ফেলে দেওয়া ‘দিশি’র বোতল কুড়োনোর ধুম

মহিলাদের বেআইনি চোলাইয়ের ঠেক ভাঙচুর করা এ রাজ্যে নতুন কিছু নয়। কিন্তু, এ বারে ‘অভিযান’ চলল পুরুলিয়া শহরের মাঝের একটি বিলিতি মদের দোকানে। তবে জনা তিরিশেক মহিলার আক্রোশ ছিল দিশি মদের উপরে। বিলিতি মদের বোতলগুলি পার পেয়ে গিয়েছে। রবিবার রাত তখন প্রায় ৯টা।

Advertisement

প্রশান্ত পাল

শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০০:৫০
Share:

অঙ্কন: সুমিত্র বসাক।

মহিলাদের বেআইনি চোলাইয়ের ঠেক ভাঙচুর করা এ রাজ্যে নতুন কিছু নয়। কিন্তু, এ বারে ‘অভিযান’ চলল পুরুলিয়া শহরের মাঝের একটি বিলিতি মদের দোকানে। তবে জনা তিরিশেক মহিলার আক্রোশ ছিল দিশি মদের উপরে। বিলিতি মদের বোতলগুলি পার পেয়ে গিয়েছে।

Advertisement

রবিবার রাত তখন প্রায় ৯টা। ছুটির দিন শেষ হওয়ার আগে পুরুলিয়া শহরের মাঝের পানশালাটি জমজমাট হয়ে উঠিছিল। হঠাৎ বাইরে থেকে ভেসে এল একটা শোরগোল। কৌতুহলী হয়ে জানলা দিয়ে উঁকি মারতে গিয়ে কর্মীরা দেখেন, এক দল মহিলা রেরে করে তেড়ে আসছেন পানশালার দিকেই। সঙ্গে সঙ্গে দুদ্দাড় শব্দে ঝাঁপ ফেলে দেওয়া হয় পানশালার পাশের অফশপটিতে।

প্রমীলা বাহিনী সেটির দিকেই তাক করে এসেছিল। কিন্তু দরজা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ফুঁসে ওঠেন জনা তিরিশেক মহিলা। পানশালার দরজা বন্ধ করার আগেই ভিতরে ঢুকে পড়েন। আঁচল কষে কোমরে গোঁজা। কারও কারও হাতে আবার লাঠি। টেবিলে যাঁরা জমিয়ে বসেছিলেন, সবার সান্ধ্য মৌতাত ততক্ষণে ছুটে গিয়েছে। তবে ধাক্কাটা অল্পের উপর দিয়েই যায়। পানশালার কর্মী ইন্দ্র মাহাতো বলেন, ‘‘টেবিল চেয়ার উল্টে হুমকি দিয়েই ওঁরা চলে গিয়েছিলেন। আলাদা করে বোতল ভাঙেননি।’’

Advertisement

তবে সেখানেই শেষ নয়। প্রমীলা বাহিনীর পরবর্তী গন্তব্য ছিল একটু দূরের একটি বিলিতি মদের দোকান। সেখানে যখন পৌঁছেছেন তারা, পিছনে জড়ো হয়েছে উৎসাহী জনতা। এ বারে আচমকা হানায় ঝাঁপ ফেলার সুযোগ পাননি ওই দোকানের কর্মীরা। যাঁরা মদ কিনতে এসেছিলেন, মহিলাদের মারমুখী রূপ দেখে তৎক্ষণাৎ পিঠটান দেন তাঁরা। দোকানটির দখল নিয়ে নেন মহিলারা। বিলিতি মদের বোতলে হাতও দেয়নি দলটি। বেছে বেছে দিশি মদের যত বোতল ছিল সব বের করে আছড়ে ফেলেন নালায়।

কিন্তু এ রকম হানা কেন? দোকানের কর্মীরা জানান, দলের কেউ তাঁদের কিচ্ছুটি না বললেও অনেকেই গজরাচ্ছিলেন, ‘‘বটে! এ সব গিলে আমাদের ঘরের লোক ফিরবে, আর আমদের সংসার ঠেলে মরতে হবে। দেখাচ্ছি মজা।’’ অল্পক্ষণের মধ্যেই সব লন্ডভন্ড করে ফিরে যায় দলটি।

সোমবার পুরুলিয়া শহরের ওই বিলিতি মদের দোকানের মালিক বিজয় গুপ্ত বলেন, ‘‘এত দিন দোকান চালাচ্ছি, এ রকম কখনও হয়নি। ৩৭৫ মিলিলিটারের শ’পাঁচেক বোতল ছিল। আধ লিটারের বোতল ছিল ২২০টা। সমস্ত ফেলে দিয়েছে। শো কেসের কাঁচ ভেঙে দিয়েছে।’’ ঘটনার পরে পুলিশ খবর পেয়ে দোকানে গিয়েছিল। তবে সোমবার পর্যন্ত থানায় কোনও অভিযোগ হয়নি। জেলা আবগারি দফতরের সহকারী সুপারিন্টেন্ডেন্ট অতীশ দাস বলেন, ‘‘ঘটনাটি শুনেছি। ওই মহিলাদের পরিচয় জানা যায়নি। গোটা ঘটনাটির ব্যাপারে দফতরের ওসিকে খোঁজ নিতে বলা হয়েছে।’’

তবে যে জন্য হামলা, সেই উদ্দেশ্য কি সফল হল? প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, শেষটায় গল্পটা একটু অন্য রকম হয়ে যায়। প্রমীলা বাহিনী ফিরে যাওয়ার পরে নালার ধারে ফের এক দফা ভিড় জমে ওঠে। তাঁদের মধ্যে কয়েক জন বলাবলি করছিলেন, ‘‘দাদা, আমরা জাতে মাতাল। প্লাস্টিকের বোতল যে আছড়ালে ভাঙে না, সে কথা কি আর জানি না!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement