বক্তা: পুরুলিয়ার রবীন্দ্রভবনে দিব্যেন্দুবাবু। নিজস্ব চিত্র
বেঁধে দেওয়া সময়ে কাজ হয়নি। অগত্যা কন্যাশ্রীদের শরণ নিল প্রশাসন।
নির্মল হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা এখনও পুরুলিয়া থেকে অনেক দূরে। পঞ্চায়েত ভোটের আগে বলা হয়েছিল, অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে রঘুনাথপুর মহকুমাকে নির্মল ঘোষণা করা হবে। সেটাও সম্ভব হচ্ছে না। শনিবার পুরুলিয়ার রবীন্দ্র ভবনে একশো দিনের কাজ সংক্রান্ত একটি সভায় যোগ দিতে এসেছিলেন রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের অতিরিক্ত সচিব দিব্যেন্দু সরকার। সেখানে উপস্থিত কন্যাশ্রীদে তিনি বলেন, ‘‘বাবা-মাকে ধরে রাজি করাতে হবে শৌচাগার বানানোর জন্য। বাড়িতে তো হবেই, অন্যেরাও করবে। আমি বিশ্বাস করি না, দশ জন মিলে বললে এই কাজ হবে না। তোমাদের উপরেই নির্ভর করছি।’’
কাজে গতি আনতে চলতি বছরেই নির্মল বাংলা প্রকল্পে স্বনির্ভর দলের মহিলাদের যুক্ত করা হয়েছে। এ বার জেলার বিভিন্ন স্কুলের কন্যাশ্রীদেরও প্রকল্পে যুক্ত করছে রাজ্য পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর। শনিবার পুরুলিয়ায় এ কথা জানিয়েছেন দিব্যেন্দুবাবু। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১২ সালে এই প্রকল্পে জেলায় কাজ শুরু হয়েছিল। তখন জেলার ৫ লক্ষ ৩১ হাজার ৭৮২টি পরিবারের মধ্যে ৯৮,২১৭টিতে শৌচাগার ছিল। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লক্ষ ৩৩ হাজার ৫৬৫টি পরিবারে শৌচাগার গড়ার। ঠিক ছিল, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭-র মধ্যে কাজ শেষ হবে। হয়নি। এখনও ১ লক্ষ ৯০ হাজার ১৫৭টি শৌচাগার গড়ার বাকি।
সরকারি পরিকাঠামোর উপরে নির্ভর করে এই কাজ সময়ে শেষ করা সম্ভব কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে প্রশাসনের অন্দরেই। এ দিন দিব্যেন্দুবাবু বলেন, ‘‘এই জেলায় কাজের গতি আনার চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলাম আমরা। কিন্তু এগনো যায়নি। এ বার দায়িত্ব নিতে হবে কন্যাশ্রীদেরই।’’ তিনি মনে করিয়ে দেন, এই রাজ্যের নদিয়া ছিল দেশের প্রথম নির্মল জেলা। কিন্তু পুরুলিয়া এখনও পিছিয়ে। দিব্যেন্দুবাবুর প্রশ্ন, ‘‘একশো দিনের কাজের প্রকল্পে পারলে এই কাজে কেন পিছিয়ে থাকব?’’ সভায় উপস্থিত স্বনির্ভর দলের মহিলাদের উদ্দেশেও একই কথা বলেন তিনি। দিব্যেন্দুবাবুর কথায়, ‘‘আপনারা কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লড়ছেন, মদের বিরুদ্ধে পথে নেমেছেন, বাল্য বিবাহের বিরুদ্ধে লড়ছেন। এই একটা কাজ কেন হবে না?’’
এ দিনের সভায় উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদ মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো, সাংসদ মৃগাঙ্ক মাহাতো। জেলাশাসক অলকেশপ্রসাদ রায় জানিয়েছেন, পুরুলিয়ায় কন্যাশ্রী প্রকল্পের আওতায় মোট ৯৪ হাজার ছাত্রী রয়েছে। সচেতনতা গড়তে তাদেরই কাজে লাগানো হবে। জেলা পরিষদের সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘গ্রামের মেয়েরা যখন শৌচাগার গড়ার কথা বলবে, সেই কথার আলাদা একটা গুরুত্ব থাকবে। বাড়ির মেয়েদের সম্ভ্রমের বিষয়টি শৌচাগারের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে।’’
সভায় উপস্থিত বলরামপুর লালিমতী গার্লস হাইস্কুলের ছাত্রী শম্পা পাণ্ডা, বর্ষা পাল, নেহা কুণ্ডু, পিঙ্কি সাউ, প্রিয়া মহান্তিরা জানিয়েছে, ছবিটা বদলে দিতে পারবে বলে তারা।