হাতির শুঁড়ের তলায় তখনও পড়ে সেই বাঁশ।—সুজিত মাহাতো
লোকালয়ের কাছে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হল একটি হস্তিনীর।
বন দফতরের অনুমান, বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে বছর তিরিশ-পয়ঁত্রিশের ওই হাতির। তবে ফসল বাঁচাতে বা লোকালয়ে হাতির উপদ্রব আটকাতে গ্রামবাসীর দেওয়া বিদ্যুৎবাহী তারের বেড়ায় নয়, বাঘমুণ্ডির পিড়রগড়িয়া গ্রামের অদূরে এ ক্ষেত্রে হস্তিনীটির মৃত্যু হয়েছে বিদ্যুৎবাহী তারের স্পর্শে।
বন দফতরের দাবি, ঝাড় থেকে বাঁশ ভাঙছিল ওই হাতিটি। সেই সময়ে কোনও ভাবে কাঁচা বাঁশের সঙ্গে উপরের হাই ভোল্টেজ বিদ্যুৎবাহী তারের স্পর্শ ঘটে। তাতেই বিপত্তি। মঙ্গলবার ভোরে হাতিটিকে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন গ্রামবাসী। দেহের পাশে একটি কাঁচা বাঁশও পড়েছিল।
পুরুলিয়ার ডিএফও কুমার বিমল বলেন, ‘‘বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে ওই হস্তিনীর। দেহটি ময়নাতদন্ত করানো হয়েছে। পরে জঙ্গলেই দেহটি দাহ করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।”
বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, কালীমাটি বিট এলাকায় পিড়রগড়িয়া গ্রামের অদূরে দুর্ঘটনাটি ঘটে। তপোবন মোড় থেকে একটি কাঁচা রাস্তা পিড়রগড়িয়া গ্রামের দিকে গিয়েছে। সেই রাস্তা থেকে কিছুটা দূরে জঙ্গলের প্রান্তে পড়েছিল হাতিটির দেহ।
সম্প্রতি ঝাড়খণ্ড থেকে সুবর্ণরেখা নদী পেরিয়ে ঝালদা এলাকায় ঢুকে পড়েছে ন’টি হাতির একটি দল। গত কয়েকদিন ধরে দলটি ঘাঁটি গেড়েছে বাঘমুণ্ডি-ঝালদা সীমানায় হেঁসলা পাহাড়ে। বন দফতরের দাবি, মৃত হস্তিনীটি ওই দলেই ছিল। ডিএফও বলেন, ‘‘সম্প্রতি ঝাড়খণ্ড থেকে সুবর্ণরেখা নদী পেরিয়ে ন’টি হাতির দলটি হেঁসলা পাহাড়ে আস্তানা নিয়েছে। পাহাড় থেকে দলটি নিচে নামে খাবারের খোঁজে। কচি বাঁশ হাতিদের প্রিয় খাবার। তাই ঝাড়ে ঢুকে বাঁশ ভেঙে খাবার সময়েই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে।’’
এ দিন ভোরে হাতিটিকে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় লোকজন বন দফতরকে খবর দেয়। ঘটনাস্থলে যান কালীমাটির বিট অফিসার মনোজ মল্ল। পরে ঘটনাস্থলে যান দুই এডিএফও রাজু রায় ও মানস ঘোষ। তবে স্থানীয় একটি সূত্রে জানা যাচ্ছে, বন দফতরের কর্মী ও স্থানীয় লোকজন ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগে মৃত হস্তিনীর দেহের অদূরে বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়েছিল হাতির দলটি। বিট অফিসার মনোজবাবু বলেন, ‘‘স্থানীয় লোকজন ভোরে হস্তিনীটির দেহের কিছু দূরে বাকি হাতিদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছিলেন। তবে লোকজনের ভিড় বাড়তেই দলটি গভীর জঙ্গলে ঢুকে পড়ে।’’
এ দিকে ‘হাতি ঠাকুরের’ মৃত্যু হয়েছে শুনে স্থানীয় পিড়রগড়িয়া, পেড়েতোড়াং, গাগী-সহ আশপাশের গ্রামের বহু লোকজন ঘটনাস্থলে আসেন। বাঘমুণ্ডি, ঝালদার মতো হাতি উপদ্রুত এলাকায় হাতিকে ঠাকুর জ্ঞানেই দেখেন গ্রামবাসী। মহিলাদের মৃত হাতিটিকে প্রণাম করতেও দেখা গিয়েছে। কয়েকজনকে আবার দেহটির অদূরে ধূপ, সিঁদুর রেখে পুজো করতে দেখা যায়। তবে বন কর্মীরা দেহের বেশি কাছে ঘেঁষতে দেয়নি বাসিন্দাদের।
অন্যদিকে, এ দিন সকালে হুড়া থানার জবড়রা গ্রামে বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে মারা গেল একটি পূর্ণবয়স্ক হনুমান। হুড়ার রেঞ্জ অফিসার দেবাশিষ ভঞ্জ জানান, গ্রামবাসীর কাছ থেকে খবর পেয়ে হনুমানটিকে পুরুলিয়ায় বন্যপ্রাণ পুনর্বাসন কেন্দ্রে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছিল। কিন্ত বাঁচানো সম্ভব হয়নি।