গণপিটুনিতে ধরণী সিং সর্দারের স্ত্রী। (ইনসেটে) ধরনী সিং সর্দার। —ফাইল ছবি
বোন ও স্ত্রীকে নিয়ে যাত্রা দেখে ফেরার পথে এক যুবকের মৃত্যু ঘিরে রহস্য দানা বেঁধেছে আড়শায়। মৃতের নাম ধরণী সিং সর্দার (২৩)। তাঁর বাড়ি আড়শা থানার কেন্দুয়াডি গ্রামে। শনিবার রাতে আড়শায় একটি রাস্তার পাশে তাঁকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে নিয়ে আসার পথেই তাঁর মৃত্যু হয়।
পরিবারের দাবি, যাত্রা থেকে ফেরার পথে কিছু ছেলে ধরণীর স্ত্রীর হেনস্থা করে। প্রতিবাদ করায় তাঁকে মারধর করা হয়। তাতেই তাঁর মৃত্যু বলে দাবি। যদিও তাঁরা রবিবার পর্যন্ত কোনও অভিযোগ দায়ের করেননি বলে পুলিশের দাবি। জেলা পুলিশের এক আধিকারিক জানান, ধরণীর মোটরবাইকের সামনের অংশ দুমড়েমুচড়ে গিয়েছে। দুর্ঘটনাতেই সাধারণত এমনটা হয়। মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট নয়। দেহের ময়না-তদন্ত করা হয়েছে। রিপোর্ট পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শনিবার রাতে আড়শায় যাত্রা ছিল। কেন্দুয়াডি গ্রাম থেকে মোটরবাইকে স্ত্রী শিবানি ও বোন গঙ্গাকে নিয়ে যাত্রা দেখতে গিয়েছিলেন ধরণী। যাত্রা দেখে ফেরার পথে কিছু ছেলের সঙ্গে তাঁদের গোলমাল হয় বলে অভিযোগ। স্থানীয় স্কুলের ছাত্রী গঙ্গা এ দিন সন্ধ্যায় দাবি করে, যাত্রা দেখে তাঁরা বার হওয়ার সময় কয়েকটি ছেলে আপত্তিকর মন্তব্য করে। তাতে ধরণী প্রতিবাদ করে বলেছিলেন, ‘‘তোদের বাড়িতে কি মা-বোন নেই।’’ তারপরে আর কিছু হয়নি। মোটরবাইক নিয়ে তাঁরা তিন জনে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন। কিন্তু, মোটরবাইকে ছেলেগুলি তাঁদের পিছু নেয়। গঙ্গা জানায়, কিছু দূর আসার পরে পিছু নেওয়া মোটরবাইকের আলো আর দেখা যায়নি। তাঁরা ভেবেছিলেন, ছেলেগুলি বোধ হয় ফিরে গিয়েছে।
গঙ্গার অভিযোগ, ‘‘জীবনডি জোড়ের কাছে হঠাৎ পিছন থেকে দু’টি মোটরবাইকে চারটে ছেলে এসে আমাদের মোটরবাইকের সামনে আড়াআড়ি ভাবে দাঁড়িয়ে পড়ে। দাদা মোটরবাইক থামিয়ে দেয়। একটি ছেলে বৌদির শাড়ির আঁচলে টান দেয়। বৌদি বাধা দেন। তখন ছেলেটি বৌদিকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়। আমি বৌদিকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। দাদা তেড়ে গেলে ছেলেগুলোর সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু হয়।’’
তার দাবি, চারপাশ ঘুটঘুটে অন্ধকার ছিল। তার মধ্যে ধরণীকে ছেলেগুলো কোথায় নিয়ে গিয়েছিল, কী করছিল, কিছুই ঠাহর করা যায়নি। সেই সময় রাস্তায় লোক চলাচলও ছিল না বললেই চলে।
ধরণীর কাকিমা আলোচনা সিং সর্দার বলেন, ‘‘যাত্রা দেখে ফেরা গ্রামের লোকেদের চিনতে পেরে গঙ্গা পুরো ঘটনাটি জানায়। তাঁরাই খোঁজ শুরু করে জোড়ের পাশে অচেতন অবস্থায় ধরণীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান।’’ তাঁর প্রশ্ন, বাড়ি থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে যাত্রা হচ্ছিল বলে মেয়ে-বৌকে ছাড়া হয়েছিল। কিন্তু, এমনটা যে ঘটে যাবে কে জানত।
পেশায় কৃষিজীবী ধরণীর মৃত্যুতে সংসার কী ভাবে চলবে, সেই চিন্তা ইতিমধ্যেই পরিবারে শুরু হয়েছে। এ দিন পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে ধরণীর দেহের ময়না-তদন্ত করা হয়। পরিজনেরা জানান, সে সব নিয়েই সবাই ব্যস্ত ছিলেন বলে এ দিন থানায় অভিযোগ জানাতে পারেননি তাঁরা। আজ, সোমবার থানায় লিখিত অভিযোগ জানাবেন তাঁরা। এ দিন ঘটনাস্থলে তদন্তে যায় পুলিশ। এলাকবাসীকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। মোটরবাইকটি উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযোগ পেলে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আড়শা পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি উজ্জ্বল কুমার বলেন, ‘‘আমরা চাই ধরণী মৃত্যুর প্রকৃত সত্য পুলিশ উদ্ঘাটন করুক।’’
এ দিকে, ঘটনার পর থেকে শিবানী ঘনঘন মূর্চ্ছা যাচ্ছেন। বছর দুয়েক আগে তাঁদের বিয়ে হয়েছিল। কোনও সন্তান নেই। এ দিন কথা বলার অবস্থায় তিনি ছিলেন না। পড়শিরা বলেন, ‘‘ওই একরত্তি মেয়েটাকে স্বামী হারানোর সান্ত্বনা কী ভাবে দেব?’’