পুজো মরসুম পার হয়ে যাওয়ার বিষন্নতা কাটিয়ে বাঁকুড়ার বিভিন্ন এলাকার মানুষ মেতে উঠেছে জগদ্ধাত্রী পুজোয়। ঠিক দুর্গাপুজোর মতোই বাঁকুড়া জেলার বিভিন্ন এলাকায় পারিবারিক ও বারোয়ারি জগদ্ধাত্রী পুজোতে কোথাও সাবেকিয়ানা, কোথাও থিমের বাহার দেখা যাচ্ছে। তরুণ প্রজন্মের মন টানতে ‘ফ্রি ওয়াইফাই জোন’ হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে মণ্ডপ সংলগ্ন এলাকাকে।
পাত্রসায়রের বামিরা গ্রামের বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ির শতাব্দী প্রাচীন জগদ্ধাত্রী পুজো এখনও প্রাচীন রীতিনীতি বহন করে চলেছে। বৈদ্যুতিক আলোর পরিবর্তে দেবীর আরাধনা হয় হ্যাজাকের আলোয়। আদিবাসী মানুষের দান করা কাঠে এখনও দেবীর যজ্ঞ করা হয়। পুজোর দু’দিন এলাকার কয়েক হাজার মানুষ দেবীর অন্নভোগ খান। ওই অন্নভোগের চালও দেন এলাকার নিম্ন বর্গিয় মানুষজন।
বন্দ্যোপাধ্যায় বংশের অন্যতম সদস্য আইনজীবী অরূপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, “বহু শতাব্দী প্রাচীন আমাদের পরিবারের এই পুজোর প্রথায় আমরা কোনও রকম পরিবর্তন আনতে নারাজ। পূর্বসূরীরা যে ভাবে দেবীকে আরাধনা করে গিয়েছেন, সেই পরম্পরাই
এখনও বর্তমান।”
পাত্রসায়রের হাটকৃষ্ণনগর দত্তপাড়া যুবগোষ্ঠীর জগদ্ধাত্রী পুজোর এ বার ১৫তম বর্ষ। দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়ির আদলে পুজোর মণ্ডপ তৈরি হয়েছে। পুজো কমিটির সম্পাদক অমৃত গুহঠাকুরতা জানান, পুজো উপলক্ষে রবিবার থেকেই শুরু হয়েছে নানা অনুষ্ঠান। চলবে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত। এলাকার সবস্তরের মানুষ এই পুজোয় মেতে উঠেছেন। অমৃতবাবু বলেন, “পুজো মরসুম পার হয়ে যাওয়ার শূন্যতা অনেকটাই কাটিয়ে দেয় জগদ্ধাত্রী পুজো। প্রতি বছরেই ধুমধাম করে পুজো করি আমরা।”
বিষ্ণুপুরের সলদা সর্বজনীনের জগদ্ধাত্রী পুজোর এ বছর রজত জয়ন্তী। পুজো উপলক্ষে ছ’দিন ব্যাপী নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে পুজো কমিটি। সোমবার পুজোর উদ্বোধন করা হয়। মঙ্গলবার কুমারী পুজো হয়। সন্ধ্যায় নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করেছিল পুজো কমিটি। আগামী চার দিনও বিভিন্ন অনুষ্ঠান থাকছে এখানে।
বিষ্ণুপুরের হিজলডিহা বিবেকানন্দ সেবা সমিতির জগদ্ধাত্রী পুজোর উদ্বোধন হল মঙ্গলবার। পুজো উপলক্ষে এখানে চার দিন ধরে বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার ভগিনী নিবেদিতার জীবন নিয়ে একটি ভক্ত সম্মেলনেরও আয়োজন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সমিতির সম্পাদক বিকাশ পালধী। এ ছাড়া যাত্রা-সহ নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়েছে পুজো উপলক্ষে।
ছাতনা চণ্ডীদাসপল্লি জগদ্ধাত্রী পুজো কমিটির পুজোকে কেন্দ্র করে ছাতনা বাশুলী মন্দিরের প্রাঙ্গণে সাতদিন ধরে মেলা বসে। আজ বুধবার থেকে পুজো শুরু হবে। এই পুজোয় বাহারি আলোকসজ্জার পাশাপাশি এ বারের থিম হিসেবে তুলে আনা হচ্ছে প্রকৃতির নানা রূপকে। মেলার সাতদিনই বিচিত্রানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। আয়োজন করা হয়েছে আদিবাসী নৃত্য প্রতিযোগিতাও।
তবে এ সবকে ছাপিয়ে তরুণ প্রজন্মের মন টানতে পুজো কমিটি মেলা প্রাঙ্গনে ‘ফ্রি ওয়াইফাই’-এর ব্যবস্থাও করেছে। মেলার একশো মিটারের মধ্যে বিনামূল্যেই ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন মেলায় আসা লোকজন।
ছাতনার এই জগদ্ধাত্রী পুজোর এ বার ২১তম বর্ষ। এই মেলা কমিটির সম্পাদক শঙ্কর চক্রবর্তী বলেন, “সাতদিনই হাজার হাজার মানুষের সমাগম হয় মেলা প্রাঙ্গণে। এই জগদ্ধাত্রী পুজো ছাতনাবাসীর অন্যতম বড় উৎসবে পরিণত হয়েছে।’’ তিনি জানান, তরুণ প্রজন্মকে আরও বেশি করে টানতে এ বার ‘ফ্রি ওয়াইফাই’-এর ব্যবস্থা করা হয়েছে।