Deucha Pachami

Deucha Pachami: আলোচনা করে কাজ হোক, দাবি ডেউচায়

প্রশাসন সূত্রে জানা যাচ্ছে, প্রস্তাবিত কয়লা খনির জন্য প্রায় সাড়ে তিন হাজার একর জমিতে বসবাসকারী প্রায় ২০ হাজার মানুষকে সরাতে হবে।

Advertisement

দয়াল সেনগুপ্ত

সিউড়ি শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০২১ ০৫:৩৫
Share:

ডেউচায় খাদান এলাকায় কাজ চলছে।

শিল্পের প্রতি সমর্থন রয়েছে এলাকার বড় অংশের মানুষের। কিন্তু, ক্ষতিপূরণ ও পুর্নবাসন প্যাকেজে সরকারি কী দেয়, বিকল্প জীবিকার সংস্থান কী হবে— সেটাই সবচেয়ে বড় জিজ্ঞাসা ছিল মহম্মদবাজারের ডেউচা-পাঁচামির প্রস্তাবিত কয়লা খনি অঞ্চলে। মঙ্গলবার বিধানসভায় ওই কয়লা খনির জন্য ত্রাণ ও পুর্নবাসন প্যাকেজ বাবদ ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে বলে ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, বাড়ি-সহ জমি থাকলে জমিদাতা বিঘা প্রতি ১০-১৩ লক্ষ টাকা পাবেন। জমিদাতা পরিবারকে ক্ষতিপূরণের পাশাপাশি পরিবার পিছু এক জনকে (জুনিয়র কনস্টেবল পদে) চাকরি ও ৬০০ বর্গফুটের বাড়ি দেওয়া হবে। স্থানান্তরিত করার জন্য অতিরিক্ত ৫ লক্ষ টাকা দেওয়া হবে। খনি এলাকার খাদান ও ক্রাশার মালিক এবং ক্রাশার ও কৃষি শ্রমিকদের জন্যও পৃথক ক্ষতিপূরণের কথা বলা হয়েছে।

এলাকায় এই নিয়ে বিস্তর আলোচনা শুরু হলেও রাজ্য সরকার ঘোষিত প্যাকেজ নিয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দিতে রাজি হননি পাঁচামি পাথর শিল্পাঞ্চলে বসবাসকারী অধিকাংশ বাসিন্দাই। যাঁদের বড় অংশই আদিবাসী সম্প্রদায়ের। তাঁদের মতে, এখনও বহু প্রশ্নের উত্তর পাওয়া বাকি। জমিহীন দরিদ্র বাসিন্দাদের কী হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। দু’টি আদিবাসী সংগঠনের নেতার গলায় তেমনই সুর। গাঁওতা নেতা রবীন সরেন বলেন, ‘‘ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন প্যাকেজ ঘোষণার কথা শুনেছি। কিন্তু ভাগচাষি, বর্গাদার, পাট্টাদার এবং খাসজমিতে বসবাসকারী-সহ অন্যান্য প্রান্তিক মানুষের কী হবে, সেটা ধোঁয়াশায়। আমরা চাই উচ্ছেদ না-করেই সরকারি জমিতে খনি গড়ার কাজ শুরু হোক।’’

Advertisement

আদিবাসী সংগঠন ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহলের জেলা নেতা ঘাসিরাম হেমব্রমের দাবি, ‘‘এত দিন পর্যন্ত যেখানে কয়লা খনি হয়েছে, সেখানেই বঞ্চিত হয়েছেন আদিবাসী মানুষ। আমরা শিল্পের বিপক্ষে নই। তবে ঘোষিত প্যাকেজের বিষয়ে এলাকার মানুষকে সন্তুষ্ট করেই এগোতে হবে রাজ্য সরকারকে।’’ মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য এ দিনও আশ্বাস দিয়েছেন, স্থানীয় মানুষের আস্থা অর্জন করেই কাজ হবে।

প্যাকেজ ঘোষণাকে স্বাগত জানালেও বিজেপির বীরভূম জেলা সভাপতি ধ্রুব সাহার বক্তব্য, ‘‘ওই এলাকায় বসবাসকারী জনজাতি ও পিছিয়ে পড়া মানুষকে যথাথথ পুর্নবাসন না দিয়ে খনিতে হাত দিলে কিন্তু আন্দোলনের পথে হাঁটবে বিজেপি।’’

অন্য দিকে, তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল বলেন, ‘‘একটা প্যাকেজ ঘোষণা হয়েছে ১০ হাজার কোটি টাকার। এটা ডেউচার সব শ্রেণির মানুষের জন্য। কল্পনাতীত ভাল প্যাকেজ হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার এখনও এমন কোনও প্যাকেজ ঘোষণা করতে পারেনি, যা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় করে দেখিয়েছেন।’’ প্রস্তাবিত খনি এলাকায় বসবাসকারী সব মানুষের উন্নতি হবে বলেও তাঁর দাবি।

প্রশাসন সূত্রে জানা যাচ্ছে, প্রস্তাবিত কয়লা খনির জন্য প্রায় সাড়ে তিন হাজার একর জমিতে বসবাসকারী প্রায় ২০ হাজার মানুষকে সরাতে হবে। তার থেকেও বড় কথা, অবৈধ তকমা থাকলেও ওই তল্লাটে অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি পাথর খাদান ও ক্রাশার। সেই শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে যুক্ত হাজার হাজার মানুষ। খনি হলে তাঁদের পরিণতি কী হবে, দোলাচল রয়েছে সেটা নিয়েও। পাথর ক্রাশার সংগঠনের বীরভূম জেলা সভাপতি কমল খান বলছেন, ‘‘খনি হোক আমরাও চাই। কিন্তু যে শর্তে আমাদের সরতে হবে, সেটা যেন সম্মানজনক হয়। এখনই বলা সম্ভব নয় যে, এই চাই ওই চাই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন