অভিযান: আদ্রার নার্সিংহোমে তদন্তকারীরা। —নিজস্ব চিত্র।
পুরুলিয়ার বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযানে নেমে পঞ্চাশ কোটি টাকারও বেশি মূল্যের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করল রাজ্যের আর্থিক অপরাধ দমন বিভাগ (ডিইও)। মঙ্গলবার পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর ও আদ্রা থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে মানস দাঁ ও প্রশান্ত চট্টোপাধ্যায় নামে সংস্থার দুই ডিরেক্টরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে কম্পিউটার ও প্রচুর নথিপত্র। সিল করা হয়েছে সংস্থার রঘুনাথপুর শহরের অফিস, রঘুনাথপুরের নন্দুকা গ্রামের সিমেন্ট ও ছাই ইটের কারখানা এবং আদ্রার নার্সিংহোম। ডিইও-র এডিজি বিভূতিভূষণ দাস বলেন, ‘‘তদন্ত মোটামুটি গুটিয়ে আনা হয়েছে। তবে এখনই এ ব্যাপারে বিশদে বলার সময় আসেনি।’’
আদ্রার রগুড়ি গ্রামের বাসিন্দা পেশায় আইনজীবী সত্যরঞ্জন চৌধুরীর উদ্যোগে তৈরি হয়েছিল শাশ্বত গ্রুপ অফ ইন্ড্রাস্ট্রিজ প্রাইভেট লিমিটেড নামের ওই সংস্থা। তদন্তে নেমে ডিইও জেনেছে, রঘুনাথপুরের সিমেন্ট কারখানা, মধ্যপ্রদেশের একটি ইস্পাত কারখানা ও আদ্রার নার্সিংহোমের নাম করে ২০০৮ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত আমানতকারীদের থেকে প্রায় একশো কোটি টাকা তোলা হয়। এই রাজ্যের পাশাপাশি ওই সংস্থা বিহার ও ওড়িশা থেকেও টাকা তুলেছিল। ২০১৫ থেকে আমানতকারীরা টের পেতে শুরু করেন, তাঁরা প্রতারিত হয়েছেন। ২০১৬-র ১৬ এপ্রিল কলকাতার মুরারিপুকুরের বাসিন্দা সুবিমলকান্তি ঘোষ লেক থানায় অভিযোগ দায়ের করেন, মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরেও তিনি আমানতের টাকা ফেরত পাচ্ছেন না। দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার বেশ কিছু আমানতকারীও আর্থিক অপরাধ দমন বিভাগে সংস্থাটির বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ জানান।
দু’টি অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়। ডিইও-র এক আধিকারিক জানান, সেবি ও রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা যায়, ওই সংস্থার বাজার থেকে টাকা তোলার অনুমতি নেই। এর পরে সত্যরঞ্জনকে কলকাতায় ডিইও-র দফতরে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। সত্যরঞ্জন দাবি করেছিলেন, তিনি এবং তাঁর স্ত্রী কল্পনা চৌধুরী ২০১৪ সালে পদত্যাগ করেছেন। তাঁরা সংস্থার ব্যাপারে কিছু জানেন না।
এ দিন রঘুনাথপুর ও আদ্রায় গিয়েছিলেন ডিইও-র ডিরেক্টর তথা এডিজি বিভূতিভূষণ দাস, ডেপুটি ডিরেক্টর তথা ডিআইজি তন্ময় রায়চৌধুরী, মামলার তদন্তকারী অফিসার তথা ডিএসপি প্রিয়ব্রত বক্সী-সহ ৬৬ জন। সকাল থেকেই চারটি দলে ভাগ হয়ে তাঁরা অভিযান চালান। সিমেন্ট কারখানা থেকে গ্রেফতার করা হয় সংস্থার ডিরেক্টর, নন্দুকার বাসিন্দা প্রশান্ত চট্টোপাধ্যায়কে। আদ্রার নার্সিংহোম থেকে ধরা হয়েছে আসানসোলের কুলটি থানার ডিসেরগড়ের বাসিন্দা মানস দাঁকে।
ডিইও সূত্রের খবর, সত্যরঞ্জন অপরাধের সঙ্গে যুক্ত। কারণ, তিনি শীর্ষপদে থাকাকালীন যাবতীয় টাকা তোলা হয়েছিল। এ দিন রগুড়ি গ্রামে সত্যরঞ্জনের বাড়িতে গিয়ে ওই দম্পতিকে পাননি তদন্তকারীরা। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁরা হায়দরাবাদে রয়েছেন। সত্যরঞ্জন যে ঘরে থাকতেন সেটি সিল করে দেওয়া হয়েছে।
গ্রেফতার হওয়ার আগে মানস দাঁ দাবি করেছেন, তাঁরা বাজার থেকে আমানতকারীদের কাছ থেকে যত টাকা তুলেছিলেন সম্পত্তি বিক্রি করে তার মধ্যে ১২ কোটি টাকা ফেরত দিয়েছেন। বাকি প্রায় ১৫ কোটি টাকা ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। তিনি বলেন, ‘‘নার্সিংহোমের ব্যাপারটা সত্যরঞ্জনবাবু দেখেন। শুনেছি ক্রেতা পেতে সমস্যা হচ্ছে বলে সেটি বিক্রি করতে পারছেন না।’’
এ দিন চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি সত্যরঞ্জন ও তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে। আজ, বুধবার ধৃত দু’জনকে আলিপুর আদালতে তোলার কথা।