সীতা পাহাড়ের এই টিলায় সবুজ নষ্টের অভিযোগ উঠেছে। নিজস্ব চিত্র
জেলা প্রশাসন পাহাড় ঘিরে পর্যটনের জোর দিচ্ছে। সেই জয়চণ্ডী পাহাড়ের একাংশে নির্বিচারে গাছ কাটার অভিযোগ উঠল। সম্প্রতি রঘুনাথপুর শহরের কিছু বাসিন্দা বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন। তাঁদের আরও অভিযোগ, পাহাড়ের নীচের অংশ সমতল করে দেওয়া হচ্ছে। বুজিয়ে ফেলা হচ্ছে জলাশয়। মহকুমাশাসক (রঘুনাথপুর) দেবময় চট্টোপাধ্যায় জানান, অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
কয়েক বছর ধরে জয়চণ্ডী পাহাড়ের একাংশে সরকারি উদ্যোগে তৈরি হয়েছে রিসর্ট, পথসাথী আর যুব আবাস। মরসুমে প্রচুর পর্যটক আসছেন। কিন্তু পাহাড়ের অন্য অংশে বেসরকারি পর্যটন কেন্দ্র তৈরি করতে গিয়ে প্রচুর গাছ কাটা হচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের। রঘুনাথপুর নাগরিক মঞ্চের তরফে সম্প্রতি মহকুমাশাসকের কাছে এই মর্মে অভিযোগ জানানো হয়েছে। দেবময়বাবু বলেন, ‘‘রঘুনাথপুর থানা ও ভূমি দফতরকে তদন্ত করে রিপোর্ট দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।’’
জয়চণ্ডী পাহাড়ে সবুজ নষ্টের অভিযোগ অনেক দিনেরই। বন দফতরের উদ্যোগে পাহাড়ের পাশের সরকারি জমিতে বনসৃজন করা হয়েছিল কয়েক বছর আগে। কিন্তু বন রক্ষা করা যাচ্ছে না। গড়পঞ্চকোট পাহাড়ের মতো জয়চণ্ডীর সরকারি খাস জমি বন দফতরের হাতে নেই। ফলে সরকারি বিধিনিষেধের জালে পড়ে পুরোদস্তুর মাঠে নামা যাচ্ছে না বলে দফতরের কর্তাদের একাংশের দাবি। অন্য দিকে, স্থানীয় পুরসভা বা পঞ্চায়েতের লোকবল নেই। তাই তাঁরা বনরক্ষায় বিশেষ কিছু করতে পারছেন না বলে দাবি। এই ডামাডোলে একটু একটু করে গাছপালা কমছে বলে অভিযোগ স্থানীয় লোকজনের।
এরই মধ্যে পাহাড়ের অন্য প্রান্তেও নির্বিচারে গাছ কাটার অভিযোগ উঠল।
জয়চণ্ডীর অন্য প্রান্তে কলেজের দিকে সীতা পাহাড়। সেখানে নির্বিচারে গাছ কাটার অভিযোগ বেসরকরি সংস্থার দিকে। নাগরিক মঞ্চ দাবি করেছে, সীতা পাহাড়ের পাদদেশে বেসরকারি উদ্যোগে রিসর্ট গড়তে গিয়ে পাহাড়ের পরিবেশ নষ্ট করা হচ্ছে। বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে নির্বিচারে গাছ কাটা হচ্ছে। এলাকার লোকজন ব্যবহার করেন এমন একটি পুকুর ভরাট করে সুইমিং পুল তৈরি করা হচ্ছে। আর টিলার পাথর কেটে সমতল করে ফেলা হচ্ছে এলাকাটিকে। নাগরিক মঞ্চের তরফে কৌশিক সরকার, শেখর চক্রবর্তী, নন্দদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়, শান্তনু দাস, সুমিত চট্টোপাধ্যায়, সুভাষ বাউড়ি, অরিন্দম বন্দ্যোপাধ্যায়রা বলেন, ‘‘বছরকয়েক আগেও ওই এলাকায় ঘন বন ছিল। এখন পুরো ফাঁকা।’’ প্রশাসনের কাছে নাগরিক মঞ্চ দাবি করেছে, প্রয়োজনে ওই এলাকা জরিপ করা হোক। দেখা হোক, পাহাড়ের যে এলাকার প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে সেটা সরকারি কি না। তাঁদের আশঙ্কা, সংস্থাটি ওই এলাকায় যত জমি কিনেছে, তার বাইরেও সরকারি জমির গাছ কাটছে।
মহকুমাশাসক দেবময় চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা সমস্ত দিক খতিয়ে দেখব। ভূমি দফতরকে সরজমিন তদন্ত করতে বলা হয়েছে।’’ তিনি জানিয়েছেন, গাছ রক্ষার ব্যাপারে তাঁদের মনোভাব কড়া। রায়তি সম্পত্তি হলেও গাছ কাটার ক্ষেত্রে বন দফতরে অনুমতি নিতে হবে। তা নেওয়া হয়েছিল কি না, গোড়াই সেটাই দেখা হচ্ছে।
বেসরকারি সংস্থাটির কর্ণধার শিবাজী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘জমিটা কেনার সময়েই ওখানটা পুরো ফাঁকা ছিল। আগেই গাছ কেটে সাফ করে রাখা হয়েছিল।’’ তাঁর দাবি, ওই জায়গায় তাঁরাই গাছ লাগাচ্ছেন। সবুজ না থাকলে আখেরে ক্ষতি হবে ব্যবসারই। পুকুর বুজিয়ে সুইমিং পুল তৈরি এবং পাহাড় সমতল করে দেওয়ার অভিযোগ মানতে চাননি তিনি।