Coronavirus in West Bengal

কোভিড হাসপাতাল গড়ায় ঠিকাদার নিয়ে ‘দ্বন্দ্ব’

হাজার হাজার পরিযায়ী শ্রমিক ফিরতেই বীরভূমে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দুশোর কাছাকাছি পৌঁছেছে।

Advertisement

দয়াল সেনগুপ্ত

দুবরাজপুর শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০২০ ০২:৪২
Share:

পরিদর্শন: বন্ধ যক্ষ্মা হাসপাতালের ভবনে মহকুমাশাসক। নিজস্ব চিত্র

রোগ-দুর্যোগে রাজ্য যে পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে, তা মোকাবিলায় সকলকে এক সঙ্গে নামতে হবে বলে দলের নেতা-কর্মীদের বার্তা গিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে বন্ধ থাকা সরকারি একটি যক্ষ্মা হাসপাতালকে কোভিড হাসপাতালে রূপান্তরিত করার চেষ্টায় বাগড়া দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে দুবরাজপুরে। এই ঘটনায় সামনে এসেছে দুবররাজপুর শহর ও ব্লকের দুই তৃণমূল নেতার দ্বন্দ্বও।

Advertisement

হাজার হাজার পরিযায়ী শ্রমিক ফিরতেই বীরভূমে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দুশোর কাছাকাছি পৌঁছেছে। অধিকাংশ রোগীর উপসর্গ না থাকলেও এত জনের চিকিৎসা কোথায় হবে, বা তাঁদের আলাদা করে রাখা যায়, প্রশাসনের দুশ্চিন্তা সেটা নিয়েই। বোলপুর একটি বেসরকারি হাসপাতালকে কোভিড হাসপাতালে রূপান্তরিত করা হয়েছে আগেই। বোলপুরেই আরও একটি বেসরকারি নার্সিংহোমকে কোভিড হাসপাতালে রূপান্তরিত করার ভাবনা নেওয়া হয়েছে। রামপুরহাটেও একটি কোভিড হাসপাতাল গড়া হয়েছে। কিন্তু সমস্যা ছিল সিউড়ি মহকুমা নিয়ে। হঠাৎ প্রশাসনের মাথায় আসে দুবরাজপুরের হেতমপুর পঞ্চায়েতের অধীনে বন্ধ হয়ে পড়ে থাকা নিরাময় যক্ষ্মা হাসপাতালের কথা।

দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকায় ভবনটি অক্ষত থাকলেও দরজা-জানলা, হাসপাতালের বেড, এমনকি বিদ্যুতের ওয়ারিংও চুরি হয়ে গিয়েছে। ঝোপজঙ্গলে ভরা গোটা এলাকা। জেলা প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেয়, জনবহুল এলাকা থেকে দূরে বন্ধ যক্ষ্মা হাসপাতালের পরিকাঠামো পুরুদ্ধার করে হাসপাতালটির তিনটি ব্লককে কাজে লাগিয়ে প্রায় ১৬০ বা তারও বেশি শয্যাবিশিষ্ট কোভিড হাসপাতাল গড়া হবে। কাজ শুরু হয় গত ২ জুন। গভীর নলকূপ গড়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫ লক্ষ টাকা।

Advertisement

এই কাজ শুরু হতে না হতেই ঠিকাদার নিয়োগ নিয়ে দ্বন্দ্ব বেধেছে বলে সূত্রের খবর। তৃণমূলেরই একটি সূত্রে জানা যাচ্ছে, হাসপাতাল ঠিকঠাক করার জন্য যে ঠিকাদারকে কাজে লাগানো হয়েছে, তিনি শাসকদলের দুবরাজপুর শহরের এক নেতার ঘনিষ্ঠ হওয়ায় রীতিমত ক্ষুব্ধ হন ব্লকের এক শীর্ষ নেতা। তার পরেই অমুক ঠিকাদার কেন, এই ‘কৈফিয়ত’ চেয়ে ফোন করেন ব্লক প্রশাসনের আধিকারিককে। জেলা প্রশাসনের কানেও এ কথা পৌঁছেছে। এক কর্তা বলেন, ‘‘পুরো কাজটাই জেলাশাসকের নির্দেশে মহকুমাশাসকের(সিউড়ি) তত্ত্বাবধানে হচ্ছে। তাই ঠিকাদার কোন নেতার ঘনিষ্ঠ, সেটা বিবেচ্য নয়। এখানে কাজটাই আসল। কারণ, করোনা যে হারে বাড়ছে, তাতে জেলায় আরও কোভিড হাসপাতাল গড়তেই হবে। এ সব বলার পরেও খুব একটা সন্তুষ্ট করা যায়নি ওই ক্ষুব্ধ নেতাকে।”

ফোন করার বিষয়টি মেনে নিয়েছেন ওই ব্লক তৃণমূল নেতা। তিনি বলেন, ‘‘ঠিকাদার নিয়ে আপত্তি করিনি। এত বড় কাজ হচ্ছে, আমরা কেন জানলাম না সেটাই জানতে চেয়েছিলাম।’’ অন্য দিকে, শাসকদলের শহর নেতার বক্তব্য, ‘‘আমি ঠিকাদার ঠিক করে দিইনি। কিন্তু, কাজের বরাত তাঁর (ব্লক তৃণমূল নেতা) মনোনীত ঠিকাদাররা কেন কাজ পেল না সেটাই ওঁর ক্ষোভের কারণ। এখন যদি তিনি কোভিড হাসপাতাল গড়ায় বাগড়া দেন, তা হলে তা গোটা জেলার পক্ষেই বড় ক্ষতি।’’

ব্লকের দুই নেতার ‘ইগো’র লড়াই ভাল চোখে দেখছেন না জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব বলেও সূত্রের খবর। প্রকাশ্যে যদিও দলের জেলা সহ-সভাপতি তথা জেলা পরিষদের মেন্টর অভিজিৎ সিংহ বলছেন, ‘‘ওই যক্ষ্মা হাসপাতালে কোভিড হাসপাতাল গড়ার কাজ অনেক খরচ ও সময় সাপেক্ষ। আপাতত তা আলোচনার স্তরে আছে।’’

মহকুমাশাসক রাজীব মণ্ডল অবশ্য বলেন, ‘‘জেলাশাসকের নির্দেশে কাজ চলছে। তাই অন্য কিছু নিয়ে ভাবছি না। শনিবারও সেখানে দেখভালের জন্য গিয়েছিলাম।’’ বীরভূম স্বাস্থ্য জেলার সিএমওএইচ হিমাদ্রি আড়িও জানান, দিন দিন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ায় দুবরাজপুরে ওই কোভিড হাসপাতাল হওয়া খুব প্রয়োজন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন