Nituria

সরস্বতী পুজোয় পুরোহিত ঝিলিক

‘জয় জয় দেবী...’ ,মন্ত্র উচ্চারণ করছে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী ঝিলিক বন্দ্যোপাধ্যায়। শুনছেন স্কুলের অন্য পড়ুয়া এবং শিক্ষকেরা।

Advertisement

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল

নিতুড়িয়া শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০২০ ০০:১২
Share:

অর্চনা: বিন্দুইডি প্রাথমিক স্কুলে। নিজস্ব চিত্র

‘জয় জয় দেবী...’ ,মন্ত্র উচ্চারণ করছে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী ঝিলিক বন্দ্যোপাধ্যায়। শুনছেন স্কুলের অন্য পড়ুয়া এবং শিক্ষকেরা। বাগদেবী আরাধনায় এমনই আয়োজন করল পুরুলিয়ার নিতুড়িয়া ব্লকের বিন্দুইডি প্রাথমিক স্কুল।

Advertisement

সরস্বতী প্রতিমা পছন্দ করা হোক বা আলপনা দেওয়া, মণ্ডপ সাজানো হোক বা অন্য কাজ— সব কিছুই করে খুদে পড়ুয়ারা। তবে পুরোহিত-ই বা বাইরে থেকে আসবেন কেন? প্রশ্নটা উঠেছিল আগে। তাই ঠিক হয়, এ বার সরস্বতী পুজোর পুরোহিত হবে স্কুলেরই এক ছাত্রী।

ছাত্রীকে দিয়ে পুজো করানোর ভাবনা মাথায় এসেছিল স্কুলের প্রধান শিক্ষক সৌমেন্দ্রনাথ মণ্ডলের। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন সহ-শিক্ষকদের সঙ্গে। সহমত হন তাঁরাও। কিন্তু পুরোহিত কে হবে? ঝিলিকের নাম ওঠার পরে আলোচনা দীর্ঘায়িত হয়নি। কারণ, ঝিলিক স্কুলের শিশু সংসদের প্রধানমন্ত্রী। আবৃত্তিতেও পুরস্কৃত। পুজো করতে হবে শুনে একটু ঘাবড়েছিল সে। কিন্তু একটু একটু করে সাহস সঞ্চয় করে ঝিলিক।

Advertisement

বুধবার সকালে মাহেন্দ্রক্ষণ। স্কুলে হাজির শতাধিক পড়ুয়া। মেয়েকে লাল পাড়, সাদা শাড়ি পরিয়ে স্কুলে পাঠিয়েছিলেন ঝিলিকের মা তারা বন্দ্যোপাধ্যায়। পুজো শুরু হয় নির্ধারিত সময়ে। মন্ত্রোচ্চারণ থেকে আরতি—নিখুঁত ভাবে করে ঝিলিক। পুজো শেষে ওই ছাত্রী বলে, ‘‘প্রথমে একটু ভয় করছিল। ঠিকমতো মন্ত্র উচ্চারণ করতে পারব কি না, তা নিয়ে সংশয় ছিল। সকলে মিলে উৎসাহ ও সাহস দিয়েছিলেন।” আর সৌমেন্দ্রনাথবাবুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘পুরোহিত নির্বাচন নিয়ে বিশেষ ভাবতে হয়নি। সকলে মিলেই ঠিক করেছিলাম, ঝিলিক-ই হবে পুরোহিত। ও খুব ভাল আবৃত্তি করে। সম্প্রতি স্কুলের বার্ষিক অনুষ্ঠানে এসে ওর আবৃত্তি শুনেছিলেন সর্বশিক্ষা মিশনের ডিপিও বিকাশ মজুমদার। ঝিলিককে তিনি পুরস্কৃত করেছিলেন। পড়াশোনায় ক্লাসে ধারাবাহিক ভাবেই প্রথম স্থান পেয়ে আসছে ও। তাই অন্য কারও কথা ভাবিনি।”

খুশি ঝিলিকের বাবা দুর্গাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়। ঘটনাচক্রে, তিনি আবার পেশায় পুরোহিত। ঝিলিকদের স্কুলের পুজো তিনি-ই করতেন। বললেন, ‘‘দিন কুড়ি ধরে মেয়েকে শিখিয়েছিলাম, কী করে মন্ত্র উচ্চারণ করতে হয়। পুজোর খুঁটিনাটি শিখিয়েছিলাম। ও নিখুঁত ভাবেই পুজো করেছে। তাঁর সংযোজন, ‘‘ছেলেরাই পুজো করবে, মেয়েরা করবে না—এটা কাম্য নয়। মেয়েদেরও পুজো করার অধিকার আছে। তাই শিক্ষকদের প্রস্তাবে সায় দিতে দেরি করিনি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন