ঝুঁকি: করোনা আবহেও চৈত্রে সেেলর ভিড় বোলপুর শহরে। অনেকের মুখেই নেই মাস্ক। শনিবার। নিজস্ব চিত্র।
করোনা সংক্রমণ বাড়ছে লাফিয়ে, তবে সচেতনতার লেশমাত্র দেখা যাচ্ছে না। বোলপুরে দেখা যাচ্ছে চৈত্র সেলে ভিড় করে কেনাকাটা চলছে মাস্ক ছাড়াই। লোহাপুর হাসপাতালে খোদ এক চিকিৎসকই করোনা আক্রান্ত হয়ে পড়াও অন্য চিকিৎসকেরা রোগীদের সামলাতে নাজেহাল হচ্ছেন।
বোলপুর শহরের একাধিক শপিং মল থেকে শুরু করে বড় বড় কাপড়ের দোকান, রাস্তার ধারে বসা বেশিরভাগ দোকানে স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করেই চলছে দেদার বেচাকেনা। এতে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, করোনা নিয়ে প্রশাসনের কোনও নজরদারি সেভাবে না থাকার ফলে পয়লা বৈশাখ যতই এগিয়ে আসছে ততই চৈত্র সেলের বাজারে কাতারে কাতারে মানুষ ভিড় জমাচ্ছেন।
শনিবার শহর ঘুরে দেখা গেল বছরখানেক আগে করোনার প্রাদুর্ভাবের সময় বিভিন্ন শপিং মল থেকে শুরু করে কাপড়ের দোকান গুলিতে ঢোকার মুখে স্যানিটাইজার দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল কিন্ত তা এখন একপ্রকার নেই বললেই চলে। হাতেগোনা এক দুটি শপিং মল ছাড়া প্রায় সব দোকানেই স্যানিটাইজার দেওয়ার কোনও ব্যবস্থা নেই। একসঙ্গে বহু লোক ঘেঁষাঘেঁষি করে দাঁড়িয়ে সেলের বাজার করছেন। রাস্তার ধারে ফুটপাতে গজিয়ে ওঠা দোকানগুলিতেও এক ছবি। বোলপুরের মতো একই চিত্র সিউড়ি ও রামপুরহাট শহরেও।
বোলপুর শহরের বাসিন্দা সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়, পারমিতা চক্রবর্তী, প্রত্যুষা দাসরা বলেন, “করোনা আতঙ্কের যে দ্বিতীয় ঢেউ আবার নতুন করে শুরু হয়েছে তা অনেকে জেনেও না জানার মতো কাজ করছেন, এতেই বিপদ বাড়বে বৈ কমবে না।” দোকানদার, ব্যবসায়ী থেকে ক্রেতা— তেমনভাবে কাউকেই মুখে মাস্ক পরতে দেখা যাচ্ছে না। আর এতেই নতুন করে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে।
বোলপুরের কাপড় ব্যবসায়ী বিনয় সাও, সুজন দাসরা বলেন , “যা গরম পড়েছে এতে সব সময় মুখে মাস্ক পরে কাজ করা যাচ্ছে না, তাই বাধ্য হয়ে কিছু সময়ে মাস্ক খুলে রেখেই কাজ করতে হচ্ছে।” এ বিষয়ে বোলপুরের মহকুমাশাসক মানস হালদার বলেন, “ভিড় যাতে না হয় সে জন্য প্রচার চালানো হচ্ছে। তবে ভোট প্রক্রিয়া চলার কারণে লোকজন কম থাকায় প্রতিদিন প্রচার অভিযান চালানো সম্ভব হচ্ছে না। তবে সাধারণ মানুষ যদি নিজে সচেতন না হন তাহলে সংক্রমণকে রোখা কঠিন।’’
নলহাটির লোহাপুর হাসপাতালে একজন ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক ও তিনজন চিকিৎসকের মধ্যে একজন চিকিৎসক করোনা আক্রান্ত। প্রত্যেকদিন তিনশো রোগী জ্বর নিয়ে বহির্বিভাগে চিকিৎসা করাচ্ছেন। আশি জন রোগ হাসপাতালে ভর্তি আছেন। এলাকাবাসী জানান, তিন জন চিকিৎসক বিপুল সংখ্যক রোগীর চিকিৎসা করতে হিমশিম খাচ্ছেন। স্বাস্থ্য দফতর এই হাসপাতালে আরও দুই থেকে তিনজন চিকিৎসক চিকিৎসার জন্য দিলে রোগীরা দ্রুত পরিষেবা পাবেন। নলহাটি ২ স্বাস্থ্য আধিকারিক সুরজিৎ কর্মকার বলেন, ‘‘একজন চিকিৎসক করোনা আক্রান্ত হওয়ায় তিন জন চিকিৎসক পরিষেবা দিচ্ছি। রামপুরহাট স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিককে বিষয়টি জানানো হয়েছে।"
শীতলগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের দু’জন শিক্ষিকা করোনা আক্রান্ত হওয়ায় বাকি শনিবার ১৪ জন শিক্ষক শিক্ষিকার লালারসের নমুনা নেওয়া হয় লোহাপুর হাসপাতালে। সব শিক্ষক শিক্ষিকা করোনা পরীক্ষা করায় দু-দিনের জন্য স্কুল বন্ধ থাকার নোটিশ দেওয়া হয়। পরবর্তী নোটিশের পরে স্কুল খোলা হবে।