কোনও ছুতমার্গ না রেখেই পঞ্চায়েত সমিতির বোর্ড গঠনে বিরোধীরা জোট গড়তে পারে। এই অবস্থায় ত্রিশঙ্কু অবস্থায় থাকা আটটি পঞ্চায়েত সমিতির বেশির ভাগ দখলে আসবে তো? সমিতির বোর্ড গঠন প্রক্রিয়া শুরুর আগে এই আশঙ্কাটাই ঘুরপাক খাচ্ছে শাসক শিবিরে।
আজ, মঙ্গলবার থেকে পুরুলিয়াতে শুরু হচ্ছে পঞ্চায়েত সমিতির বোর্ড গঠন। কাশীপুর বাদ দিয়ে বাকি ১৯টি সমিতিতে ধাপে ধাপে মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বোর্ড গঠনের প্রক্রিয়া চলবে। কিন্তু, ত্রিশঙ্কু অবস্থায় থাকা সমিতিগুলিতে কী হবে সেটা জানতেই আগ্রহী সমস্ত দলেরই কর্মী, সমর্থকরা। শাসকদল অবশ্য দাবি করছে, ত্রিশঙ্কু অবস্থায় থাকা সমিতিগুলিতে শেষ রাতে ‘ওস্তাদের মার’ দেবে তারা। তার আঁচ পেয়ে বিরোধী বিজেপি ও কংগ্রেসের নেতারা একপ্রকার স্বীকার করে নিচ্ছেন, তৃণমূলকে আটকাতে নীচুতলায় সমঝোতার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে।
পঞ্চায়েতের ফলাফলের নিরিখে পুরুলিয়ার ২০টির মধ্যে নয়টি সমিতি ত্রিশঙ্কু অবস্থায় ছিল। তার মধ্যে সাঁতুড়িতে সিপিএমের এক সদস্য বিজেপিতে যোগ দেওয়ায় ওই সমিতি ত্রিশঙ্কু থেকে বিজেপির দিকে ঝুঁকেছে। কিন্তু, বাকি আটটি সমিতিতে বড় মাপের দলবদল হয়নি। ফলে একই অবস্থায় রয়ে গিয়েছে বরাবাজার, পুরুলিয়া ২, বাঘমুণ্ডি, আড়শা, ঝালদা ১ ও ২ সহ জয়পুর, পাড়া পঞ্চায়েত সমিতি। এই সমিতিগুলির কোনওটিতেই একক ভাবে বোর্ড গড়ার মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই কোনও দলের।
ঘটনা হল, ঝুলে থাকা সমিতিগুলির বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তৃণমূল না বিজেপি— কারা বোর্ড গড়বে সেটা নির্ভর করছে অপর দুই বিরোধী দল কংগ্রেস ও বামফ্রন্টের সমর্থনের উপরে। বরাবাজারে যেমন কংগ্রেসের এক জন সদস্য আছেন। সেখানে তাঁর সমর্থনের উপরেই নির্ভর করছে বোর্ড কারা গড়বে। একই ভাবে পুরুলিয়া ২, আড়শা, বাঘমুণ্ডি, জয়পুর ও পাড়াতে তৃণমূল না বিরোধী বিজেপি কারা বোর্ড গড়তে পারবে কিনা নির্ভর করছে, কংগ্রেস ও বামফ্রন্ট তথা সিপিএমের সমর্থনে। ঝালদা ১ ও ২ ব্লকে কংগ্রেস বোর্ড গড়তে পারবে কি না নির্ভর করছে বিজেপি বা বামফ্রন্টের উপরে।
জেলার রাজনৈতির খবর রাখেন এমন অনেকেই জানাচ্ছেন, ত্রিশঙ্কু অবস্থায় থাকা আটটি সমিতিতে বোর্ড গঠনে অন্য কোনও দলের সমর্থন নিতেই হবে তৃণমূল, বিজেপি বা কংগ্রেসকে। আর এই প্রেক্ষিতেই প্রশ্ন উঠছে, রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা সরিয়ে রেখে অন্য দলের সমর্থন তিন দল নেবে কি না! তবে ঘটনা হল, পঞ্চায়েতের মতো স্থানীয় স্তরের নির্বাচনে ও বোর্ড গঠনে কেন্দ্র বা রাজ্যস্তরের রাজনৈতিক সমীকরণ অনেকটাই কাজ করে না। গ্রাম পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠনে দেখা গিয়েছে, পাড়াতে তৃণমূলের সমর্থন নিয়ে বোর্ড গড়েছে সিপিএম। আবার ঝালদায় তৃণমূলকে সমর্থন করেছে কংগ্রেসের সদস্যরা।
সেই বিষয়টি মনে করিয়ে কংগ্রেসের জেলা সভাপতি তথা বাঘমুণ্ডির বিধায়ক নেপাল মাহাতো বলেন, ‘‘যেখানে কংগ্রেস সংখ্যাগরিষ্ট আসন পেয়েছে, সেখানে আমরাই সমিতিতে সভাপতি ও সহ সভাপতি পদে প্রার্থী দেব।’’ অন্য ক্ষেত্রে কী হবে? নেপালবাবুর জবাব, ‘‘আমাদের ঘোষিত নীতি হল বিজেপি ও তৃণমূলের সঙ্গে সম দূরত্ব বজায় রাখা। প্রয়োজনে বামফ্রন্টের সমর্থন নেব আমরা।’’
বিজেপির জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘পুরুলিয়ায় গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে তৃণমূল। সেই তৃণমূলকে আটকাতে নিচুতলার কর্মীরা চাইছেন বিরোধী ঐক্যকে শক্তিশালী করতে।” কী পরিকল্পনা? রাখঢাক না রেখেই বিদ্যাসাগবাবু জানাচ্ছেন, নীতিগত ভাবে তাঁরা কংগ্রেসের বা সিপিএমের সমর্থন নেবেন না। তবে নিচুতলার কর্মী-সমর্থকেরা কী চাইছেন— তা দেখেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সেটা জানিয়ে রাখছেন কংগ্রেস-বিজেপির জেলা নেতারা।
বিজেপি, কংগ্রেসের মনোভাব বুঝে তৃণমূলের জেলাস্তরের এক শীর্ষ নেতা মেনে নিচ্ছেন, যে ভাবে নিচুতলায় বিজেপি, কংগ্রেসের কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ মনোভাব নিয়ে চলছেন তাতে বরাবাজার বাঘমুণ্ডি, জয়পুর, ঝালদা ১ ও ২ ব্লক, আড়শাতে বোর্ড গঠন করা খুব একটা সহজ হবে না। তৃণমূলের জেলা সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো অবশ্য বলেন, ‘‘ঝুলে থাকা সমিতিগুলির বেশিরভাগই আসবে আমাদের দিকে।”