Vendor

Coronavirus: মোটরবাইক ছেড়ে আবার ফেরিওয়ালার সঙ্গী সাইকেল

পাত্রসায়রের ফকিরডাঙা এলাকার বড় অংশের বাসিন্দাই ফেরিওয়ালা। স্থানীয়েরা জানান, সব মিলিয়ে সেখানে প্রায় ১৫০ জন ফেরিওয়ালা রয়েছেন।

Advertisement

তারাশঙ্কর গুপ্ত

পাত্রসায়র শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০২১ ০৬:৪৮
Share:

পসরা নিয়ে পথে। নিজস্ব চিত্র।

মাথায় ঝুড়িতে পসরা নিয়ে পাড়ায় পাড়ায় ঘোরা ফেরিওয়ালারা আবার ফিরেছেন। সঙ্গে সেই পুরনো হাঁক। কিন্তু কয়েকমাস আগেও তাঁদের অনেকেই মোটরবাইকে চেপে, ছোট সাউন্ড বক্সে গান বাজিয়ে জিনিসপত্র বিক্রি করতেন পাড়ায় পাড়ায়। বছর পাঁচেক হল ফেরিওয়ালারা সাইকেল ছেড়ে মোটরবাইক কিনেছিলেন। কিন্তু পেট্রোলের দাম বৃদ্ধিতে মোটরবাইক চড়া এখন তাঁদের কাছে বিলাসিতা হয়ে উঠেছে। তাই মোটরবাইক ছেড়ে কেউ সাইকেলে, আবার কেউ পসরার ঝুড়ি মাথায় তুলে নিয়েছেন।

Advertisement

পাত্রসায়রের ফকিরডাঙা এলাকার বড় অংশের বাসিন্দাই ফেরিওয়ালা। স্থানীয়েরা জানান, সব মিলিয়ে সেখানে প্রায় ১৫০ জন ফেরিওয়ালা রয়েছেন। মোটরবাইক কিনেই ফেরির কাজ শুরু করেছিলেন ফকিরডাঙার কালাম শা। বছর তিরিশের কালাম বলেন, ‘‘দশ বছর ধরে বড়জোড়ার বিভিন্ন গ্রামে ফেরি করছি। তখন পেট্রলের দাম ছিল লিটারে ৬০ টাকার নীচে। এখন বাইকে ফেরি করলে দিনের শেষে ১০০ টাকাও হাতে থাকে না। বাধ্য হয়েই বাসে করে বড়জোড়ায় গিয়ে মাথায় করে চাদর, মশারি ফেরি করছি।’’

গত ২০ বছর ধরে মাদুর, মশারি ফেরি করেন পাত্রসায়রের রসুলপুরের মুক্তার শেখ। বিষ্ণুপুর ও বাঁকুড়ার বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে ঘুরে তিনি জিনিসপত্র বিক্রি করেন। বছর পঞ্চাশের মুক্তার বলেন, ‘‘বছর তিনেক আগে কাজের সুবিধার জন্য একটি মোটরবাইক কিনেছিলাম। আগে সাইকেলের যত এলাকা যেতে পারতাম, বাইকে তার থেকে আরও বেশি গ্রামে বিক্রি করতে যাচ্ছিলাম। কিন্তু পেট্রলের দাম যা বেড়েছে, বাইক ঘরে রেখে আবার সাইকেলে ফেরি করতে হচ্ছে। রোজগারের বেশির ভাগ তেল কিনতে চলে গেলে খাব কী?’’

Advertisement

বাঁদলা গ্রামের বছর চল্লিশের শেখ লালু বলেন, ‘‘চার বছর আগে বাইক কিনেছিলাম। প্লাস্টিকের চেয়ার, ঝুড়ি বাইকে চাপিয়ে বাঁকুড়ার বিভিন্ন গ্রামে ফেরি করতাম। তেলের যা দাম বেড়েছে, দিনের শেষে ২০০ টাকাও থাকে না। বাধ্য হয়েই আবার সাইকেল বের করেছি।’’ মারুতি ভ্যান ভাড়া করে জামা-কাপড় ফেরি করতেন বাঁদলা গ্রামেরই লাল মিদ্যা। তিনিও সাইকেল বার করতে বাধ্য হয়েছেন। লাল বলেন, ‘‘আগে মারুতি ভ্যান দিনে ৭০০ টাকা ভাড়া নিত। এখন ১,২০০ টাকা চাইছে। ফেরি করে এত রোজগার হয় না।’’ ফেরিওয়ালাদের পাইকারি দরে মাল দেন ফকিরডাঙার স্বরূপ মিদ্যা। তিনি বলেন, ‘‘বাইক থাকলে অনেকটা এলাকা ফেরিওয়ালারা ঘুরতে পারেন। ব্যবসা বেশি হয়। চাহিদা কমেনি। কিন্তু বেশি এলাকা ঘুরতে না পারার কারণে ব্যবসা তলানিতে চলে এসেছে।’’

তেলের দাম বৃদ্ধি নিয়ে রাজনৈতিক নেতাদের চাপান-উতোর শুরু হয়েছে। যুব তৃণমূলের বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সুব্রত দত্ত দাবি করেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকারের ভুল নীতির কারণে বহু মানুষ রোজগার হারাচ্ছেন।’’ তা উড়িয়ে দিয়ে বিজেপির বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সুজিত অগস্তি বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার তেল থেকে সেস কমিয়ে নিক। তা হলেই দাম কমে যাবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন