COVID19

পুরুলিয়ায় বন্ধ প্রতিষেধক দেওয়া

জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা ছশো পেরিয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০২১ ০৫:১৫
Share:

পুরুলিয়ায় নজরদারি। নিজস্ব চিত্র।

পুরুলিয়া জেলায় করোনার প্রতিষেধক দেওয়া বুধবার থেকে আপাতত বন্ধ হয়ে গেল।

Advertisement

জেলা স্বাস্থ্য দফতরের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতিষেধকের সরবরাহ না থাকার কারণেই টিকার প্রথম ডোজ় দেওয়া আপাতত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত দ্বিতীয় ডোজ়ের প্রতিষেধক নিয়ে কোনও সমস্যা নেই বলে জানানো হয়েছে। তবে এ নিয়ে জেলা স্বাস্থ্য দফতর বা প্রশাসনের তরফে বিশদে কেউ কিছু জানাতে চাননি। প্রথম ডোজ়ের প্রতিষেধক ফের কবে দেওয়া হবে? পুরুলিয়া জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অনিলকুমার দত্তের সংক্ষিপ্ত মন্তব্য, ‘‘যেমন সরবরাহ হবে, সে অনুযায়ী প্রতিষেধক দেওয়া হবে।’’

ভোট পেরোনোর পরে, পুরুলিয়া জেলার বিভিন্ন ব্লক থেকে সংক্রমণ বাড়ার খবর আসতেই সাধারণ মানুষ যাতে প্রতিষেধক নিতে পারেন, সে ব্যাপারে জোর দিয়েছিল জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দফতর। তার আগে পুরুলিয়ার মেডিক্যাল কলেজ এবং জেলার বিভিন্ন গ্রামীণ হাসপাতাল, ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং কিছু প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রতিষেধক দেওয়ার কাজ চলছিল।

Advertisement

৪৫ বছর বা তার বেশি বয়সের ব্যক্তিকে প্রতিষেধক দেওয়া হবে বলে সরকার ঘোষণা করার পরে জেলা প্রশাসনের তরফে জানানো হয়, গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে শিবির করে সপ্তাহে দু’দিন করে প্রতিষেধক দেওয়া হবে। আরও বেশি মানুষের কাছে প্রতিষেধকের সুবিধা পৌঁছে দিতেই এই পদক্ষেপ করা হয়। তাতে ভাল সাড়াও মেলে।

জেলা স্বাস্থ্য দফতরের একটি সূত্রের খবর, মঙ্গলবার পর্যন্ত সব ঠিকঠাক চললেও প্রতিষেধক না আসায় বুধবার থেকে প্রথম ডোজ়ের প্রতিষেধক দেওয়া বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ দিন অনেকেই বিভিন্ন টিকাকরণ কেন্দ্রে গিয়ে সে খবর জানতে পারেন। পুরুলিয়া শহরের নামোপাড়ার বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব প্রণবকুমার মুখোপাধ্যায় এ দিন শহরের বিভিন্ন কেন্দ্রে ঘুরেও প্রতিষেধক পাননি। হতাশ হয়ে তিনি বলেন, ‘‘পুলিশ হাসপাতালে টিকা দেওয়া হচ্ছিল বলে প্রথমে সেখানে যাই। জানানো হয়, টিকা দেওয়া বন্ধ। মেডিক্যাল কলেজে গিয়েও একই কথা শুনতে হয়েছে। এর পরে আরও কয়েকটি জায়গায় গিয়ে খালি হাতে ফিরতে হয়। আবার কবে থেকে প্রতিষেধক মিলবে তা-ও কেউ জানাতে পারেনি।’’ শহরের আমলাপাড়ার বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব শেফালি রায়ের অভিজ্ঞতাও একই। তাঁর কথায়, ‘‘এ দিন বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরেও টিকা পাইনি। কবে মিলবে, কে জানে!’’

জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, মোট ১৩ লক্ষ মানুষকে প্রতিষেধক দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছিল তারা। যার মধ্যে দু’টি ডোজ় মিলিয়ে কম-বেশি দু’লক্ষ ৪৫ হাজার মানুষকে প্রতিষেধক দেওয়া গিয়েছে। প্রথম ডোজ় পেয়েছেন কম-বেশি এক লক্ষ ৭০ হাজার মানুষ। দ্বিতীয় ডোজ় দেওয়া শুরু হবে ২০ এপ্রিলের পর থেকে।

অন্য দিকে, সংক্রমণের লেখচিত্র জেলা জুড়েই ঊর্দ্ধমুখী। বুধবার জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা ছশো পেরিয়েছে। জ্বর, শ্বাসকষ্টের উপসর্গ নিয়ে হাতোয়াড়া কোভিড হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। এক সপ্তাহ আগেও যেখানে এই হাসপাতালের কোভিড বিভাগে অধিকাংশ শয্যা খালি ছিল, এ দিনের খবর সেখানে একটি শয্যাও খালি নেই। আইসিইউ, এইচডিইউ এবং সাধারণ সমস্ত শয্যাতেই রোগী
ভর্তি রয়েছেন।

রাজ্যের নির্দেশে শয্যা বাড়ানোর প্রস্তুতি শুরু করেছেন মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ। মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ পীতবরণ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘কোভিড বিভাগে ৪৭টি শয্যা রয়েছে। সবগুলি ভর্তি। চাহিদার ভিত্তিতে আমরা আরও বাড়তি শয্যার ব্যবস্থা করছি।’’ তিনি জানান, ইতিমধ্যেই ৩০টি শয্যা বাড়ানোর কাজ প্রায় শেষ। প্রয়োজনে আরও বাড়ানো হবে।

বুধবার পরিস্থিতি সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে জেলাশাসক অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় ও পুলিশ সুপার বিশ্বজিৎ মাহাতো দেবেন মাহাতো সরকারি মেডিক্যাল কলেজ এবং শহরের ট্যাক্সিস্ট্যান্ড লাগোয়া এলাকায় যান। মাস্ক ছাড়াই অনেকে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন। জেলাশাসক বলেন, ‘‘পরিস্থিতি সরেজমিনে ঘুরে দেখলাম। সমস্ত রকম পদক্ষেপ করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন