স্কুলমুখী করতে অস্ত্র এ বার ডিজিটাল ক্লাস

পড়াশোনা হতে হবে  আনন্দদায়ক। স্কুলে পড়াশোনার পাশাপাশি পড়ুয়ারা শিখবে নাচ, গান, তিরন্দাজি। থাকবে স্মার্ট ক্লাসও। আকর্ষণীয় হবে মিড-ডে মিলের পদ। কোথায় অসুবিধা জানতে নিয়মিত শিক্ষক ও অভিভাবকের বৈঠক হবে।  

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মহম্মদবাজার শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০১৮ ০১:৫১
Share:

প্রতীকী ছবি।

পড়াশোনা হতে হবে আনন্দদায়ক। স্কুলে পড়াশোনার পাশাপাশি পড়ুয়ারা শিখবে নাচ, গান, তিরন্দাজি। থাকবে স্মার্ট ক্লাসও। আকর্ষণীয় হবে মিড-ডে মিলের পদ। কোথায় অসুবিধা জানতে নিয়মিত শিক্ষক ও অভিভাবকের বৈঠক হবে।

Advertisement

নানা কারণে ক্রমে কমছিল মহম্মদবাজারের পাথর শিল্পাঞ্চল এলাকার বেশ কিছু স্কুলে পড়ুয়াদের উপস্থিতির হার। তা রুখতে ওই এলাকার চিহ্নিত ২১টি স্কুলের পড়ুয়াদের জন্য এমন একগুচ্ছ ভাবনা নিয়েছিলেন উদ্বিগ্ন জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু। বুধবার মহম্মদবাজারের ভাড়কাঁটা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার এনামল হক মল্লিক প্রাথমিক স্কুল থেকেই সূচনা হল সেই নতুন ভাবনা— ‘আলোর পথে’।

এ দিন উপস্থিত ছিলেন মহকুমাশাসক (সদর) রাজীব মণ্ডল, সর্বশিক্ষা মিশনের প্রকল্প আধিকারিক বাপ্পা গোস্বামী, স্থানীয় বিডিও আশিস মণ্ডল, সহকারী বিদ্যালয় পরিদর্শক অনির্বাণ মুখোপাধ্যায় সহ প্রশাসনের একাধিক কর্তা। পরিকল্পনা সফল করতে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলেন ২১টি বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষিকারাও।

Advertisement

সমস্যা ঠিক কোথায় ছিল?

প্রশাসনিক ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মহম্মদবাজারের পাথর শিল্পাঞ্চলে সব চেয়ে বেশি ক্রাসার রয়েছে হিংলো ও ভাড়কাঁটা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়। মূলত ওই দু’টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার স্কুলগুলিতে হাজিরা কমছিল পড়ুয়াদের। অধিকাংশ স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা কাগজে কলমে যা রয়েছে, উপস্থিতির সংখ্যা তার অনেক কম হচ্ছিল।

পড়ুয়াদের উপস্থিতি কমার পিছনে কয়েকটি কারণ রয়েছে বলে জানায় প্রশাসন। সে সবের মধ্যে রয়েছে— প্রতিনিয়ত ভারী যানচলাচনের জন্য চলাচলের জন্য স্কুলের পথে দুর্ঘটনার ভয়, ছাত্রীদের কটুক্তি, দূষণ, ক্রাশারের কান ফাটানো আওয়াজ। তা ছাড়া বেশির ভাগ পড়ুয়াই ‘প্রথম প্রজন্মের পড়ুয়া’ হওয়ায় সন্তানদের স্কুলে পাঠানো নিয়ে অভিভাবকদের একটা বড় অংশের মধ্যে সচেতনতার অভাবও দায়ী। অনেক পড়ুয়াই একটু বড় হলেও পাথর শিল্পাঞ্চলের কাজে যুক্ত হওয়ার হাতছানিও রয়েছে। সেই জন্যই স্কুলে আসায় অনীহা।

শিক্ষক-শিক্ষিকার আরও একটা বিষয় অনুভব করছিলেন। তা হল, পড়ুয়ারা স্কুলে এলেও তাঁদের স্কুলে ধরে রাখা সমস্যা হচ্ছে। শিল্পাঞ্চলে শিক্ষার এমন সমস্যার সেই করুণ ছবি ধরা পড়ে শিক্ষা দফতর ও সর্বশিক্ষা অভিযানের তরফে এলাকায় সমীক্ষা চালিয়েও। তার পরেই ‘আলোর পথে’র পরিকল্পনা করেন জেলাশাসক।

মহকুমাশাসক ও সর্বশিক্ষা অভিযানের বীরভূম জেলার প্রকল্প আধিকারিকের কথায়, ‘‘প্রথম পরিকল্পনা পাঠদান আকর্ষণীয় করে তোলা। যে কারণে ডিজিটাল ক্লাস করানোর কথা ভাবা হয়েছে।’’ তিনি জানান, যে স্কুলে এ দিন তার সূচনা হল, সেখানে কম্পিউটার রয়েছে। যত দিন না পরিকাঠামো গড়ে উঠছে ওই কম্পিউটার ব্যবহার করে সপ্তাহে এক দিন যাতে অডিও-ভিজ্যুয়াল ক্লাস করানো যায়। রেমেডিয়াল টিচিং, স্বাস্থ্য শিবির, অভিভাবক-শিক্ষক সভা, পাঠ্যক্রম বহির্ভূত আনন্দদায়ক শিক্ষা, খেলাধুলো, গান-বাজনার পরিকাঠামো বাড়িয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের আকর্ষিত করার চেষ্টা । মিড ডে মিলের মান বাড়াতে ‘কিচেন গার্ডেন’ বা মাশরুম চাষে জোর দেওয়ার কথাও ভাবা হচ্ছে। যা সিদ্ধান্ত তা সবই জেলাশাসকের পরামর্শ মেনেই।

এতে কী লাভ হবে?

ভাঁড়কাটা এনামল হক মল্লিক প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক সোমনাথ দাস বলেন, ‘‘আমরা সঠিক পথে চলতে পারলে নিশ্চয়ই কাজ হবে। প্রশাসনের নির্দেশে কিছু ব্যবস্থা নেওয়ায় ইতিমধ্যেই ফল মিলতে শুরু করেছে।’’ মাসদুয়েক ধরে স্কুলে নাচ, গান ও তিরন্দাজি শেখানোর ব্যবস্থা করার পরে উপস্থিতির হার বাড়ছে বলে জানান সাগরবাঁধি প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক ধানো মুর্মূ, হুচুকপাড়া প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক মলয়কুমার মণ্ডল। তবে তাঁরা চাইছেন দ্রুত ডিজিটাল ক্লাস শুরু করা হোক প্রতিটি স্কুলে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন