তখনও জ্বলছে খড়ের চাল। ছবি: পাপাই বাগদি
বাড়ির বড় ছেলের বিয়ে উপলক্ষে আনা হয়েছিল নতুন সিলিন্ডার। বিয়ের দু’দিন আগে, বুধবার সেই সিলিন্ডার থেকে গ্যাস-লিক করে ভস্মীভূত হয়ে গেল বাড়ি। আগুনের হাত থেকে বাঁচানো যায়নি বিয়ের পাত্রীর বেনারসিটুকুও। ঘটনাটি ঘটেছে সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ বীরভূমের মহম্মদবাজার ব্লকের ডেউচা গ্রামের বাসিন্দা বিদ্যাধর বরাটের বাড়িতে। এই ব্লকের ভুতুরা পঞ্চায়েতের খয়রাকুড়ি গ্রামেও চা করতে গিয়ে কোনও ভাবে গ্যাস লিক করে পুড়ে গিয়েছে সুধীর বাগদির খড়ের চালের মাটির বাড়ি। দুটি ক্ষেত্রেই আগুন নেভাতে স্থানীয়েরা হাত লাগান। পরে দমকল এসে আগুন নেভায়।
স্থানীয়েরা জানান, দু’টি ঘটনাতেই খড়ের ছাউনি থাকায় আগুন ছড়ায় দ্রুত। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, বিদ্যাধরবাবু নিজেই নতুন গ্যাসের সঙ্গে ওভেন লাগিয়ে আগুন জালাতে যান। তখনই ঘটে যায় দুর্ঘটনা। শুক্রবার বড়ো ছেলে গৌরীশঙ্করের বিয়ে। তার প্রস্তুতি প্রায় শেষের দিকে। আর তার মধ্যে এমন ঘটনায় ভেঙে পড়েছেন পরিবারের সকলে। বিদ্যাধরবাবু পেশায় সেচ দফতরের কর্মী। এ দিন তাঁর বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, এক দিকে চলছে বিয়ের প্যান্ডেল তৈরির কাজ। অন্য দিকে বিয়ের প্রস্তুতি। বিদ্যাধরবাবুর কথায়, ‘‘নতুন গ্যাস এবং ওভেন লাগানোর পরে দেশলাই জ্বালাই। তখনই হঠাৎ আগুন ধরে যায় গ্যাসের সিলিন্ডারে। দ্রুত আগুন ছড়ায় বাড়িতে। বালতি করে জল দেওয়ার পরেও নেভানো যায়নি আগুন। ফলে সব কিছু পুড়ে যায়। এখন বুঝে উঠতে পারছি না কী করব।’’
পরিবার সূত্রের খবর, বিয়ের জন্য ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নেওয়া হয়েছিল। কেন হয়েছিল নতুন বউয়ের বেনারসি, আসবাব। সবই কম, বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ দিকে, আগুন লাগার খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ছুটে আসেন গ্রামের অনেকে। সকলে মিলে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেও তেমন কিছু করতে পারেননি। দমকল বাহিনী এসে ঘণ্টাখানেকের চেষ্টায় আগুন নেভায়। আগুন নেভাতে গিয়ে চোট পেয়েছে বাড়ির ছোট ছেলে শুভঙ্কর বরাট। তাঁকে সিউড়ি সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।
অন্য ঘটনাটি ঘটেছে মহম্মদবাজার ব্লকের ভুতুরা পঞ্চায়েতের খয়রাকুড়ি গ্রামে। মাটির তৈরি খড়ের ছাউনি দেওয়া বাড়িতে আগুন জ্বলছে দেখে বুধবার সাত সকালেই ছুটে এসেছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। বাড়ির মালিক সুধীর বাগদি জানান, সকালে স্ত্রী বাড়ির কাজে ব্যস্ত ছিলেন। এই অবস্থায় তিনি নিজেই গ্যাস ধরিয়ে চা করতে যান। সুধীরবাবুর কথায়, ‘‘যেই দেশলাই কাঠি জ্বালিয়েছি, অমনি পুরো বাড়িতে আগুন লেগে যায়।’’ স্থানীয় বাসিন্দারা ছুটে এসে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। ফোন করা হয় দমকলকে। কিছু সময় পরেই আসে দমকলের দুটি ইঞ্জিন। তার পরেই আগুন নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। ততক্ষণে সব পুড়ে ছাই।
প্রাথমিক তদন্তে দমকলের অনুমান, দু’টি ক্ষেত্রেই গ্যাস লিক করে আগুন লেগেছে। সুধীরবাবুর দাবি, ‘‘বাড়ির জামাকাপড় থেকে আসবাব সব পুড়ে গিয়েছে। অবশিষ্ট আর কিছু নেই।’’ কিছু দিন আগে ভুতুরা পঞ্চায়েতের সেহেড়াকুড়িতে গ্যাস সিলিন্ডার ফেটে মৃত্যু হয় এক মহিলার। আহত হন কয়েকজন। তার পরেই জোড়া ঘটনা। এই
আবহে রান্নার গ্যাসের ব্যবহার বিধি নিয়ে কর্মশালা করার প্রস্তাব রেখেছেন অনেকেই। বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে বলেও খবর।