উদ্ধার হওয়া দুই কিশোরী। —নিজস্ব চিত্র
বাবার বকুনি খেয়ে বাড়ি থেকে পালানোর মতলব এঁটেছিল বছর দশেকের মেয়েটি। সে প্রস্তাবে রাজি করাতে পেরেছিল সমবয়সী বান্ধবীকেও। যেমন ভাবা তেমনি কাজ, পুরুলিয়া স্টেশনে গিয়ে ওরা উঠে বসেছিল ট্রেনে। ‘অ্যাডভেঞ্চার’ অবশ্য খুব বেশি সময় স্থায়ী হয়নি। টাটানগর হয়ে খড়্গপুরে পৌঁছে রেল পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যায় দুই বান্ধবী। তারপর ঠাঁই হয় মেদিনীপুরের এক হোমে। মঙ্গলবার চাইল্ড লাইনের মধ্যস্থতায় পুরুলিয়ায় ফিরল তারা।
পুরুলিয়া শহরের উপকণ্ঠে কাটিন পাড়া এলাকার বছর দশেকের লছমি রাজপুত ও তেলকল পাড়া এলাকার বছর এগারোর কাজল রেওয়ানির থেকে এমনটাই জেনেছেন পুরুলিয়া জেলা চাইল্ড লাইনের কো-অর্ডিনেটর দীপঙ্কর সরকার। তিনি জানান, গত ২ জুন দুই বান্ধবী পুরুলিয়া স্টেশন থেকে টাটানগরগামী কোনও ট্রেনে উঠে পড়ে। বিষ্কুট খেয়ে রাত কাটায় টাটানগর স্টেশনেই। তখনও কারও নজরে আসেনি মেয়ে দু’টো। তিনি জানান, দু’টি পরিবারই যাযাবর সম্প্রদায়ের। স্থায়ী ঘরদোর না থাকলেও বেশ কিছু দিন ধরে এই এলাকাতেই রয়েছেন তাঁরা।
চাইল্ড লাইন সূত্রের খবর, কোথা থেকে এসেছে, এবং কেন— সে বিষয়ে লছমি বা কাজলের কেউই শুরুতে মুখ খুলতে চায়নি। কিছু দিন যেতে ওরা জানায় পুরুলিয়ার ঠিকানা। পরে লছমি হোমের লোকজনের কাছে কবুল করে, ঘরের কাজের বদলে বেশি খেলাধুলো করত বলে বাবা তাকে এক দিন মারধর করে। সে দিনই লছমি ঠিক করে কিছু দিন পিসির বাড়ি থেকে ঘুরে আসবে। আগে সে পরিবারের সঙ্গে টাটানগর হয়ে খড়গপুরে পিসির বাড়িতে এসেছিল। সেই চেনা রাস্তা দিয়েই পালানোর মতলব জানায় বান্ধবীকেও। তারপরেই অভিযান...
পুরুলিয়া জেলা চাইল্ড লাইনের কো-অর্ডিনেটর দীপঙ্করবাবু বলেন, ‘‘ঠিকানা পেতেই মেদিনীপুরের ওই হোম থেকে চাইল্ড লাইন মারফত আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। আমরা দ্রুত ওদের বাবা-মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করি। মঙ্গলবার মেদিনীপুর থেকে দু’জনকে জেলায় পাঠানো হয়।’’ দুপুরের কিছু আগে ওরা জেলা চাইল্ড লাইনের কার্যালয়ে পৌঁছয়। আগে থেকে খবর দেওয়া সত্বেও মেয়ে দু’টির বাড়ির লোকজন কেউই তাদের নিতে আসেনি বলে দাবি জেলা চাইল্ড লাইনের। শেষমেষ দফতরের কর্তারাই দুই বান্ধবীকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।
মেয়েদের খুঁজে পেয়ে স্বাভাবিক ভাবেই খুশি পরিজনেরা। কাজলের মা মুন্নি রেওয়ানি বলেন, ‘‘মেয়েকে কোথায় না কোথায় খুঁজেছি। প্রথমে ভেবেছিলাম কাছে পিঠে কোথাও গিয়েছে। কিন্তু পাইনি। কিছু দিন আগে খবর পাই মেয়ে মেদিনীপুরে রয়েছে।’’ দিন কুড়ি পরে ঘরে ফিরে খুশি বাড়ি ছেড়ে পালানো দুই বান্ধবীও। দু’জনেই বলছে, ‘‘নাঃ আর পালাব না!’’ নিজেদের শুধরে নিয়ে পরিজনেরাও জানাচ্ছেন, এ বার বাড়তি সতর্ক হতে হবে।