গণবণ্টন ঘিরে অভিযোগ নানা জায়গায়
Coronavirus

জনতা-পুলিশ খণ্ডযুদ্ধ

ঘটনার সূত্রপাত বুধবার সকালে। আঁকরোর ওই ডিলারের কাছ থেকে রেশনের পণ্য নেন আঁকরো-সহ পাশের প্রতাপপুর, রঘুনাথপুর গ্রামের বাসিন্দারা।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০২০ ০৮:০০
Share:

ক্ষোভ: মানবাজার ২ ব্লকের আঁকরোয় রেশন ডিলারের বাড়ির সামনে উত্তেজিত জনতা। ছবি: রথীন্দ্রনাথ মাহাতো

বিনামূল্যে রেশন সরবরাহ নিয়ে প্রথম দিনেই তেতে উঠল পুরুলিয়ার মানবাজার ২ ব্লকের আঁকরো। রেশন ডিলার কম মাল দিচ্ছেন, এই অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ দেখিয়ে দোকান বন্ধ করে দিলেন গ্রামবাসীর একাংশ। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ গ্রামে গেলে, তাদের ঘিরে বিক্ষোভ শুরু হয়। অভিযোগ, পুলিশকে লক্ষ করে ইট-পাথর ছোড়ে জনতা। পাথরের আঘাতে পুলিশের দু’টি গাড়ির কাচ ভাঙে। জখম হয়েছেন এক পুলিশকর্মী। গ্রামবাসীর অভিযোগ, শেষ পর্যন্ত পুলিশ তাঁদের উপরে লাঠি চালায়। শেষে পুলিশ ওই রেশন ডিলারকে সরিয়ে নিয়ে যায়।

Advertisement

পুলিশ অবশ্য লাঠি চালানোর অভিযোগ মানতে চায়নি। জেলা পুলিশ সুপার এস সেলভামুরুগান বলেন, ‘‘পুলিশের উপরে হামলার অভিযোগ করা হবে। ওই রেশন ডিলারের বিরুদ্ধে খাদ্য দফতর অভিযোগ জানালে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ পুরুলিয়ার জেলা খাদ্য নিয়ামক শুভ্রজিৎ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওই রেশন ডিলারের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত করা হবে। তবে তিনি রেশনে মাল দিতে পারবেন না। ওই এলাকায় রেশন পণ্য সরবরাহ অবশ্য কোনও ভাবেই ব্যাহত হবে না। অন্য ভাবে সেখানে রেশনের মালপত্র দেওয়া হবে। উপভোক্তাদের তা জানিয়েও দেওয়া হবে।’’

ঘটনার সূত্রপাত বুধবার সকালে। আঁকরোর ওই ডিলারের কাছ থেকে রেশনের পণ্য নেন আঁকরো-সহ পাশের প্রতাপপুর, রঘুনাথপুর গ্রামের বাসিন্দারা। বিনামূল্যে চাল ও আটা দেওয়ার সময়ে গ্রাহকদের একাংশ অভিযোগ তোলেন, তাঁদের পরিমাণে কম আটা ও চাল দেওয়া হচ্ছে। অভিযোগ, গ্রাহকেরা প্রতিবাদ জানালে রেশন ডিলার তাঁদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। তার পরেই ক্ষিপ্ত জনতা রেশন দোকান বন্ধ করে দেয়।

Advertisement

খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন বোরো থানার ওসি কৌশিক বন্দ্যোপাধ্যায়। পুলিশকে ঘিরেও বিক্ষোভ শুরু হয়। কিছু পরেই গ্রামে যান বিডিও (মানবাজার ২) তারাশঙ্কর পরামাণিক। গ্রামবাসীর সঙ্গে তিনি পাশের হরিমন্দিরে আলোচনায় বসেন। সেখানে বাসিন্দারা দাবি তোলেন, রেশন ডিলারকে তাঁদের হাতে তুলে দিতে হবে। এরই মাঝে পুলিশ ডিলারকে গাড়িতে করে থানায় নিয়ে যেতে উদ্যোগী হলে জনতা পুলিশের গাড়ি আটকে দেয়। ততক্ষণে ঘটনাস্থলে পৌঁছন এসডিপিও (মানবাজার) আফজল আবরার।

পুলিশের গাড়ি আটকে দেওয়ার পাশাপাশি, পুলিশকে তাক করে ইট-পাথর ছুড়তে শুরু করে জনতা। তারপরেই পুলিশ লাঠি চালিয়ে লোকজনকে ছত্রভঙ্গ করে ডিলারকে সরিয়ে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ।

স্থানীয় বাসিন্দা দিলীপকুমার ওম দাবি করেন, ‘‘ওই ডিলারের বিরুদ্ধে রেশনে কম মাল দেওয়ার অভিযোগ আগে থেকেই ছিল। এ দিন তাই একই অভিযোগ ওঠায় পরিস্থিতি তেতে ওঠে।’’ আঁকরো বড়কদম পঞ্চায়েতের তৃণমূলের প্রধান শিশির মণ্ডল বলেন, ‘‘যা ঘটেছে, তা জনরোষ।’’

ডিলারের ছোট ছেলের দাবি, ‘‘মালপত্র ঠিক পরিমাণেই দেওয়া হচ্ছিল। মালপত্র কতখানি দেওয়া হবে, তা নিয়ে গ্রাহকদের মধ্যে বিভ্রান্তি ছিল। সেই সঙ্গে দোকানের বাইরে দাগ দেওয়া দেখে ওঁদের মধ্যে সন্দেহ তৈরি হয়। কিছু লোকের উস্কানিতেই গোলমাল বাধে।’’

‘ওয়েস্ট বেঙ্গল এম আর ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর পুরুলিয়া জেলা সম্পাদক প্রভাশিসলাল সিংহ দেও বলেন, ‘‘ঘটনাটি শুনেছি। যদি ওই ডিলারের ত্রুটি করে থাকেন, তবে প্রশাসন যা বুঝবে, তাই করবে।’’

দুপুরে ব্লক অফিসে গিয়ে খাদ্য সরবরাহ দফতর ও ব্লক প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন এসডিও (মানবাজার) বিষ্ণুব্রত ভট্টাচার্য। সূত্রের খবর, এই পরিস্থিতিতে ওই এলাকায় কী ভাবে রেশন পণ্য সরবরাহ স্বাভাবিক করা যায়, সেই বিষয়ে আলোচনা হয়।

এ দিন জেলার অন্যত্র অবশ্য রেশন বিলি নিয়ে কোনও সমস্যার খবর পাওয়া যায়নি।

তবে, ঝালদা মহকুমার বেশ কয়েকটি এলাকায় গ্রাহকেরা রেশন দোকান থেকে আটা পাননি বলে অভিযোগ তুলেছেন। ঝালদা ১ ব্লকের নয়াডি পঞ্চায়েতের ডড়পা গ্রামের রেশন দোকান থেকে পণ্য নিতে রোদের মধ্যে আড়াই কিলোমিটার পথ হেঁটে এসেছিলেন মহুলডি গ্রামের রমণী মাহাতো। তাঁর অভিযোগ, ‘‘এতটা রাস্তা হাঁটাই সার। আটা পেলাম না। আর এক দিন আসতে হবে।”

‘ওয়েস্ট বেঙ্গল এম আর ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এ ঝালদা ১ ব্লকের সম্পাদক দুবরাজ মাহাতোর দাবি, ব্লকের কিছু রেশন দোকানে আটা আসেনি। বিষয়টি প্রশাসনকে জানিয়েছেন তাঁরা।

তবে পুরুলিয়ার জেলা খাদ্য নিয়ামক বলেন, ‘‘কোনও দোকানে আটা পৌঁছয়নি বলে আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ করেননি।’’ তবে রঘুনাথপুর মহকুমা এলাকায় আটা, চাল দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনও অভিযোগ আসেনি।

আদ্রার একটি রেশন দোকানে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে গ্রাহকদের রেশন নিতে দেখা গিয়েছে। মালপত্র দেওয়ার আগে ‘স্যানিটাইজ়ার’ দিয়ে হাত পরিষ্কার করেন দোকানের কর্মীরা।

অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন