উন্নয়ন চেয়ে কেন্দায় ব্লক চালুর দাবি

বাসিন্দাদের যুক্তি, কেন্দা থানার মতো এতবড় এলাকা আশপাশের অন্য থানাগুলোতে নেই। ফলে সে ক্ষেত্রে কেন্দায় আলাদা ব্লক করার দাবি যথার্থ। তা ছাড়া এই এলাকায় ব্লক সদর হলে, স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে অন্যান্য সরকারি পরিষেবা দেওয়ার দফতরও এখানে চালু হবে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মানবাজার শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০১৭ ০২:১৩
Share:

জনবসতি বাড়লেও কেন্দা রয়ে গিয়েছে, সেই একই তিমিরে। শুধু একটি থানা রয়েছে। আর একটি প্রাথমিক স্কুলের সার্কেল অফিস। তাছাড়া আর কোনও সরকারি অফিস এখানে নেই। ফলে বাসিন্দাদের নানা সমস্যায় ছুটতে হয় ২৫ কিলোমিটার দূরের মানবাজার, নয়তো ২৭ কিলোমিটার দূরের পুরুলিয়া শহরে। কেন্দার ব্লক সদর পুঞ্চার দূরত্বও ২২ কিলোমিটার। বাসিন্দাদের তাই অভিযোগ, ব্লক সদর হওয়ার দাবি দীর্ঘদিন ধরে তোলা হলেও, কেন্দা সেই স্বীকৃতি এতদিনেও পেল না। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘ব্লক অফিস গঠনে জেলা প্রশাসনের কোনও ভূমিকাই নেই। দাবি এলে তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বিবেচনার জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হবে।’’

Advertisement

প্রশাসন সূত্রে খবর, কেন্দা থানার আয়তন ২৮৮ বর্গ কিলোমিটার। এলাকার জনসংখ্যা ১ লক্ষ ১৫ হাজারের বেশি। ওই থানার অধীনে রয়েছে আটটি পঞ্চায়েত: কেন্দা, পানিপাথর, পিঁড়রা, জামবাদ, চাঁদড়া-রাজনওয়াগড়, কামতা-জাঙ্গিদিরি, চিপিদা ভাণ্ডার-পুয়াড়া ও মানাড়া। তার মধ্যে পুঞ্চা ব্লকের পাঁচটি, পুরুলিয়া ১ ব্লকের দু’টি এবং মানবাজার ১ ব্লকের একটি পঞ্চায়েত রয়েছে। ভৌগোলিক সমস্যার কারণে ওই তিনটি ব্লকের কিছু কিছু এলাকা নিয়ে তৈরি করা হয়েছিল কেন্দা থানা। কিন্তু দিন বদলের সঙ্গে কেন্দার জনজীবনেরও অনেক পরিবর্তন হয়েছে। ফলে এখন সেই নিরিখেই কেন্দায় আলাদা ব্লক তৈরির দাবি উঠেছে।

বাসিন্দাদের যুক্তি, কেন্দা থানার মতো এতবড় এলাকা আশপাশের অন্য থানাগুলোতে নেই। ফলে সে ক্ষেত্রে কেন্দায় আলাদা ব্লক করার দাবি যথার্থ। তা ছাড়া এই এলাকায় ব্লক সদর হলে, স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে অন্যান্য সরকারি পরিষেবা দেওয়ার দফতরও এখানে চালু হবে। ফলে এই এলাকার বাসিন্দাদের অনেক সমস্যাই কাটবে।

Advertisement

এই যুক্তি উড়িয়ে দিতে পাচ্ছেন না ওই এলাকায় কাজ করা প্রশাসনিক অফিসের কর্মী থেকে আধিকারিকদের অনেকেই। পুঞ্চা ব্লকের মাঝখান দিয়ে বয়ে গিয়েছে কংসাবতী নদী। সেই নদীর একপাড়ের পাঁচটি পঞ্চায়েত পুঞ্চা থানা ও বাকি পাঁচটি পঞ্চায়েত কেন্দা থানার মধ্যে রয়েছে। ফলে নদী পার করে প্রশাসনিক কাজ করার সমস্যা রয়েছে। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘নির্বাচনের সময় কেন্দা থানাকে পুঞ্চা, মানবাজার ১ ও পুরুলিয়া ১ ব্লক অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে কাজ করতে হয়। কেন্দায় আলাদা ব্লক হলে এই জটিলতা থাকবে না।’’

বিডিও (মানবাজার ১) সত্যজিৎ বিশ্বাসও স্বীকার করেছেন, ‘‘আমাদের ব্লকের সব থেকে দূরের পঞ্চায়েত কামতা-জাঙ্গিদিরির দূরত্ব প্রায় ২৬ কিলোমিটার। কুমারী নদী পার হয়ে সেখানে যেতে হয়। ভারী বৃষ্টি হলেই কুমারী নদীর সেতু জলে ডুবে যায়। তখন ব্লক সদর থেকে ওই পঞ্চায়েত এলাকা প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।’’

বিজেপির পুঞ্চা ব্লক সভাপতি মনসুর আনসারির বাড়ি কেন্দা থানার চাঁদড়া-রাজনওয়াগড় পঞ্চায়েতের চাঁদড়া গ্রামে। তাঁর অভিজ্ঞতা, ‘‘কেন্দা থেকে মানবাজার গিয়ে পুঞ্চার বাস ধরতে হয়। পুঞ্চায় কোনও কাজে গেলে তাই সারা দিন পুরো নষ্ট। কয়েক বছর আগে কেন্দা এবং পুঞ্চা থানার মধ্যে কংসাবতী নদীর কৈড়া ঘাটে সেতু তৈরি হলেও, ওই রাস্তায় বাসও খুব কম। রাস্তাও ভাল নয়। মোটরবাইক ছাড়া ওই রাস্তায় যাওয়ার উপায় নেই। কেন্দায় ব্লক অফিস হলে এই এলাকার বাসিন্দাদের ভোগান্তি কমবে। সিপিএমের পুঞ্চা জোনাল কমিটির সম্পাদক তথা কেন্দার বাসিন্দা অনিল মাহাতো বলেন, ‘‘বামফ্রন্ট আমলে কেন্দায় ব্লক অফিস স্থাপনের দাবিতে জেলা প্রশাসনকে গণদরখাস্ত দেওয়া হয়েছিল। কেন্দা থানার পাশে জায়গাও চিহ্নিত হয়েছিল। পরে এ নিয়ে কেউ উদ্যোগ নেয়নি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন