পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠনের বিজ্ঞপ্তি জারি পুরুলিয়ায়

জেলাশাসক অলকেশপ্রসাদ রায় বলেন, ‘‘তিন দিন ধরে পর্যায়ক্রমে জেলার স্থগিত থাকা পঞ্চায়েতগুলিতে বোর্ড গঠনের প্রক্রিয়া চলবে। এক দিনে সমস্ত পঞ্চায়েতে বোর্ড গড়তে গেলে পুলিশ মোতায়েন করার ব্যাপারে সমস্যা হত। তাই এমনটা ঠিক করা হয়েছে।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রঘুনাথপুর শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:২৪
Share:

গোলমাল: ঘাঘরা পঞ্চায়েত লাগোয়া অঙ্গনওয়াড়ির দরজায় গুলির চিহ্ন। ফাইল চিত্র

অবশেষে। পুরুলিয়ার স্থগিত থাকা পঞ্চায়েতগুলিতে বোর্ড গঠনের বিজ্ঞপ্তি জারি করল প্রশাসন। তবে স্থগিত থাকা তিনটি সমিতির মধ্যে বিজ্ঞপ্তি হয়েছে শুধু একটিতেই। এখনও শিকেয় বলরামপুর ও জয়পুর পঞ্চায়েত সমিতির বোর্ড। আর সেই কথা তুলেই সরব হয়েছে বিরোধীরা। তারা অভিযোগ করছে, রাজ্যের শাসকদলকে রাজনৈতিক ফায়দা দিতেই ওই দু’টি সমিতিতে বোর্ড গঠন ঝুলিয়ে রাখছে প্রশাসন। তবে সে কথা মানছেন না প্রশাসনের কর্তারা। তাঁদের দাবি, ওই দু’টি সমিতিতে এখনও আইন-শৃঙ্খলার যা পরিস্থিতি, তাতে বোর্ড গঠন করতে গেলে গোলমাল হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। তাই বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়নি।

Advertisement

মঙ্গলবার জেলাশাসক পুরুলিয়ার ১৪টি ব্লকে স্থগিত থাকা ৪৪টি গ্রাম পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠনের বিজ্ঞপ্তি জারি করেছেন। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, সাঁতুড়ি পঞ্চায়েত সমিতিরও বোর্ড গঠন হয়ে যাবে এই দফায়। আগামী ১২ ডিসেম্বর থেকে পঞ্চায়েতগুলিতে বোর্ড গঠন শুরু হবে। চলবে ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত। সাঁতুড়ি পঞ্চায়েত সমিতিতে বোর্ড হবে ১৪ ডিসেম্বরই।

জেলাশাসক অলকেশপ্রসাদ রায় বলেন, ‘‘তিন দিন ধরে পর্যায়ক্রমে জেলার স্থগিত থাকা পঞ্চায়েতগুলিতে বোর্ড গঠনের প্রক্রিয়া চলবে। এক দিনে সমস্ত পঞ্চায়েতে বোর্ড গড়তে গেলে পুলিশ মোতায়েন করার ব্যাপারে সমস্যা হত। তাই এমনটা ঠিক করা হয়েছে।’’ তিনি জানান, বলরামরপুর ও জয়পুরের ক্ষেত্রে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখন ‘বোর্ড গঠনের মতো’ হয়নি।

Advertisement

পঞ্চায়েত ভোটের পরে বোর্ড গঠনকে কেন্দ্র করে বার বার তেতে উঠেছে পুরুলিয়ার বিভিন্ন এলাকা। চলেছে গুলি, বোমা। বিরোধীরা অভিযোগ তুলেছে, তারা এগিয়ে এমন পঞ্চায়েত এবং সমিতিতেই ‘তৃণমূল আশ্রিত’ গোলমাল পাকিয়েছে। চেষ্টা করেছে গায়ের জোরে দখল ছিনিয়ে নেওয়ার। যদিও সেই অভিযোগ বরাবর উড়িয়ে দিয়ে এসেছেন তৃণমূলের নেতারা। আর জেলার ৪৪টি পঞ্চায়েত ও তিনটি সমিতিতে বোর্ড গঠন স্থগিত করে দিয়েছে প্রশাসন। বলা হয়েছিল, ‘উত্তেজনাপ্রবণ’ পঞ্চায়েত ও সমিতিগুলিতে আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি ঠিক হলে তার পরে বোর্ড গঠন হবে।

কবে কোথায় পঞ্চায়েত

ব্লক: বাঘমুণ্ডি

বুড়দা কালিমাটি, মাঠা, অযোধ্যা, বাঘমুণ্ডি— ১৩ ডিসেম্বর

ব্লক: বলরামপুর

বড় উরমা, বলরামপুর— ১২ ডিসেম্বর

ব্লক: বান্দোয়ান

কুইলাপাল, ধাদকা— ১২ ডিসেম্বর

ব্লক: বরাবাজার

ভাগাবাঁধ— ১৩ ডিসেম্বর

ব্লক: হুড়া

লক্ষ্মণপুর, লধুড়কা, জবড়রা, কলাবনি— ১২ ডিসেম্বর

ব্লক: ঝালদা ২

চেক্যা, বামনিয়া-বেলাডি, টাটুয়াড়া, মাঝিডি— ১৩ ডিসেম্বর

ব্লক: জয়পুর

উপরকাহান, বড়গ্রাম, মুকুন্দপুর— ১২ ডিসেম্বর

ব্লক: মানবাজার ১

মানবাজার— ১৩ ডিসেম্বর.

ব্লক: নিতুড়িয়া

গুনিয়াড়া, রায়বাঁধ— ১৩ ডিসেম্বর

ব্লক: পাড়া

দেউলি, দুবড়া, বহড়া, পাড়া, ঝাপড়া-জবড়রা ১— ১২ ডিসেম্বর

ভাওরিডি, ঝাপড়া-জবড়রা ২— ১৩ ডিসেম্বর

ব্লক: পুরুলিয়া ২

আগয়া-নড়রা, ভাঙড়া— ১২ ডিসেম্বর

রাঘবপুর, হুটমুড়া— ১৩ ডিসেম্বর

ব্লক: রঘুনাথপুর ১

নতুনডি— ১৩ ডিসেম্বর

বেড়ো, শাঁকা, খাজুরা, বাবুগ্রাম— ১৪ ডিসেম্বর

ব্লক: রঘুনাথপুর ২

জোরাডি— ১২ ডিসেম্বর

নতুনডি, মঙ্গলদা-মৌতোড়— ১৩ ডিসেম্বর

ব্লক: সাঁতুড়ি

গড়শিকা, সাঁতুড়ি— ১৪ ডিসেম্বর

পঞ্চায়েত সমিতি

সাঁতুড়ি— ১৪ ডিসেম্বর

সেই ইস্তক বিরোধী দলগুলি বারবার বোর্ড গঠনের দাবি তুলেছে। বিভিন্ন ব্লকে রাস্তায় নেমেছিল বিজেপি। স্থগিত থাকা কয়েকটি পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠনের আবেদন নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল কংগ্রেস। পুরুলিয়ায় ‘অগণতান্ত্রিক’ ভাবে প্রশাসন বোর্ড গঠন স্থগিত রেখেছে বলে বিধানসভায় অভিযোগ তুলেছিল কংগ্রেস ও বামফ্রন্ট।

বস্তুত, বোর্ড গঠনের ব্যাপারে বিভিন্ন দিক থেকে প্রশাসনের উপরে একটু একটু করে চাপ বাড়ছিল বলে মনে করছেন জেলার কেউ কেউ। এরই মধ্যে গত মাসের মাঝামাঝি পঞ্চায়েতের বোর্ডগুলি গঠন করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সূত্রের খবর, নভেম্বরের শেষে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জেলা সফরের পরেই এই ব্যাপারে বিজ্ঞপ্তি জারি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। সফর শেষ হতেই মঙ্গলবার বিজ্ঞপ্তি জারি করেন জেলাশাসক।

বলরামপুর ও জয়পুর সমিতিতে বোর্ড গঠনের বিজ্ঞপ্তি না বেরনোয় ক্ষুব্ধ বিরোধীরা। বিজেপির জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তীর অভিযোগ, ‘‘ওই দুই সমিতিতে আমরাই বোর্ড গড়ব বুঝে প্রশাসন তৃণমূলকে ফায়দা দিতে বিজ্ঞপ্তি জারি করেনি।’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘সাঁতুড়িতে বোর্ড গঠন ঘিরে বোমা-গুলি চলেছে। বলরামপুরে কিছুই হয়নি। তা হলে কেন বলরামপুরে বোর্ড গঠনের বিজ্ঞপ্তি জারি করা হল না?” কংগ্রেসের জেলা সভাপতি নেপাল মাহাতো বলেন, ‘‘অগণতান্ত্রিক ভাবে এতদিন জেলার অনেক পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন স্থগিত করে রাখা হয়েছিল। এখনও দু’টি পঞ্চায়েত সমিতিতে একই ভাবে বোর্ড গঠন ঝুলিয়ে রাখল প্রশাসন।”

তবে তৃণমূলের দাবি, বোর্ড গঠনের সিদ্ধান্ত পুরোদস্তুর প্রশাসনিক। তার সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন