সমাধিক্ষেত্র: সুইসার আশ্রমে শুক্রবার। —নিজস্ব চিত্র।
প্রতি বছর জানুয়ারিতে সুইসার আশ্রমে এসে কিছু দিন থাকতেন অশোক ঘোষ। তাঁকেও আসার জন্য অনেকবার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। শুক্রবার সেই আশ্রমে দাঁড়িয়ে রাজ্য বামফ্রন্টের আহ্বায়ক বিমান বসুর গলায় ঝরে পড়ল আক্ষেপ। তিনি বলেন, ‘‘এই নিয়ে দু’ বার এলাম। কিন্তু অশোকদা বেঁচে থাকতে আসা হল না। এই দুঃখ আমার যাবে না।’’
শুক্রবার ছিল অশোক ঘোষের প্রথম প্রয়াণ বার্ষিকী। সুইসার আশ্রমে সমাহিত জননেতার স্মরণে এ দিন বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন অনেক সাধারণ মানুষও। বাঘমুণ্ডির সারিডি গ্রামের ষাটোর্ধ্ব কালিদাস মাহাতো, আড়শার হেঁসলার প্রহরী মাহাতোরা বলেন, ‘‘উনি আমাদের গ্রামে গিয়ে স্কুলের জন্য মিটিং করেছিলেন।’’ পুরুলিয়ার এই সমস্ত এলাকায় এক সময়ে জোরদার সংগঠন ছিল ফরওয়ার্ড ব্লকের। সেই সংগঠনে চিড় ধরে রাজ্যে পালাবদলের পরে। এই পরিস্থিতিতে প্রয়াত নেতার আদর্শ তুলে ধরে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে দল। তবে এ দিন স্মরণ অনুষ্ঠানে যতটা লোক হবে বলে আশা করেছিলেন ফরওয়ার্ড ব্লক নেতৃত্ব, ততটাও ভিড় চোখে পড়েনি।
পুরুলিয়ার বঙ্গভুক্তির পরে জেলার দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের মানুষের বঞ্চনা ও অধিকারের অন্দোলনের সূত্র ধরে অশোক ঘোষের সঙ্গে যোগসূত্র গড়ে উঠেছিল, সেই কথাই ঘুরে ফিরে উঠে আসে অনেকের কথায়। হেমন্ত বসুকে নিয়ে অশোক ঘোষের সুইসায় নেতাজি সুভাষ আশ্রম গড়ার ইতিহাসের কথা বলেন ফরওয়ার্ড ব্লকের সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘‘জন্য অশোকদার লড়াই সামনে রেখে এই এলাকার মানুষ জমন কুইরিকে প্রথম বিধায়ক নির্বাচন করেন।’’ সেই লড়াইয়ের কথা বর্তমান প্রজন্মের সামনে তুলে ধরার আহ্বান জানান দেবব্রতবাবু।
এ দিনের স্মরণ অনুষ্ঠানে সিপিআইয়ের তপন গঙ্গোপাধ্যায়, পিডিএসের নটবর বাগদি, ফব-র রাজ্য সভাপতি বরুণ মুখোপাধ্যায়, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বীরসিংহ মাহাতোর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন তৃণমূলের নবেন্দু মাহালিও। সমাধিস্থলে অশোক ঘোষের একটি আবক্ষ মূর্তির আবরণ উন্মোচন করেন দেবব্রতবাবু। তিনি বলেন, প্রতি বছরই এখানে অশোকদার প্রয়াণ দিবস পালিত হবে।