পাঁচশো বছর ধরে চলে আসা মালিয়াড়া রাজবাড়ির দুর্গাপুজোকে ঘিরে আজও আবেগে মাতে বড়জোড়া

গত পাঁচশো বছরে বহু উত্থান-পতন দেখেছে মালিয়াড়া রাজবাড়ি। এক সময়ের বিশাল রাজপ্রসাদের ইট খসতে খসতে এখন তা প্রায় মিশে গেছে মাটিতে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০২৩ ২২:৪৩
Share:

—নিজস্ব চিত্র।

গত পাঁচশো বছরে বহু উত্থান-পতন দেখেছে মালিয়াড়া রাজবাড়ি। এক সময়ের বিশাল রাজপ্রসাদের ইট খসতে খসতে এখন তা প্রায় মিশে গেছে মাটিতে। রাজ্যপাট খুইয়ে মালিয়াড়া রাজপরিবারের অবস্থা এখন গ্রামের আর পাঁচটা পরিবারের মতোই। কিন্তু পুজো এলেই আজও এই রাজবাড়ি জানান দেয় তার অতীত ঐতিহ্য আর আভিজাত্য। পাঁচশো বছর পেরিয়েও যে পুজোর গরিমা ম্লান হয়নি এতটুকুও।

Advertisement

বাঁকুড়ার বড়জোড়া ব্লকের মালিয়াড়া রাজবাড়ির ইতিহাস বেশ পুরনো। কথিত আছে, স্বয়ং মুঘল সম্রাট আকবরের পাঞ্জা (নির্দিষ্ট এলাকায় শাসনের অধিকারনামা) নিয়ে দামোদর নদ পেরিয়ে বাঁকুড়ার মালিয়াড়া গ্রামে উপস্থিত হন কান্বকুব্জ (কনৌজ থেকে আসা) ব্রাহ্মন দেও অধুর্য। সে সময় দামোদরের পশ্চিম পাশ ছিল ঘন জঙ্গলে ঢাকা। জঙ্গলে ঘেরা ছোট ছোট গ্রামগুলি ছিল স্থানীয় আকুড়ে সম্প্রদায়ের দখলে। মালিয়াড়া গ্রামে পা দিয়েই সেই আকুড়েদের নিজের বশে এনে মালিয়াড়া রাজত্বের সূচনা করেন দেও অধুর্য। ধীরে ধীরে নিজের বুদ্ধিমত্তা ও ক্ষমতায় মালিয়াড়া রাজবাড়ির সীমানা ছড়িয়ে পড়ে পূর্বে দামোদর থেকে পশ্চিমে শালী নদী পর্যন্ত। কয়েকশো মৌজার হাজার হাজার বিঘে জমি মালিয়াড়া রাজপরিবারের অধিকারে আসে। রাজত্বের বিপুল আয়ে অল্প দিনেই ফুলেফেঁপে ওঠে রাজকোষ। মালিয়াড়া গ্রামে রাজার সুবিশাল প্রসাদ তৈরি হওয়ার পাশাপাশি রাজ প্রাসাদের অন্দরেই তৈরি হয় বিশাল দুর্গা দালান। কথিত আছে, রাজত্ব প্রতিষ্ঠার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই আজ থেকে প্রায় পাঁচশো বছর আগে রাজ পরিবারের দুর্গাদালানে মহা সমারোহে শুরু হয় দুর্গাপুজো। গোড়া থেকেই এই মন্দিরে অষ্টধাতুর মূর্তিতে পুজো চলে আসছে।

রাজ পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, মালিয়াড়া রাজপরিবারের মন্দিরে পুজো শুরু হয় মহালয়ার পরের দিন অর্থাৎ প্রতিপদ তিথিতে। সপ্তমী থেকে মন্দিরে শুরু হওয়া হোম একটানা চলে নবমীর দুপুর পর্যন্ত। অতীতে পুজোর প্রতিটি নির্ঘণ্ট তোপধ্বনীর সাহায্যে সূচিত হলেও বর্তমানে শুধুমাত্র অষ্টমী ও নবমীর সন্ধিক্ষণে তোপ দাগা হয়। রাজ্যপাট থাকাকালীন পুজোর কয়েকটা দিন ধরে রাজবাড়ির প্রাঙ্গনে হত বাইজি নাচ, রামলীলা, সংকীর্তন-সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান ।

Advertisement

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এখন পুজোর সেই জেল্লা-জমক অনেকটাই ফিকে হয়ে গেছে। রাজন্য প্রথা বিলোপের পর ক্রমেই অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে মালিয়াড়ার রাজপরিবার। বিশাল রাজপ্রাসাদ সংস্কারের অভাবে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। প্রাচীন মন্দিরে গা থেকে খসে পড়ছে পলেস্তরা। কিন্তু দুর্গাপুজার নিয়ম নিষ্ঠা ও আচারে এতটুকুও আঁচ পড়তে দেননি রাজ পরিবারের সদস্যেরা । মালিয়াড়া রাজবাড়ির সদস্য মেঘাদ্রি নারায়ন চন্দ্রাধূর্য বলেন, ‘‘পুজোতে আগে যে জৌলুস ছিল, এখন তার সিঁকি ভাগও নেই। কিন্তু পুজোর নিয়ম নিষ্ঠা আজও একই রকম আছে। সাম্প্রতিক কালে এলাকায় নতুন করে বহু পুজো শুরু হলেও রাজবাড়ির এই পুজোর আবেগ রীতিমতো তাড়া করে বেড়ায় এলাকার মানুষকে। পুজোর কয়েক দিন দূর-দূরান্তের বহু মানুষ ছুটে আসেন প্রাচীন এই মন্দিরে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement