রাস্তা আটকে দাঁতাল, সব্জি বোঝাই গাড়ি ফেলে দৌড়

মোটরবাইকে থলে ভর্তি সব্জি নিয়ে হাটে যাচ্ছিলেন এক যুবক। হঠাৎই নজরে আসে জঙ্গল লাগোয়া রাস্তার উপরে দাঁড়িয়ে মূর্তিমান বিভীষিকা। স্বয়ং দাঁতাল। বাগে পেলে পরিণতি কী হবে, সেই আশঙ্কায় হাত কেঁপে ওঠে। কোনওরকমে মোটরবাইক থেকে লাফ মারেন ওই যুবক।

Advertisement

স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০১৬ ০১:১৫
Share:

হামলার পরে নিজের মোটরবাইকের সামনে আক্ষেপ করছেন আহাম্মদ বায়েন।—শুভ্র মিত্র

মোটরবাইকে থলে ভর্তি সব্জি নিয়ে হাটে যাচ্ছিলেন এক যুবক। হঠাৎই নজরে আসে জঙ্গল লাগোয়া রাস্তার উপরে দাঁড়িয়ে মূর্তিমান বিভীষিকা। স্বয়ং দাঁতাল। বাগে পেলে পরিণতি কী হবে, সেই আশঙ্কায় হাত কেঁপে ওঠে। কোনওরকমে মোটরবাইক থেকে লাফ মারেন ওই যুবক। তারপর উল্টো দিকে লম্বা দৌড়। বস্তা ছিঁড়ে ততক্ষণে রাস্তায় গড়াগড়ি খাচ্ছে ঝিঙে, করলা, বেগুন, পটল। কয়েক হাজার টাকার মাল। কিন্তু সে দিকে নজর দিতে গেলে প্রাণ রক্ষা করাই দায়! তাই পিছু না ফিরে দৌড়, আর দৌড়।

Advertisement

বুধবার সকাল ৭টা নাগাদ বাসুদেবপুর বিট অফিসের কাছে কংসাবতী ক্যানালের রাস্তায় এই ঘটনাটি ঘটে। তবে আহাম্মদ বায়েন নামে মড়ার গ্রামের ওই যুবকের কোনও চোট লাগেনি। এ দিন সকালে তিনি এলাকার চাষিদের কাছ থেকে কেনা সব্জি নিয়ে জয়পুরের শ্যামনগরের হাটে যাচ্ছিলেন। রোজই তিনি ওই পথে যাতায়াত করেন। কিন্তু এমন অভিজ্ঞতা তাঁর আগে কখনও হয়নি। ঘটনার ঘণ্টাখানেক পরেও তাঁর শরীর যেন কাঁপছিল।

আহাম্মদের কথায়, ‘‘রাস্তা একেবারে সুনসান ছিল। মোটরবাইক নিয়ে তাই বেশ গতিতেই যাচ্ছিলাম। হঠাৎ দেখি একটা বিরাট হাতি রাস্তা আগলে দাঁড়িয়ে রয়েছে। সামনে সাক্ষাৎ যম দেখেই বুকটা ছ্যাঁৎ করে ওঠে। কোনও কিছু ভাবার অবকাশ পাইনি। কুড়ি-পাঁচিশ হাত দূরে হাতিটা ছিল। মোটরবাইক থেকে সোজা লাফ মারি। তারপর কোনও কিছু না দেখে রাস্তা থেকে উঠে দৌড় দিই।’’

Advertisement

এরপর তিনি রাস্তার পাশে একটি ঝোপে লুকিয়ে মোবাইলে গ্রামবাসীকে ডাকেন। তিনি জানান, গ্রামবাসীরা কিছু পরে এলেও হাতির কাছে ঘেঁষা যায়নি। হাতিটা তখন সামনে ছড়ানো কয়েক ক্যুইন্টাল তাজা সব্জি মনের সুখে খেয়ে যাচ্ছিল। আরও কিছু লোকজন জড়ো হতে গ্রামবাসী হাতিটিকে তাড়া করে। তাঁর দাবি, ভোজে বাধা পড়ায় হাতিটি বিরক্ত হয়ে ভারী পা দিয়ে মোটরবাইকটি তুবড়ে দেয়। বন কর্মীরা জানাচ্ছেন, কয়েকদিন আগে দ্বারকেশ্বর নদ পেরিয়ে দু’টি দাঁতাল পাঞ্চেত ডিভিশনের বিষ্ণুপুর রেঞ্জের বাসুদেবপুর বিটে এসেছে। বনকর্মীদের ধারনা, তাদেরই একটির এই কাণ্ড।

বিষ্ণুপুর পাঞ্চেতের ডিএফও অয়ন ঘোষও বলেন, ‘‘ওই এলাকায় দু’টি রেসিডেন্ট হাতি রয়েছে। তার মধ্যে কোনটির এমন কাণ্ড করেছে, তা বোঝার জন্য এলাকা থেকে পায়ের ছাপ সংগ্রহ করেছি আমরা।’’ ক্ষতিগ্রস্ত ওই সব্জি বিক্রেতাকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। বাসিন্দাদের দাবি, বিষ্ণুপুর ব্লকের বিভিন্ন গ্রামের মানুষ ওই ক্যানালের রাস্তা দিয়ে জয়পুরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। এমন চলতে থাকলে তাঁদের জীবনের নিরাপত্তা কোথায়? দ্রুত ওই এলাকায় ঘাঁটি গেঁড়ে বসে থাকা হাতি দু’টিকে সরানোর ব্যবস্থা করুক বন বিভাগ। ডিএফও আশ্বাস দিয়েছেন।

এ দিকে, পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতা থেকে বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের দিকে ঢুকতে চাওয়া ৪২টি হাতির দলে একটি ছোট্ট বাচ্চা রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। ফলে সেই বাচ্চাকে ঘিরে বিষ্ণুপুর পাঞ্চেত বন বিভাগের বাঁকাদহ রেঞ্জের লাগোয়া খড়িকাশুলি গ্রামের জঙ্গলে আটকে রয়েছে দলটি। বিষ্ণুপুর পাঞ্চেতের ডিএফও বলেন, ‘‘দিন দুয়েক বয়সের শাবকটির জন্য হাতির দলটি এখনও অবস্থান বদল করেনি। দুই জেলার সীমান্ত লাগোয়া খড়িকাশুলি গ্রামের জঙ্গলেই রয়ে গিয়েছে। এলাকাবাসীকে সতর্ক করে হাতির দলটির উপর নজরদারি চালানো হচ্ছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement