স্বনির্ভর দলের ঋণের জন্য বরাদ্দ অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠল স্বনির্ভর সঙ্ঘের এক নেত্রীর বিরুদ্ধে। ঘটনাটি আড়শা ব্লকের চাটুহাঁসা পঞ্চায়েত এলাকার। ব্লক প্রশাসন এই অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছে। যদিও তদন্তে ঢিলেমি হচ্ছে অভিযোগ তুলে পুরুলিয়া জেলা গ্রামোন্নয়ন শাখার আধিকারিকের দ্বারস্থ হয়েছেন ওই পঞ্চায়েত এলাকার বিভিন্ন স্বনির্ভর দলের সদস্যেরা। প্রাথমিক তদন্তে অর্থ তছরুপের সত্যতা মিলেছে বলেও প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে।
এক একটি পঞ্চায়েত এলাকায় বিভিন্ন স্বনির্ভর দল ও উপদলগুলিকে নিয়ে গড়া মহিলা স্বনির্ভর সঙ্ঘকে প্রশাসন ‘কমিউনিটি ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড’ থেকে অর্থ সহায়তা দেয়। প্রশাসন সূত্রের খবর, এই অর্থ তাদের আওতায় থাকা স্বনির্ভর দলগুলিকে বিভিন্ন সময়ে সঙ্ঘগুলি ঋণ হিসেবে দেয়। মূলত আর্থিক স্বনির্ভরতার লক্ষ্যেই দলগুলিকে এই ঋণ দেওয়া হয়। চাটুহাঁসা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার সঙ্ঘকে চলতি মার্চে প্রশাসন কমিউনিটি ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডে পাঁচ লক্ষ টাকা দিয়েছিল। সঙ্ঘের আওতায় থাকা বিভিন্ন স্বনির্ভর দলের নেত্রী ও সদস্যদের অভিযোগ, এই তহবিলের টাকা ব্যক্তিগত কাজে লাগিয়েছেন সঙ্ঘের নেত্রী সরস্বতী গরাঁই। তিনি শুধু সঙ্ঘনেত্রীই নন, এই পঞ্চায়েত এলাকায় কমিউনিটি সার্ভিস প্রোভাইডারের দায়িত্বও রয়েছে তাঁর কাঁধে।
এলাকার বিভিন্ন স্বনির্ভর দলের নেত্রী মীনারা বিবি, দীপালি মিশ্র, কৌশল্যা মিশ্র প্রমুখের অভিযোগ, ‘‘আমরা সকলেই সঙ্ঘের সদস্য। কিন্তু সঙ্ঘের অর্থ আমাদের ভুল বুঝিয়ে সরস্বতী গরাঁই আত্মসাৎ করেছেন। তিনি সঙ্ঘের তহবিলের অর্থ নিজের পারিবারিক ব্যবসায় কাজে লাগিয়েছেন।’’ মীনারা বিবির দাবি, সরস্বতীদেবী এবং সঙ্ঘ চালানোর দায়িত্ব যাঁদের হাতে রয়েছে, এ রকম কয়েক জনের সহায়তায় এই অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘সঙ্ঘনেত্রী বৈঠক ডাকলে অনেক সময়ই একাধিক সদস্যা উপস্থিত থাকতে পারেন না। অথচ দেখা যাচ্ছে, যাঁরা অনুপস্থিত ছিলেন তাঁদের সই পর্যন্ত জাল করা হয়েছে, যাতে মনে হয় তাঁরা বৈঠকে হাজির ছিলেন। বৈঠকের সেই কার্যবিবরণী অন্য সদস্যদের দেখিয়ে প্রভাবিত করে টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে।’’
ঘটনাটি নজরে আসার পরে আড়শা ব্লক প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ করা হয় চাটুহাঁসা এলাকার একাধিক স্বনির্ভর দলের পক্ষ থেকে। কিন্তু, সেই তদন্তে ঢিলেমি হচ্ছে, এই অভিযোগ তুলে বিভিন্ন ওই দলগুলির বেশ কিছু সদস্য বৃহস্পতিবার সরাসরি জেলা গ্রামোন্নয়ন শাখার আধিকারিকের দফতরের সামনে ধর্নায় বসে পড়েন।
পিসকাপাহাড়ির জিতমণি মুর্মু, নমিতা মুর্মু, রাধানগর গ্রামের জবা সিং সর্দার, পার্বতী মুর্মু, ধাদকিডি গ্রামের শকুন্তলা সোরেনদের মতো স্বনির্ভর দলগুলির সদস্যাদের অভিযোগ, তাঁদের অন্ধকারে রেখে সঙ্ঘের অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে। প্রশাসনকে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে হবে। স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য তথা স্বনির্ভর দলের সদস্য উর্মিলা মাঝির বক্তব্য, ‘‘একটা বিষয় স্পষ্ট, এই তছরুপ-কাণ্ড কারও একার পরিকল্পনা নয়। আরও কয়েক জন জড়িত। সকলের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নিতে হবে প্রশাসনকে।’’
যুগ্ম বিডিও (আড়শা) দীপক মাইতি অবশ্য বলেন, ‘‘ব্লক প্রশাসন অভিযোগের তদন্ত করছে। তদন্তে ঢিলেমির অভিযোগ ঠিক নয়।’’ জেলা গ্রামোন্নয়ন শাখার আধিকারিক সুভাষচন্দ্র বিশ্বাস জানান, অভিযোগটি স্বনির্ভর গোষ্ঠী বিষয়ক আধিকারিককে দেখতে বলা হয়েছে। জেলা স্বনির্ভর গোষ্ঠী বিষয়ক আধিকারিক অমল আচার্যকেও এ দিন চাটুহাঁসা পঞ্চায়েতের বিভিন্ন গ্রাম থেকে আসা স্বনির্ভর দলের সদস্যেরা ঘিরে ধরে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।
অমলবাবু বলেন, ‘‘অভিযোগের সত্যতা রয়েছে। দুই লক্ষের বেশি টাকা তছরুপ হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে।’’ তিনি জানান, তদন্তে জানা গিয়েছে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে ওই স্বনির্ভর সঙ্ঘের যে অ্যাকাউন্ট রয়েছে, সেখান থেকে সম্প্রতি দু’লক্ষেরও বেশি টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে স্বনির্ভর দলগুলিকে ঋণ দেওয়ার নামে। অথচ স্বনির্ভর দলগুলি সেই ঋণ পায়নি। অনেক দল ঋণের আবেদনও করেনি। অমলবাবুর কথায়, ‘‘ওই সঙ্ঘনেত্রীকে বলা হয়েছে, সাত দিনের মধ্যে টাকা ফেরত না দিলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি টাকা ফেরতের ব্যাপারে মুচলেকাও দিয়েছেন।’’
সরস্বতী গরাঁই নিজেও টাকা আত্মসাতের কথা মেনে নিয়ে বলেছেন, ‘‘আমি একা কোনও অর্থ সরাইনি। তবু আমাকে দোষী করা হলে আমি টাকা দিয়ে দেব। এর বেশি আমি আর কিছু বলব না।’’