বিষ্ণুপুরে প্রতারণার অভিযোগ হাওড়ার অঙ্কুরহাটির বৃদ্ধার, পুলিশই তাঁকে ঠাঁই দিল অন্য আরেকটি বৃদ্ধাবাস

বিজ্ঞাপন দেখে বৃদ্ধাশ্রমে কাজ করতে এসে এখন নিজেই আবাসিক

আশ্রয়স্থল হিসেবে যে বৃদ্ধাশ্রমকে বেছে নিয়েছিলেন, প্রতারিত হন সেখানেই। উল্টে অন্য একটি বৃদ্ধাশ্রমে ঠাঁই হল হাওড়ার অঙ্কুরহাটির এক বৃদ্ধার।খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছিল— বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরে একটি বৃদ্ধাশ্রম ও ধ্রুপদ চর্চা কেন্দ্রের দেখাশোর জন্য পিছুটানহীন একজন মহিলা দরকার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০১৭ ০১:২১
Share:

জীর্ণ: বিষ্ণুপুর বাইপাস এলাকায় এটাই নাকি সেই বৃদ্ধাশ্রম। নিজস্ব চিত্র

আশ্রয়স্থল হিসেবে যে বৃদ্ধাশ্রমকে বেছে নিয়েছিলেন, প্রতারিত হন সেখানেই। উল্টে অন্য একটি বৃদ্ধাশ্রমে ঠাঁই হল হাওড়ার অঙ্কুরহাটির এক বৃদ্ধার।

Advertisement

খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছিল— বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরে একটি বৃদ্ধাশ্রম ও ধ্রুপদ চর্চা কেন্দ্রের দেখাশোর জন্য পিছুটানহীন একজন মহিলা দরকার। অঙ্কুরহাটির একটি হোমের সুপারভাইজরের কাজ থেকে অবসর নেওয়া ৬০ বছর বয়সি নিঃসন্তান বিধবা চিত্রা দাশগুপ্ত সেই বিজ্ঞাপনের ফোন নম্বরে কথা বলে আশ্বস্থ হয়ে সটান তল্পিতল্পা নিয়ে সেখানে চলে আসেন। কিন্তু বিষ্ণুপুর বাইপাসের মহাপাত্র পাড়ার সেই ‘বৃদ্ধাশ্রম’ দেখে চোখ কপালে ওঠার জোগাড় হয় ওই বৃদ্ধার। মনে হয়েছিল, এখানে মানুষ থাকে না কি? কয়েকটা খুঁটির উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে জীর্ণ টিনের চালা। বুঝতে অসুবিধা হয় না, বিশ্বাস করে বড্ড ভুল করে ফেলেছেন। বিষ্ণুপুর থানায় তিনি ওই বৃদ্ধাশ্রমের বিজ্ঞাপনদাতা মানিক সাহার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করেন।

প্রতারণার পরে হতাশ চিত্রাদেবী। নিজস্ব চিত্র

Advertisement

বিষ্ণুপুর থানার অফিসারেরা সে দিনের মতো থানায় চিত্রাদেবীকে রাখেন। পরের দিন বিষ্ণুপুর ব্লকেরই ভড়া গ্রামে এক বেসরকারি বৃদ্ধাবাসে তাঁকে রেখে আসেন। গত ক’দিন ধরে সেখানেই তিনি রয়েছে। রবিবার সেই বৃদ্ধাবাসে বসে চিত্রাদেবী বলেন, ‘‘এখানে ১১ জন আবাসিকের সঙ্গে আমি বেশ আছি। কিন্তু মানিক সাহা আমাকে বড় ঠকালো। এসেছিলাম বৃদ্ধাশ্রমে কাজ করতে, এখন নিজেই বৃদ্ধাশ্রমের আবাসিক হয়ে গেলাম!’’ ভড়া গ্রামের বৃদ্ধাশ্রমটি যাঁরা চালান সেই গোরাপদ দে, বলাই গড়াইরা বলেন, ‘‘গত বুধবার বিষ্ণুপুর থানার আধিকারিকেরা চিত্রাদেবীকে দিয়ে যান। তবে বিজ্ঞাপনে বিভ্রান্ত না হলে আরও খোঁজ নিয়ে এখানে আসা উচিত ছিল। এখানে আমাদেরও আর্থিক অবস্থা ভাল নয়। তবে আমরা ঠিক করেছি, উনি যতদিন খুশি এখানেই থাকবেন।’’ চিত্রাদেবী বলেন, ‘‘আমার পরিবার-পরিজন কেউ নেই। স্বামীর চিকিৎসা করাতে নিঃশেষ হয়ে গিয়েছি। এখানকার আবাসিক ঊষা, কনক, অনিতা, ফটিকবাবুরা আমাকে আত্মীয়ের মতো ভালবাসছেন। তাই আমি এখানেই কোন কাজ করতে চাই।’’

এ দিকে বিষ্ণুপুরে বাইপাসের ধারে সেই ভাঙাচোরা ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে বিষ্ণুপুরের পর্যটকদের গাইড বলে পরিচিত মানিক সাহা দাবি করেন, ‘‘ওঁনাকে বলেছিলাম, এখানেই আমি বৃদ্ধাশ্রম করব, ধ্রুপদ চর্চা কেন্দ্র করব। ততদিন তাঁকে আমার কবরডাঙার বাড়িতে পেয়িং গেস্ট হয়ে থাকতে বলেছিলাম। কিন্তু তিনি মিথ্যা অভিযোগ ঠুকে দেওয়ায় আমাকে ক’টা দিন পুলিশের লকআপে কাটাতে হল।’’ যদিও ওই এলাকার বাসিন্দাদের অনেকেই জানিয়েছেন, আগেও ওইরকম বিজ্ঞাপনে কয়েকজনকে প্রতারিত হয়ে ফিরে যেতে দেখেছেন তাঁরা।

বিষ্ণুপুরের এসডিপিও লাল্টু হালদার বলেন, ‘‘ওই বৃদ্ধাকে একটা বৃদ্ধাশ্রমে রাখা হলেও আমরা তাঁর খেয়াল রাখছি। মানিক সাহাকে সতর্ক করে দিয়েছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন