বিশ্বভারতীতে নাচের সেই বিতর্কিত ভিডিও থেকে নেওয়া ছবি।
শিক্ষক দিবস পেরিয়ে যাওয়ার এক সপ্তাহ পরে বিশ্বভারতীর সঙ্গীতভবনের একটি ভিডিয়ো ভাইরাল হল। তাতে দেখা গিয়েছে, ‘মিউজিক্যাল চেয়ার’ খেলছেন ভবনের অধ্যাপক, পড়ুয়ারা। পিছনে বাজছে ‘লুঙ্গি ডান্স’। বিশ্বভারতীর মতো প্রতিষ্ঠানে এ রকম গান নিয়ে শুরু হয়েছে চাপানউতোর।
আয়োজকদের বক্তব্য, ওই অনুষ্ঠান শিক্ষক দিবসের অঙ্গ ছিল না। মূল অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পরে নিছকই ঘরোয়া ভাবে আনন্দ উপভোগের জন্য হঠাৎ এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পড়ুয়াদের বক্তব্যের সঙ্গেই একমত সঙ্গীতভবনের অধ্যক্ষ নিখিলেশ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘‘অতীত থেকে এখনও পর্যন্ত রবীন্দ্র আদর্শকে প্রতিপালন করে রেখেছে সঙ্গীতভবন। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে পড়ুয়াদের অনুষ্ঠানের পরে মিউজিক্যাল চেয়ার খেলার মধ্যে অশ্লীল কিছু দেখতে পাইনি।’’ সঙ্গীতভবনের প্রাক্তন ছাত্র মেঘনাদ মাসাতের কথায়, ‘‘আমিও একটা সময় ছাত্র ছিলাম। মজার ছলে এ রকম করা হয়েছে তখনও। কিন্তু এর ফলে রবীন্দ্র ভাবধারাকে কোনও ভাবে আঘাত করা হয়েছে বলে মনে করছি না।’’
ভিডিয়ো ছড়ানোর পিছনে বিশ্বভারতীর ছাত্রছাত্রীদের একাংশ চক্রান্ত দেখছেন। তাঁরা জানালেন, ভিডিয়ো যদি ‘ভাইরাল’ হওয়ারই ছিল, তা আগেই হতে পারত। শিক্ষক দিবস পেরিয়ে যাওয়ার এক সপ্তাহ পরে এ রকম ভুল বার্তা প্রচারের পিছনে নিশ্চয়ই অন্য কোনও কারণ রয়েছে।
দেখুন ভিডিয়ো:
ঘটনা সত্যি হলে তা নিন্দনীয় বলে মনে করছে বিশ্বভারতীর বিভিন্ন সংগঠন। বিশ্বভারতী অধ্যাপকসভার সম্পাদক গৌতম সাহা বলেন, ‘‘যে দিনটি অধ্যাপকেরা সকালে প্রার্থনা দিয়ে শুরু করেছিলেন, সেই দিনে এ রকম গানের সঙ্গে তাঁদের যুক্ত থাকা অনভিপ্রেত।’’ বিশ্বভারতী কর্মিসভার সম্পাদক বিদ্যুৎ সরকারের প্রতিক্রিয়া, ‘‘যদি সত্যিই এমন ঘটে থাকে, তা নিন্দনীয়।’’ বিশ্বভারতী ফ্যাকাল্টি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুদীপ্ত ভট্টাচার্য এবং সম্পাদক বিকাশ গুপ্তের কথায়— ‘‘সঙ্গীতভবনের কাছে এমন আশা করা যায় না। ঘটনার পূর্ণ তদন্ত হোক।’’
বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য সবুজকলি সেন বলেন, ‘‘এটি বিশ্বভারতীর ঘোষিত কোনও অনুষ্ঠান ছিল না। শিক্ষক দিবসের দিন অনেক ভবন, বিভাগ আলাদা করে অনুষ্ঠান করে। সে রকমই একটি অনুষ্ঠান ছিল।’’ বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের বক্তব্য— ভিডিয়োয় যিনি ‘লুঙ্গি ডান্স’ করছেন বলে মনে হচ্ছে, তিনি রাইবেশে নাচের অধ্যাপক। সেটি রাইবেশে নাচেরও একটি আঙ্গিক। এতে খারাপ বা অশালীন কিছু নেই।
বিশ্বভারতীর এই ঘটনায় কোনও দোষ দেখছেন না সাধারণ মানুষও। প্রাথমিক স্কুলশিক্ষক মানস মজুমদার বলেন, ‘‘লাভপুর কলেজের মতোই সেই একই প্রসঙ্গ উঠে এল। আমার মতে এতে কোনও দোষ নেই।’’