অনিল-খুনে এ বার ধৃত রাইপুরের সিপিএম নেতা

ফের নতুন মোচড় রাইপুরের তৃণমূল নেতা অনিল মাহাতো হত্যাকাণ্ডের তদন্তে। জড়িয়ে গেল সিপিএমের নামও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রাইপুর শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০১৬ ০১:১৪
Share:

ফের নতুন মোচড় রাইপুরের তৃণমূল নেতা অনিল মাহাতো হত্যাকাণ্ডের তদন্তে। জড়িয়ে গেল সিপিএমের নামও।

Advertisement

অনিল-খুনের ঘটনায় এ বার গ্রেফতার হলেন সিপিএমের রাইপুর ঢেকো লোকাল কমিটির সম্পাদক অশোক ঘোষ। বৃহস্পতিবারই নিহত নেতার ঘনিষ্ঠ অনুগামী সনৎ সিংহ ও গাড়ির চালক জগন্নাথ নামাতাকে খুনের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে গ্রেফতার করে পুলিশ। যা শুনে চমকে উঠেছিলেন রাইপুরবাসী। এ বার অশোকবাবুর ধরা পড়ায় এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে জল্পনা আরও বাড়ল।

গত ৮ সেপ্টেম্বর রাতে রাইপুরের মটগোদায় তৃণমূল পার্টি অফিসের সামনে দুষ্কৃতীদের ছোড়া গুলিতে খুন হন ব্লক তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি অনিলবাবু। পুলিশের দাবি, ধৃত জগন্নাথ জেরার মুখে তাদের জানিয়েছেন, যে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে অনিলবাবুকে গুলি করা হয়েছিল, সেটি জোগাড় করে দিয়েছিলেন অশোকবাবুই! বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার সুখেন্দু হীরা বলেন, “সনৎ আমাদের কাছে স্বীকার করেছেন, অনিলবাবু তাঁর পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন বলেই ষড়যন্ত্র করে তাঁকে খুন করেছেন তিনি। জগন্নাথ নিজেই অনিলবাবুকে পিছন থেকে গুলি করেছিলেন বলেও আমাদের কাছে স্বীকার করেছেন। যে বন্দুক দিয়ে গুলি করা হয়েছিল, সেটি অশোকবাবু তাঁকে দিয়েছিলেন বলেই জানিয়েছেন জগন্নাথ।’’ পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, খুনে ব্যবহৃত বন্দুক এখনও উদ্ধার করা যায়নি। ধৃতদের আরও জিজ্ঞাসাবাদ করে সেটি দ্রুত উদ্ধার করা যাবে।

Advertisement

দলের নেতার ধরা পড়ার ঘটনায় এলাকায় খানিক ব্যাকফুটে পড়ে গিয়েছে সিপিএম-ও। যদিও অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে অশোকবাবুর পাশেই দাঁড়িয়েছে দল। সিপিএমের বাঁকুড়া জেলা কমিটির সদস্য তথা প্রাক্তন জেলা সভাধিপতি পার্থপ্রতিম মজুমদারের দাবি, “ঠান্ডা মথায় চক্রান্ত করে অশোককে ফাঁসানো হয়ছে। এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। অনিলবাবু খুন হওয়ার পর দিনই মটগদায় পুলিশের সামনে প্রকাশ্যে গুলি ছোড়ে সনৎ। যার কাছেই সব সময় আগ্নেয়াস্ত্র থাকে, তাকে বন্দুক সরবরাহ করার কী দরকার?”

স্থানীয় বাসিন্দারা কিন্তু জানাচ্ছেন, অশোকবাবুর সঙ্গে ধৃত সনৎ ও তাঁর দাদা তথা রাইপুর ব্লক যুব তৃণমূল সভাপতি রাজকুমার সিংহের মেলামেশা ছিল। কয়েক মাস আগে রাজকুমারের হাত ধরে অশোকবাবু তৃণমূলে যোগ দিতে পারেন বলেও গুঞ্জন উঠেছিল এলাকায়। রাইপুরের প্রাক্তন ব্লক তৃণমূল সভাপতি জগবন্ধু মাহাতো এ দিন বলেন, “পুলিশ তদন্ত করছে। কীসের ভিত্তিতে ওই সিপিএম নেতাকে ধরা হয়েছে, সেটা তদন্তকারীরাই বলতে পারবেন।’’ তাঁর সংযোজন, “অশোক যে তৃণমূলে ঢুকতে পারেন, এমন একটা গুঞ্জন অনিল খুন হওয়ার কিছু দিন আগে লোকমুখে আমিও শুনেছিলাম। তবে এটা কত দূর সত্যি জানি না।’’ গুঞ্জন যে উঠেছিল, তা মানছে সিপিএমও। পার্থপ্রতিমবাবু বলেন, “লোকমুখে অশোকের তৃণমূলে যোগ দেওয়ার কথা শুনে আমরা ওঁকে ডেকে জিজ্ঞেস করেছিলাম। এটা যে নিছুক গুজব, তা স্পষ্ট করে আমাদের বলেছিলেন তিনি।’’ সনতের সঙ্গে অশোকবাবুর ব্যক্তিগত সম্পর্ক নিয়ে পার্থপ্রতিমবাবু বলেন, “মতাদর্শগত ফারাক থাকা সত্ত্বেও রাইপুরে সব দলের মানুষ সামাজিক ভাবে মেলামেশা করেন। সেই সূত্রে সনৎদের সঙ্গেও কথা বলতেন অশোক।’’

আজ, শনিবার রাইপুরে অশোকবাবুকে গ্রেফতার করার প্রতিবাদে সভা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিপিএম।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন