দুই জায়ের মুখোমুখি লড়াইয়ে সরগরম ঝালদার ভোটযুদ্ধ। শহরের ২ নম্বর ওয়ার্ডে লড়ছেন একই পরিবারের দুই জা। ঝালদার কান্দু পরিবারের মেজ জা বাবি কান্দু প্রার্থী হয়েছেন কংগ্রেসের আর ছোট জা পূর্ণিমা কান্দু দাঁড়িয়েছেন ফরওয়ার্ড ব্লকের হয়ে।
পূর্ণিমাদেবীর স্বামী তপন কান্দুকে অবশ্য ঝালদাবাসী আরও বেশি করে চেনেন। দীর্ঘদিনের বামকর্মী তপনবাবু এই ওয়ার্ড থেকে অতীতে জিতে ঝালদার পুরপ্রধানও হয়েছিলেন। তিনি নিজে এ বার ১২ নম্বর ওয়ার্ডে ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রার্থী হয়েছেন।
গতবার বামেরা তাদের সমর্থিত নির্দলকে নিয়ে সংখ্যা গরিষ্ঠতা অর্জন করে পুরসভার ক্ষমতা দখল করে। কিন্তু বছর খানেক পরেই অনাস্থায় তাদের ক্ষমতা হাতছাড়া হয়। ঝালদার ১২টি আসনের মধ্যে সিপিএম ৪, ফরওয়ার্ড ব্লক ২ ও বাম সমর্থিত নির্দল ১ জন। সব মিলিয়ে বামেদের ৬টি আসন থাকলেও আর ক্ষমতায় ফিরতে পারেনি বামফ্রন্ট। এই আবহেই ফরওয়ার্ড ব্লকের ঝালদা লোকাল কমিটির সদস্য তপনবাবু এ বার নিজে প্রার্থী হয়েছেন। প্রার্থী করেছেন তাঁর স্ত্রীকেও। তিনি নিজে ঝালদার রাজনীতিতে পোড়খাওয়া রাজনীতিক হলেও সংসারের চৌহদ্দি থেকে তাঁর গিন্নি এ বারই ভোটের ময়দানে প্রথম পা ফেলছেন।
পূর্ণিমাদেবীর কথায়, ‘‘স্বামী রাজনীতির জগতের মানুষ। আমার সঙ্গে অবশ্য রাজনীতির সঙ্গে এতদিন সরাসরি যোগাযোগ ছিল না। বাড়িতে দলের লোকজনের আসাযাওয়া ছিল। কর্মীরা আমাকে বৌদি বলে ডাকেন। তাদের অনুরোধ বা চাপেই আমি এ বার ভোটে লড়তে রাজি হয়ে গেলাম।’’ তাঁর বিরুদ্ধে যে তাঁর দিদিভাই অর্থাৎ মেজ জা প্রার্থী হচ্ছেন তা অবশ্য আগাম জানা ছিল পূর্ণিমাদেবীর।
উল্টোদিকে ছোট জায়ের বিরুদ্ধেই যে তাঁকে প্রার্থী করা হচ্ছে তা ঘুণাক্ষরেও জানতে পারেননি মেজ জা বাবিদেবীও। ফলে বেশ কিছুদিন আগে থেকেই তাঁরা যে যাঁর মতো করে প্রচারের ও ভোটযুদ্ধের কৌশল সাজিয়েছেন। পূর্ণিমাদেবী যেমন নিজে থাকেন ১২ নম্বর ওয়ার্ডে, প্রার্থী হয়েছেন ২ নম্বর ওয়ার্ডে। আবার বাবিদেবী নিজে ২ নম্বর ওয়ার্ডেরই বাসিন্দা। পূর্ণিমাদেবীর স্বামী তপনবাবু নিজে ২০০৫ সালে এই ওয়ার্ড থেকে জয়ী হয়ে পুরপ্রধান হয়েছিলেন। গতবারও এই আসনটি জিতেছিল ফরওয়ার্ড ব্লক। ফলে এই ওয়ার্ডে যুদ্ধজয়ের কৌশল সব তপনবাবুর নখদর্পনে। যে কারণে এই আসনে প্রার্থী হওয়ার আগে দু’বার ভাবেননি পূর্ণিমাদেবী। তপনবাবুর কথায়, ‘‘এই আসনে আমাদের ভালই সমর্থন রয়েছে। তার উপরে আমি নিজে ১২ নম্বর ওয়ার্ড থেকে লড়লেও এখানে পড়ে রয়েছি।’’
তপনবাবুর দাদা দীর্ঘদিনের কংগ্রেস ঘরানার মানুষ নরেন কান্দু বলছেন, ‘‘সকাল-বিকেল পাড়ায় পাড়ায় ঘুরছি। আমার স্ত্রীর সঙ্গে পাড়ার মহিলা-সহ সকলেরই যোগাযোগ রয়েছে। আমরা তো এই পাড়ারই লোক।’’ তাঁর কথায় কোথায় যেন বিপক্ষ প্রার্থীকে ‘বহিরাগত’ বলে কটাক্ষ করার ইঙ্গিত খুঁজে পাচ্ছেন এলাকার রাজনীতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল লোকজন। তাঁরা অবশ্য এ নিয়ে কথা বাড়াতে চান না। বাবিদেবী বলেন, ‘‘এটা আমাদের দু’টি দলের নীতিক লড়াই। ব্যক্তিগত সম্পর্কে এর প্রভাব পড়বে না।’’ তিনি জানান, ক’টা দিন আলু সিদ্ধ আর ভাত খেয়েই প্রচার করেছি। কখনও সখনও কর্মীদের বাড়িতেই খাওয়া দাওয়া হয়েছে।’’ তাঁদের ছেলে এ বার মাধ্যমিক দিয়েছে। সেও প্রচারে মাকে সাহায্য করছে।
অন্যদিকে, তপনবাবুরা কর্তা-গিন্নি দু’জনেই প্রার্থী। ফলে তার প্রভাব পড়েছে সংসারেও। রান্নাবান্নার পাট আপাতত তাঁদের চোকাতে হয়েছে। জায়ের সঙ্গে সম্পর্কে এর প্রভাব পড়বে না? পূর্ণিমাদেবী বলেন, ‘‘উনি আমার জা। কিন্তু এটা তো নীতির লড়াই হচ্ছে।’’ কী বলছেন ওয়ার্ডের ভোটারেরা? দুই জায়ের লড়াই অবশ্য তাঁরা চুটিয়ে উপভোগ করছেন। এই ওয়ার্ডের বাসিন্দা রাজীব দাস, দীনেশ সূত্রধর প্রমুখ বলেন, ‘‘দু’জনেই আমাদের ভোট দেওয়ার অনুরোধ করেছেন। দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কে জেতেন।’’