Student

ছেলের ব্যাট জড়িয়ে ধরে কান্না থামছে না মায়ের

শুক্রবার দুপুরে বাড়ি ফেরার জন্য তিনি হাওড়া থেকে মালদহ-ইন্টারসিটি এক্সপ্রেসে উঠেছিলেন। ভিড় থাকায় দরজার কাছেই দাঁড়িয়েছিলেন ওই তরুণ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা 

নলহাটি শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০২০ ০৪:৩৫
Share:

শোকার্ত: শুভ্রজ্যোতির ব্যাট জড়িয়ে ধরে কান্না মায়ের। নিজস্ব চিত্র

মা মানতে পারছেন না ছেলে আর এই পৃথিবীতে নেই। ছেলের প্রিয় ব্যাট জড়িয়ে ধরেই কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন তিনি। সেই শুভ্রজ্যোতি পালের দেহ যখন শনিবার রাত পৌনে ১০টা নাগাদ নলহাটি থানার উজিরপুর গ্রামে এল তখন কান্নায় ভেঙে পড়ল গ্রাম।

Advertisement

শুক্রবার দুপুরে বাড়ি ফেরার জন্য তিনি হাওড়া থেকে মালদহ-ইন্টারসিটি এক্সপ্রেসে উঠেছিলেন। ভিড় থাকায় দরজার কাছেই দাঁড়িয়েছিলেন ওই তরুণ। সেই সময়ে মালপত্র রাখা নিয়ে দুই হকারের মারামারির জেরে ধাক্কা লেগে চলন্ত ট্রেন থেকে ছিটকে পড়েন ওই যুবক। মাথা ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত লেগেছিল তাঁর। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় শুভ্রজ্যোতির। বাড়ি আর ফিরতে পারেননি তিনি। ফিরেছে তাঁর দেহ।

শনিবার রাতে শুভ্রজ্যোতির নিথর দেহ যখন বাড়ির সামনে আসে, তখন গ্রামের ছোট থেকে বয়স্ক সকলের চোখে জল। গ্রামে শান্ত ও ভাল ছেলে বলে পরিচিতি ছিল তাঁর। সকলকে সম্মান দিয়ে কথা বলতেন শুভ্রজ্যোতি। শুক্রবার রাত্রে দুর্ঘটনার খবর পেয়ে গ্রামের বন্ধুরা আর কেউ বাড়ি যাননি। বন্ধুর মায়ের পাশে রয়েছেন তাঁরা।

Advertisement

শুধু গ্রামের মানুষের কাছে প্রিয় ছিলেন না তিনি, ছুটিতে বাড়ি এলেই পাশের বিভিন্ন গ্রামেও খেলতে চলে যেতেন শুভ্রজ্যোতি। তাই আশপাশের গ্রামের মানুষজনও রবিবার শুভ্রজ্যোতির পরিবারের পাশে দাঁড়াতে তাঁদের বাড়িতে যান।

কলকাতা, দিল্লি ও বহরমপুরের সব বন্ধু জঙ্গিপুরে শ্মশানে বন্ধুকে শেষ শ্রদ্ধা জানান। মা সবিতা পাল মানতেই পারছেন না দুর্ঘটনায় সব শেষ হয়ে গিয়েছে। আত্মীয়রা জানান, কখন তিনি বলছেন খোকা ফোন করছে, কেউ ফোনটি ধর। আবার কখন ছেলের খেলার জামা, কাপড় ও খেলার ব্যাটটি ধরে অঝোরে কাঁদছেন। শুভ্রজ্যোতির বাবার অবস্থাও একই। কথাই বলছেন না তিনি। সকলের থেকে দূরে থাকছেন।

শুভ্রজ্যোতির বন্ধু সায়ন পাল বলেন, ‘‘ছোট থেকে পড়াশোনায় ও খেলায় ভালো ছিল ও। গ্রামে ছুটিতে এলে সারাদিন আমার সঙ্গে সময় কাটাত। আমার বাড়ি হোক বা শুভ্রজ্যোতির বাড়ি আমরা সারাদিন এক সঙ্গে থাকতাম। তবে গল্প ও খেলা করলেও নিজের পড়াশোনার সময় কোনও গল্প হত না। আমাকে প্রায়ই বলত, মা বাবা আমার জন্য এত কষ্ট করছেন। নিজেরা না খেয়ে প্রতি মাসে আমার জন্য এত টাকা খরচা করছে। দেখবি আমি একদিন ডাক্তার হয়ে মা বাবাকে খুব সুখে রাখব। এই হকারদের জন্য সব শেষ হয়ে গেল।’’

শুভ্রজ্যোতির বাবা সমর পাল বলেন, ‘‘যাদের জন্য এই ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটল তাদের কঠোর শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। আমার ছেলে যে সকলের প্রিয় ছিল তা আমি অনুভব করেছি।’’ শনিবার সকালে ওই দুই হকারকে ব্যান্ডেল স্টেশন এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে রেল পুলিশ। তাঁদের বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত ভাবে মৃত্যু ঘটানোর মামলা দায়ের করা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন