ধোঁয়ায় বিপাকে পথসাথী

পুরুলিয়া-বোকারো ও পুরুলিয়া-রাঁচি রাস্তার গুরুত্বপূর্ণ এই মোড়ে ২০১৬-র অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে উদ্বোধন হয় পান্থশালাটির। জেলার মধ্যে দ্বিতীয় এই পান্থশালাটি তৈরি করতে খরচ হয়েছিল প্রায় আড়াই কোটি টাকা। এমনিতে নিরিবিলি, নৈসর্গও মনভোলানো।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৭ ০৬:২০
Share:

প্রতীকী ছবি।

ডাইনিং হলের মেঝে, বেসিন, চেয়ার, টেবিল— সর্বত্র কালো আস্তরণ। শতবার ধুলেও মলিনত্ব যাবে না। ধবধবে সাদা চাদর পাতলে কিছুক্ষণের মধ্যেই কয়লার গুঁড়োয় হয়ে যাবে সেটার দফারফা। উদ্বোধনের পরে বছর ঘুরতে চলল। কিন্তু পুরুলিয়ার চাষ মোড়ের সরকারি পান্থশালা ‘পথের সাথী’-র দূষণের ছবিতে কোনও বদল দেখা গেল না বলে অভিযোগ।

Advertisement

পুরুলিয়া-বোকারো ও পুরুলিয়া-রাঁচি রাস্তার গুরুত্বপূর্ণ এই মোড়ে ২০১৬-র অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে উদ্বোধন হয় পান্থশালাটির। জেলার মধ্যে দ্বিতীয় এই পান্থশালাটি তৈরি করতে খরচ হয়েছিল প্রায় আড়াই কোটি টাকা। এমনিতে নিরিবিলি, নৈসর্গও মনভোলানো। কিন্তু সমস্যাটা হল, পান্থশালার একেবারে গা ঘেঁষে রয়েছে একটি কয়লার কারখানা। সেখানে কাঁচা কয়লা পুড়িয়ে কোক কয়লা তৈরি করা হয়। ওই কারখানার দৌলতে গাছের সবুজ পাতা হয়ে থাকে কুচকুচে কালো। জানালা খুললেই ধোঁয়ায় ঢেকে যায় ঘরদোর। নির্মাণের সময়েই অনেকে এই নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। প্রশাসন তখন জানিয়েছিল, প্রয়োজনে বন্ধ করে দেওয়া হবে।

ওই পান্থশালা পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন একটি স্বনির্ভর দলের মহিলারা। তাঁদের অভিযোগ, উদ্বোধনের সময়ে কারখানা সাময়িক ভাবে বন্ধ রাখা হলেও, কিছু দিন পরে ফের তলে তলে চালু করে দেওয়া হয়। তার পরেই শুরু হয় মূল সমস্যা। ঘরদোর কালো গুঁড়োয় ভরে থাকছে। রান্নাঘরের জানালা বন্ধ করে রেখেও নিস্তার নেই। স্বনির্ভর দলের সদস্য লছমি নাথ বলেন, ‘‘বন্ধ জানালায় সামান্য যে ফাঁক থাকে, সেখান দিয়ে কয়লার গুঁড়ো চলে আসে। সব সময় খাবার দাবার ঢেকে রাখতে হয়।’’

Advertisement

তাঁদের দাবি, সাধ্য মতো সব সময়ে ধুয়ে মুছে ঘরদোর পরিষ্কার করে রাখেন। কিন্তু তাতে কোনও লাভই হয় না। অতিথিরা পরিচ্ছন্নতা নিয়ে অভিযোগ করেন। স্বনির্ভর দলের পুষ্প মাহাতো, আশালতা মাহাতোরা বলেন, ‘‘খালি পায়ে দু’কদম হাঁটলেই টের পাওয়া যায় মেঝের কী অবস্থা। জানালা সব সময়ে বন্ধ রেখেই এই দশা। চাদর, টেবিল ক্লথ ধুয়ে যে ছাদে মেলব তারও জো নেই। ’’

স্বনির্ভর দলের মহিলাদের অভিযোগ, সমস্যার কথা প্রশাসনকে জানিয়েও কোনও কাজের কাজ হয়নি। কয়েক মাস আগে পুরুলিয়ায় একটি কর্মসূচিতে যোগ দিতে এসে ওই পান্থশালা পরিদর্শন করেছিলেন রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের সচিব ছোটেন ডি লামা। তিনি দূষণের সমস্যার কথা স্বীকার করে নিয়ে সেটি রোখার আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু তার পরেও ছবিটা একই রয়ে গিয়েছে।

জেলা স্বনির্ভর গোষ্ঠী ও স্বনিযুক্তি প্রকল্প বিষয়ক দফতর ওই পান্থশালাগুলি দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে। দফতরের আধিকারিক অমল আচার্য বলেন, ‘‘সমস্যার কথা জেলাশাসককে জানানো হয়েছে।’’ পুরুলিয়া জেলাশাসক অলকেশপ্রসাদ রায় বলেন, ‘‘দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকে বিষয়টি জানাচ্ছি। তাঁরা পদক্ষেপ করবেন।’’

কয়লার কারখানাটিতে গিয়ে ম্যানেজারের খোঁজ মেলেনি। মুখ খুলতে চাননি কর্মীরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন