Coronavirus

পুলিশ কড়া হতেই সুনসান রাস্তাঘাট

বুধবার পুরুলিয়া শহরের বেশিরভাগ দোকানপাট বন্ধ ছিল। তবে মোটরবাইক নিয়ে কিছু লোকজনকে, বিশেষত কমবয়সীদের ঘুরে বেড়াতে দেখা গিয়েছে কিছু এলাকায়।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২০ ০৯:০৪
Share:

টান: আইন ভেঙে পথে বেরনো তরুণকে পুরুলিয়া সদর থানার সামনে আটকাল পুলিশ। ছবি: সুজিত মাহাতো

পুরুলিয়া

Advertisement

দল বেঁধে মাঠে চুটিয়ে চলছে ক্রিকেট। এমনটা দেখা গেল বুধবার পুরুলিয়া শহরের কর্পূরবাগান এলাকায়। পরে পুলিশ গিয়ে খেলা বন্ধ করে। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘কেন ছেলেদের ক্রিকেট খেলতে বাইরে যেতে দিয়েছেন, এটা আমরা অভিভাবকদের জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তাঁরা বলেছেন, বাড়িতে ছোটদের মন টিকছে না। জোর করেই বেরিয়ে পড়েছিল।’’

বুধবার পুরুলিয়া শহরের বেশিরভাগ দোকানপাট বন্ধ ছিল। তবে মোটরবাইক নিয়ে কিছু লোকজনকে, বিশেষত কমবয়সীদের ঘুরে বেড়াতে দেখা গিয়েছে কিছু এলাকায়। শহর ঘুরে নীলকুঠিডাঙা, নামোপাড়া, বিটি সরকার রোডের মতো নানা এলাকায় চোখে পড়েছে বেশ কিছু জায়গায় রকে বসে আড্ডা দিচ্ছে কমবয়সী ছেলেরা।

Advertisement

১২ নম্বর ওয়ার্ডের ভাগাবাঁধ পাড়া, ১০ নম্বর ওয়ার্ডের রাজাবাঁধ এলাকায় আবার তাসের আড্ডা বসেছিল। পুলিশ যাওয়ার আগেই অবশ্য আড্ডা ছেড়ে পালিয়েছিল লোকজন।

মোটের উপরে, পুরুলিয়া শহর-সহ বলারামপুর, হুড়া এলাকায় সকালের দিকে আনাজ বাজার, মুদির দোকানে ভিড় ছিল ভালই। পুরুলিয়া শহরের বড়হাটে মঙ্গলবারের তুলনায় লোক ছিল কিছুটা কম। রাঁচী রোডে রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডার নিয়ে লম্বা লাইন দেখা যায়। পুলিশ অবশ্য গিয়ে সবাইকে নির্দিষ্ট দূরত্বে দাঁড় করিয়েছে।

ঝালদা

অহেতুক জটলা হয়েছিল। তা ভাঙতে মঙ্গলবার লাঠি চালিয়েছিল পুলিশ। বুধবার ঝালদা শহর ছিল মোটের উপরে ফাঁকা। সকালে আনাজ বাজারে, মুদির দোকানে কিছুটা ভিড় হয়েছিল। তবে মঙ্গলবারের তুলনায় অনেকটাই কম। বেলা কিছুটা বাড়তেই ভিড় নিয়ন্ত্রণে রাস্তায় নামে পুলিশ। দুপুরের মধ্যে সুনসান হয়ে যায় শহর।

এ দিন সকাল থেকেই এসডিও অফিস, বিডিও অফিস এবং থানা থেকে গাড়ি বেরিয়ে অযথা ভিড় না করার জন্য সতর্ক করে। তবে কিছু অল্পবয়সীকে মোটরবাইকে ঘোরাঘুরি করতে দেখা গিয়েছে। একই ছবি ছিল কোটশিলা, জয়পুর, বাঘমুণ্ডি এলাকায়। সকালের দিকে আনাজ বাজার, মুদির দোকানে ভিড় কিছুটা থাকলেও বেলা বাড়তেই রাস্তাঘাট ফাঁকা হয়ে যায়।

ঝাড়খণ্ড সীমানার তুলিনে অন্য দিনের মতোই নাকা-তল্লাশি করেন পুলিশ ও স্বাস্থ্যকর্মীরা।

রঘুনাথপুর

মহকুমা সদর রঘুনাথপুরে সকাল থেকেই পুলিশের সক্রিয়তা চোখে পড়েছে। জীবনবীমা নিগমের অফিসের সামনে, ভোঁদুর মোড়ে জমায়েত হতে শুরু করলেই লাঠি উঁচিয়ে তেড়ে গিয়ে ভিড় ফাঁকা করেছে পুলিশ। ভিড় সরাতে কয়েকটি জায়গায় লাঠিও চালানো হয় বলে দাবি করেছেন কেউ কেউ। তবে সে কথা মানতে চায়নি পুলিশ।

বুধবার সকাল থেকে মুদির দোকান ও হাতেগোনা কয়েকটি মিষ্টির দোকান ছাড়া পুরো রঘুনাথপুর বাজার বন্ধ ছিল। হাটতলাতে আনাজ বাজারে সকালের ভিড় ছিল অন্য দিনের থেকে অনেক কম। কয়েকটি মুদির দোকানে দোকানদারেরাই ক্রেতাদের নির্দিষ্ট দূরত্ব রেখে দাঁড়ানোর অনুরোধ করেন। ৪ নম্বর ওয়ার্ডের স্যাকরাপড়ার মুদির দোকানের মালিক শান্তি মোদক দোকানে ঢোকার আগে ক্রেতাদের ‘স্যানিটাইজ়ার’ দিয়ে হাত ধুইয়েছেন।

রঘুনাথপুরের মতোই ছবি ছিল নিতুড়িয়া, পাড়া, সাঁতুড়িতে। ওই ব্লকগুলির কিছু এলাকা শিল্পাঞ্চল। সোমবার সন্ধ্যা থেকেই কারখানাগুলি লকডাউন হয়ে যাওয়ায় ভিড় বা জমায়েত তৈরি হয়নি। পুরুলিয়া-বরাকর রাজ্য সড়ক, রঘুনাথপুর-চন্দনকেয়ারি রাজ্য সড়কে যানবাহন কার্যত চলেনি। কাশীপুর ব্লক সদরে পোস্টঅফিস মোড়ের ঘিঞ্জি বাজার বুধবার বসতে দেয়নি পুলিশ। বিক্রেতাদের সরিয়ে পাশের ফাঁকা মাঠে বসানো হয়েছিল।

মানবাজার

‘লকডাউন’-এর মধ্যেও অনেক ক্রেতাকে ঠেসাঠেসি করে আনাজ বাজারে কেনাকেটা করতে দেখা গেল মানবাজার মহকুমা সদরে। বুধবার মানবাজার কিসান মান্ডিতে ছিল এই অবস্থা। বেলায় পুলিশ গিয়ে ভিড় সরিয়ে দেয়। পরে ব্লক অফিসের কর্মীরা গিয়ে মান্ডির মূল গেটে তালা ঝুলিয়ে দেন।

বুধবার বন্ধ ছিল বান্দোয়ানের সাপ্তাহিক হাট। বান্দেয়ানের আনাজ বাজারে অবশ্য ভিড় চোখে পড়েছে। হাসপাতাল মোড়, চকবাজারে মুদির দোকানে জমায়েত হচ্ছিল। বেলায় পুলিশের টহল শুরু হওয়ার পরেই খালি হয়ে যায়। স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির বহির্বিভাগের সামনে রোগীরা যাতে একে অপরের থেকে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়ান, সে জন্য মাটিতে দাগ দিয়ে দাঁড়ানোর জায়গা নির্দিষ্ট করে দিয়েছিল পুলিশ।

বাঁকুড়া সদর

বাঁকুড়া শহর ও বড়জোড়ায় লকডাউন শুরু হয়েছিল সোমবার সন্ধ্যা থেকেই। মঙ্গলবার বিকেল থেকে গোটা জেলাই ‘লকডাউন’-এর আওতায় এসে গিয়েছে। কিন্তু ওই দিন নিয়ম না মানার অভিযোগ উঠেছিল বিস্তর। পুলিশ মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকেই বাঁকুড়া শহর ও লাগোয়া গ্রামাঞ্চল জুড়ে পাড়ায় পাড়ায় আড্ডা তুলতে কড়া ভূমিকা নেয়। বুধবার রাস্তা ছিল অনেক ফাঁকা।

বিষ্ণুপুর

বিষ্ণুপুর শহর জুড়ে মঙ্গলবার রাতে পুলিশি টহল ব্যপক ভাবে বাড়ানো হয়। প্রাচীন এই শহরের সরু অলিগলিতে টোটো ও গাড়িতে চড়ে লাঠি হাতে পুলিশ টহল দিয়েছে। বেশ কিছু এলাকায় অহেতুক জটলা পাকিয়ে থাকা মানুষজনকে জোর করে ঘরে ঢোকানো হয়। বুধবারও শহরের বিভিন্ন জায়গায় একই ভাবে পুলিশকে ঘুরতে দেখা গিয়েছে। শহরের বোলতলা এলাকায় পুলিশের পিকেট ছিল। অন্যান্য এলাকায় ভিড় ছিল কম।

খাতড়া

মঙ্গলবার বিকেল থেকেই ‘লকডাউন’-এর আওতায় এসেছে দক্ষিণ বাঁকুড়ার খাতড়া মহকুমা। বুধবার সকাল থেকে শহরের রাস্তাঘাট জনশূন্য ছিল। বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার কোটেশ্বর রাও বলেন, “গোটা জেলায় লকডাউন সফল করতে কড়া পদক্ষেপ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে থানাগুলিকে। আইন ভাঙার জন্য কাউকে অবশ্য গ্রেফতার বা আটক করা হয়নি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন