শ্লীলতাহানির নালিশ, গ্রেফতার হস্টেল কর্মী

ছাত্রীর মায়ের অভিযোগ, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি স্কুলের ম্যানেজারের পোষা কুকুর আঁচড়ে দেয় তাঁর মেয়েকে। আকাশ নিজের মোটরবাইকে ছাত্রীটিকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। ফেরার পথে একটি ফাঁকা জায়গায় মোটরবাইক থামিয়ে তিনি ওই ছাত্রীর শ্লীলতাহানী করেন বলে অভিযোগ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০১৮ ০০:৫৩
Share:

আকাশ মণ্ডল। নিজস্ব চিত্র

নবম শ্রেণির এক ছাত্রীকে শ্লীলতাহানী করার অভিযোগ উঠল স্কুলেরই এক হস্টেল কর্মীর বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বাঁকুড়া সদর থানার পোয়াবাগান সংলগ্ন দামোদরপুর এলাকার একটি বেসরকারি স্কুলের ঘটনা। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত ব্যক্তি আকাশ মণ্ডল ছাতনার ঘরঘরিয়া এলাকার বাসিন্দা। শুক্রবার রাতে বাঁকুড়া মহিলা থানায় আকাশের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন বর্ধমানের বাসিন্দা ওই ছাত্রীর মা। তাঁর বিরুদ্ধে পকসো আইনে (প্রোটেকশন অব চিল্ড্রেন ফর্ম সেক্সুয়াল অফেন্সেস অ্যাক্ট) শ্লীলতাহানীর মামলা রুজু হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

Advertisement

ছাত্রীর পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, মাস তিনেক আগে বর্ধমানের একটি স্কুল থেকে নবম শ্রেণির ওই ছাত্রীকে দামোদরপুরের স্কুলে ভর্তি করানো হয়। স্কুলের হস্টেলে থেকেই সে পড়াশোনা করছিল। ছাত্রীর বাবা পেশায় কাপড় ব্যবসায়ী।

ছাত্রীর মায়ের অভিযোগ, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি স্কুলের ম্যানেজারের পোষা কুকুর আঁচড়ে দেয় তাঁর মেয়েকে। এরপর ম্যানেজার হস্টেলের কর্মী আকাশকে নির্দেশ দেন, ওই ছাত্রীকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য। আকাশ নিজের মোটরবাইকে ছাত্রীটিকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। ফেরার পথে একটি ফাঁকা জায়গায় মোটরবাইক থামিয়ে তিনি ওই ছাত্রীর শ্লীলতাহানী করেন বলে অভিযোগ। হস্টেলে ফিরে ওই ছাত্রী প্রথমে তার বান্ধবীদের ঘটনাটি জানায়। এরপর রাতেই বান্ধবীদের নিয়ে গিয়ে স্কুলের ম্যানেজার রঞ্জিৎ সিংহের কাছে বিষয়টি নিয়ে মৌখিক অভিযোগ করে সে।

Advertisement

ছাত্রীর বাবা শনিবার বাঁকুড়া সদর থানার সামনে দাবি করেন, “স্কুলের ম্যানেজার ও ওই হস্টেল কর্মী আমার মেয়েকে ঘটনাটি চেপে যাওয়ার জন্য চাপ দিয়েছিলেন। ওদের ভয়ে মেয়ে আমাদের প্রথমে কিছুই জানায়নি।’’ কী ভাবে জানলেন ঘটনার কথা? ছাত্রীর বাবা জানান, শুক্রবার স্কুল থেকে ফোনে জানানো হয়, তাঁর মেয়েকে ছাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁদের মেয়েকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে বলা হয়। তিনি বলেন, “আমরা ওই ফোন পেয়ে হতবাক হয়ে যাই। পরে স্কুলে এসে মেয়ের সঙ্গে কথা বলে ঘটনাটি জানতে পারি। এরপরেই থানায় অভিযোগ দায়ের করি।”

স্কুলের ম্যানেজার রঞ্জিৎবাবু অবশ্য দাবি এ দিন করেন, ‘‘ওই ছাত্রীর কাছে মৌখিক অভিযোগ পাওয়ার পরেই অভিযুক্ত আকাশকে স্কুলের চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। ঘটনার পরেই ফোনে ওই ছাত্রীর পরিবারকে সব জানানো হয়েছিল।’’ তাঁর বিরুদ্ধে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ রঞ্জিৎবাবু মানতে চাননি।

ওই ছাত্রীকে স্কুল থেকে বরখাস্ত করা হল কেন? রঞ্জিৎবাবু দাবি করেন, “হোলির দিনে ওই ছাত্রী-সহ কয়েকজন মেয়ে হস্টেলে ঝামেলা করেছিল। সেই কারণে ছাত্রীদের পরিবারকে বিষয়টি জানিয়ে সতর্ক করা হয়েছিল মাত্র। কাউকে বরখাস্ত করা হয়নি।”

তবে আকাশের সহকর্মীদের অনেকেই দাবি করেছেন, তাঁর বিরুদ্ধে তোলা শ্লীলতাহানির অভিযোগ বিশ্বাস করতে পারছেন না। অনেকেই দাবি করছেন, দীর্ঘদিন ধরে আকাশ ওই স্কুলে কাজ করলেও কারও সঙ্গে অসভ্য আচরণ করেছেন বলে আগে অভিযোগ ওঠেনি। আকাশ অবশ্য সংবাদ মাধ্যমের কাছে কিছু বলতে চাননি।

স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর ছয়েক আগে দামোদরপুরে ওই বেসরকারি স্কুলটি গড়ে ওঠে। প্রথম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় পাঁচশো পড়ুয়া রয়েছে। স্কুলে ছেলে ও মেয়েদের জন্য আলাদা হস্টেল রয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, আকাশকে গ্রেফতার করে ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। স্কুলের বিরুদ্ধে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার যে অভিযোগ উঠেছে, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে বাঁকুড়া মহিলা থানা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন