বলেছিলেন। কিন্তু ছেলেটি ফিরে যায়নি। উঠোনে ধানের গোলার পাশেই গুটিসুটি মেরে শুয়ে পড়েছিল সে। সব শুনে স্বামীর সঙ্গে ছেলেটিকে দেখতে এসে মায়ায় পড়ে যান গিন্নি। তাকে আশ্রয় দিয়েছিলেন বাড়ির ভিতরে। বেড়ে দেন রাতের খাবার।

Advertisement

দশ-এগারো বছরের অনাথ বালক সোমের মুখে মালিকের নির্যাতনের কথা শুনে থানায় নিয়ে যান শালতোড়ার চাঁদরার দম্পতি সুনীল টুডু ও পানমণি টুডু। তার ঠাঁই হয়েছে এখন হোমে। সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে বাঁকুড়া চাইল্ড লাইনের কো-অর্ডিনেটর সজল শীল মন্তব্য করেন— ‘‘সেদিন টুডু দম্পতি দরজা খুলেছিলেন বলেই দাসত্বের জীবন থেকে মুক্তির সন্ধান পেয়েছে সোম! না হলে আরও কতদিন যে ওকে নির্যাতন সহ্য করে যেতে হতো!”

২৪ ফেব্রুয়ারি রাতে ছাতনার হেতাশুড়ার বাসিন্দা জিতেন্দ্রনাথ হেমব্রমের বাড়ি থেকে লুকিয়ে পালিয়ে আসে সোম। বুঝেছিল, এতদিনের চেনা মালিকের থেকে অচেনা লোকও ভাল। কড়া নেড়েছিল চাঁদরা গ্রামের সুনীল টুডুর দরজায়। পানমণিদেবী বলেন, “ছেলেটা বলেছিল, দিনভর হাড়ভাঙানি খাটুনির পরে আধপেটা খাইয়ে রাখা হতো ওকে। নির্যাতনের কথা ওর মুখ থেকে শুনতে শুনতে শিউরে উঠেছিলাম।”

Advertisement

সুনীলবাবু অভিযোগ করেন, “অন্যায় ভাবে ছেলেটিকে নিজের বাড়িতে রেখেছিল ওই ব্যক্তি। খোঁজ করতে করতে আমার বাড়িতে এসে কখনও বলছে স্টেশন থেকে কুড়িয়ে পেয়েছে, কখনও বলছে আশ্রম থেকে এনেছে ওই ছেলেটিকে। সন্দেহ হয় বলেই সোজা থানায় গিয়েছিলাম।”

সুনীলবাবু বলেন, “আমার স্ত্রী এই ক’দিনে ওকে একেবারে নিজের করে নিয়েছিল।” এখন ওই দম্পতি চাইছেন, আর পাঁচজন ছেলের মতো সোমও যেন পড়াশোনা শিখে মানুষ হয়।

সোমের ভবিষ্যতের দিকে নজর রাখছেন চাইল্ড লাইনের কর্মীরা। তবে তাঁদের চিন্তা আঁধারে ঢাকা সোমের অতীত নিয়ে। চাইল্ড লাইনের এক কর্মীর কথায়, ‘‘সোমের বাবা-মা কোথায় রয়েছে, তা আমরা জানি না। ওর আসল পরিচয় খুঁজে বের করাটাই এখন আমাদের চ্যালেঞ্জ।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement