বন্ধ রেলগেট। শম্বুক গাতিতে যাচ্ছে মালগাড়ি। ততক্ষণে গেটের দু’পাশে সার সার আটকে পড়েছে অন্যান্য গাড়ি। কখনও মুমূর্ষু রোগী নিয়ে অ্যাম্বুল্যান্স, কখনও বা আগুন নেভাতে বের হওয়া দমকলের ইঞ্জিনও আটকে থাকে আদ্রার রেলগেটে। দীর্ঘদিনের এই দুর্ভোগ থেকে এ বার মুক্তি পেতে চলেছেন বাসিন্দারা। রেলগেটের কাছেই বহু প্রতীক্ষিত উড়ালপুল (রোডওভার ব্রিজ) তৈরি করতে চলেছে রেল।
প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে বলে রেলের দাবি। ইতিমধ্যেই প্রস্তাবিত উড়ালপুলের জায়গায় মাটি পরীক্ষা করা হয়েছে। ডিআরএম (আদ্রা) শারদকুমার শ্রীবাস্তব বলেন, ‘‘ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই মাটি পরীক্ষার রিপোর্ট চলে আসবে। আগামী বছরের গোড়ার দিকে উড়ালপুল তৈরির জন্য দরপত্র আহ্বান করা হবে।”
রেলশহর আদ্রাকে মাঝামাঝি ভাগ করেছে রেললাইন। তাই কাশীপুর মোড়ের অদূরে এই রেলগেট দিয়ে আদ্রার বাসিন্দারা তো বটেই, আশপাশের গ্রামাঞ্চলের বহু মানুষ যাতায়াত করেন। ওই রেললাইনে দৈনিক প্যাসেঞ্জার ও এক্সপ্রেস মিলিয়ে একশোটি ট্রেন চলাচল করে। এ ছাড়া রয়েছে মালগাড়ি। ফলে দিনের বেশির ভাগ সময় ট্রেন ও মালগাড়ি যাতায়াতের জন্য ওই রেল গেট বন্ধই থাকে। কাশীপুর থেকে আদ্রা হয়ে রঘুনাথপুর যাওয়ার রাস্তার উপরে রেলগেট বন্ধ থাকায় প্রতি দিনই ভোগান্তির শিকার হন বহু মানুষ। এমনকী বন্ধ রেলগেটে আটকে দমকলের ইঞ্জিন আগুন নেভাতে যেতে পারেনি, এমন নজিরও রয়েছে। তাই বিভিন্ন মহল থেকে কয়েক দশক ধরেই আদ্রার রেলগেটের উপরে উড়ালপুল তৈরির দাবি উঠছিল। রেলের কর্মী সংগঠনগুলিও এ নিয়ে সরব হয়েছিল। কিন্তু নিয়মের গেরোয় রেল সেই দাবি পূরণ করতে পারেনি।
এ বার শিকে ছিঁড়েছে। এত দিন রেল উড়ালপুলের জন্য অর্ধেক খরচ দিতে আগ্রহী হলেও রাজ্য সরকার বাকি অর্ধেক খরচ দেওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক বার্তা দিচ্ছিল না বলে অভিযোগ। তাই আদ্রার উড়ালপুল তৈরির প্রস্তাব ঝুলে ছিল। এ বার রেল জানিয়েছে, তারাই পুরো খরচ দিয়ে উড়ালপুল তৈরি করবে। রেলের দক্ষিনপন্থী কর্মী সংগঠন অবশ্য দাবি করেছে, রেল প্রতিমন্ত্রী থাকার সময়ে অধীর চৌধুরীও আগে আদ্রায় এসে জানিয়েছিলেন, রেল একাই উড়ালপুল তৈরি করবে। তারপরেই রেল বাজেটে আদ্রার উড়ালপুল তৈরির জন্য সামান্য কিছু অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছিল।
রেল সূত্রের খবর, রেলের নির্মাণ বিভাগের তত্ত্বাবধানে উড়ালপুল তৈরির জায়গায় মাটি পরীক্ষা করা হয়। ডিআরএম বলেন, ‘‘উড়ালপুল তৈরির জন্য প্রায় ৫৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে রেল। মাটি পরীক্ষার রিপোর্ট পেলেই নকশা তৈরি করে উড়ালপুল তৈরির জন্য দরপত্র আহ্বান করা হবে।” পুরো প্রক্রিয়া দু’-তিন মাসের মধ্যে শেষ হয়ে বলে তিনি আশাবাদী।
কিছু কাজ করতে হবে রাজ্যের পূর্ত দফতরকে। ডিআরএম বলেন, ‘‘আমরা উড়ালপুলের প্রায় পুরোটাই তৈরি করব। উড়ালপুলের অ্যাপ্রোচ রোডের সামান্য অংশ তৈরি করবে রাজ্যের পূর্ত দফতর। এ নিয়ে পূর্ত দফতরের সঙ্গে প্রাথমিক কথা হয়েছে।” পূর্ত দফতরের (রোডস) পুরুলিয়ার নির্বাহী বাস্তুকার নিলয়কুমার মণ্ডল বলেন, ‘‘রেলের প্রস্তাব ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।”
উড়ালপুল তৈরি হতে যাচ্ছে শুনে স্বস্তিতে আদ্রাবাসী। প্রতি দিন রেললাইন পেরিয়ে কাশীপুরের স্কুলে যান আদ্রার বেনিয়াসোল এলাকার বাসিন্দা শিক্ষক সিদ্ধার্থ পাল। একই ভাবে রেলগেট পেরিয়ে ছেলেকে স্কুলে দিয়ে আসা, নিয়ে আসা করেন ব্যবসায়ী দিলীপ মোদী। তাঁদের কথায়— ‘‘প্রতি দিনই পার হতে গিয়ে দেখি রেলগেট বন্ধ। তাই অন্তত আধ ঘণ্টা বেশি সময় নিয়েই বাড়ি থেকে বের হই। সেই দুর্ভোগ যত তাড়াতাড়ি মেটে ততই ভাল।’’
রেলকর্মী সংগঠনগুলি জানাচ্ছে, আগে এক বার উড়ালপুল তৈরির জন্য মাটি পরীক্ষা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নির্মাণ কাজ আর হয়নি। এ বার কী হয়, তা নিয়ে কিছুটা হলেও সংশয় এখনও রয়ে গিয়েছে। তবে মোটের উপরে তাঁরা খুশিই। মেনস কংগ্রেসের নেতা সুব্রত দে, রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় জানান, রেলমন্ত্রী থেকে শুরু করে রেলের সমস্ত মহলে ধারাবাহিক ভাবে তাঁরা উড়ালপুল তৈরির দাবি জানিয়ে আসছিলেন। মেনস ইউনিয়নের নেতা গৌতম মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আদ্রার উড়ালপুল তৈরিতে লাগাতার আন্দোলন হয়েছে। রেল ও রাজ্য সরকারে দড়ি টানাটানিতে এত দিন কাজ হয়নি। আশা করব এ বার দাবি পূরণ হবে।”