ঝুলিয়ে খুন বধূ, নালিশ বিষ্ণুপুরে

নারী দিবসের আগেই দিন মঙ্গলবার বিষ্ণুপুরের এক বধূকে পণের বলি হতে হল বলে অভিযোগ উঠল। গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলিয়ে বর্ণালী হালদার (৩৫) নামের ওই বধূকে মেরে ফেলা হয় বলে থানায় অভিযোগ করলেন তাঁর বাবা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০১৭ ০০:১৪
Share:

নারী দিবসের আগেই দিন মঙ্গলবার বিষ্ণুপুরের এক বধূকে পণের বলি হতে হল বলে অভিযোগ উঠল। গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলিয়ে বর্ণালী হালদার (৩৫) নামের ওই বধূকে মেরে ফেলা হয় বলে থানায় অভিযোগ করলেন তাঁর বাবা।

Advertisement

নিহতের বাবা বিষ্ণুপুর শহরের চকবাজার ধোবাগলির বাসিন্দা বিপদভঞ্জন পরামাণিকের অভিযোগ, ‘‘জামাই সত্যনারায়ণ হালদার, মেয়ের শ্বশুর শ্যামসুন্দর হালদার ও শাশুড়ি মিনতি হালদার এই খুনের ঘটনায় দায়ী।’’ পরে পুলিশ ওই তিনজনকে গ্রেফতার করে।

স্থানীয় সূত্রে খবর, বিষ্ণুপুরের মটুকগঞ্জের বাসিন্দা ব্যাগ সেলাইয়ের ব্যবসায়ী সত্যনারায়ণের প্রথম পক্ষের স্ত্রী আগেই মারা গিয়েছেন। দ্বিতীয়পক্ষের স্ত্রীর একটি ছেলে হয়। তবে তিনি স্বামীর সঙ্গে থাকেন না। এরপরে বর্ণালীর সঙ্গে তাঁর বছর চারেক আগে বিয়ে হয়। বর্তমানে তাঁদের একটি তিন বছরের ছেলে রয়েছে।

Advertisement

অভিযোগ, বিয়ের পর থেকেই পণের জন্য গঞ্জনা করতেন সত্যনারায়ণ। মাঝে মধ্যেই বাপের বাড়ি থেকে টাকা আনার জন্য স্ত্রীকে তিনি চাপ দিতেন। এ নিয়ে অশান্তি, অত্যাচার হামেশাই হতো। এ দিন দুপুরে বিষ্ণুপুর হাসপাতালে কাঁদতে কাঁদতে বর্ণালীর বাবা বিপদভঞ্জনবাবু বলেন, ‘‘সকালে জামাই ফোন করে বলেছিল, মেয়ে নাকি অশান্তি করছে। ওদের স্বামী-স্ত্রীর ব্যাপার ভেবে আমি প্রথমে গুরুত্ব দিইনি। ভেবেছিলাম, পরে মিটে যাবে। কিছুক্ষণ পরে সত্যনারায়ণের দ্বিতীয় পক্ষের ছেলে ছুটতে ছুটতে এসে খবর দেয়, বাড়িতে তুমুল অশান্তি চলছে। ওই বাড়িতে গিয়ে ভেজানো দরজা খুলে দেখি, সিলিংয়ের পাখায় বাঁধা একটি দড়ি থেকে মেয়ের দেহ ঝুলছে। কিন্তু ওর পা বিছানায় ঠেকে ছিল। জামাই তখন দোকানে ছিল। সঙ্গে সঙ্গে লোকজন ডেকে বিষ্ণুপুর হাসপাতালে নিয়ে যাই। কিন্তু বাঁচানো গেল না। ডাক্তার পরীক্ষা করে জানায়, আগেই মেয়ে মারা গিয়েছে।’’ বিষ্ণুপুর হাসপাতালের সুপার পৃথ্বীশ আখুলি জানান, মৃত্যুর কারণ জানতে দেহটি ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে।

খবর পেয়ে বর্ণালীর বাপের বাড়ির লোকজন ও পড়শিরা হাসপাতালে চলে এসেছিলেন। নাতিকে কোলে নিয়ে শোকাহত বর্ণালীর মা শিবানি পরামানিক বলছিলেন, ‘‘বাজারে ছোট একটা পানের দোকান চালিয়ে অভাবের মধ্যে আমার স্বামী ছেলেমেয়েকে বড় করেছিল। কিন্তু সুখ সইল না। এ কি হয়ে গেল আমার মেয়ের! খুনি জামাইয়ের যেন চরম শাস্তি হয়।’’ পড়শিদের মুখেও একই কথা— মেয়েটা প্রাণবন্ত ছিল। কিন্তু ওর এই পরিণতি হবে ভাবা যায় না। হাসপাতালে এসেছিলেন বিষ্ণুপুরের উপপুরপ্রধান তথা ধোবাগলি এলাকার কাউন্সিলর বুদ্ধদেব মুখোপাধ্যায়। তিনিও তদন্ত করে দোষীদের চরম শাস্তির দাবি তুলেছেন। যদিও নিহতের শ্বশুর শ্যামসুন্দর দাবি করেছেন, ‘‘আমাদের উপর ওঠা অভিযোগ মিথ্যা। বৌমা আত্মহত্যা করেছে।’’

কান্নাকাটির মধ্যে দিদিমার কোলে বসে উদাস চোখে মাকে খুঁজে যাচ্ছে বর্ণালীর তিন বছরের ছোট্ট ছেলে রনি। তখনও তাকে চরম সত্যি কথা জানাতে পারেননি পরিজনেরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন