জীবন-ছন্দে ফিরতে ধরা দিলেন অভিযুক্ত শবররা

এলাকায় কোথাও অপরাধ ঘটলেই, নাম জড়িয়ে যায় শবরদের। অথচ তাঁদের অনেকের ঘরের চালায় খড় নেই। হাঁড়িতে চাল বাড়ন্ত। কেউ কেউ মামলার খরচ জোগাতে সর্বস্বান্ত হন। অনেকে আবার পুলিশের নাগাল এড়াতে ঘর ছেড়ে কর্ণাটক, অসমে চলে গিয়েছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পুঞ্চা শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০২:১০
Share:

শবরদের হাতে উপহার সামগ্রী তুলে দেওয়া হল পুঞ্চায়। নিজস্ব চিত্র।

এলাকায় কোথাও অপরাধ ঘটলেই, নাম জড়িয়ে যায় শবরদের। অথচ তাঁদের অনেকের ঘরের চালায় খড় নেই। হাঁড়িতে চাল বাড়ন্ত। কেউ কেউ মামলার খরচ জোগাতে সর্বস্বান্ত হন। অনেকে আবার পুলিশের নাগাল এড়াতে ঘর ছেড়ে কর্ণাটক, অসমে চলে গিয়েছেন। সেখানেই কিছু কাজ জুটিয়ে রয়ে গিয়েছেন। বাড়ি ফিরতে ভয় পাচ্ছেন। তাঁদের জীবনের স্বাভাবিক ছন্দ হারিয়ে গিয়েছে। তাঁদের সমাজের মূলস্রোতে ফেরাতে পুরুলিয়ার বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ ও প্রশাসন অনুষ্ঠান করে আত্মসমর্পণের ডাক দিচ্ছে। অনেকেই সাড়াও দিচ্ছেন। রবিবার পুঞ্চা থানায় এ ধরনের একটি অনুষ্ঠানে কয়েকজন ধরা দিলেন। মানবাজার, পুঞ্চা, বোরো, বরাবাজার, কেন্দা থানা এলাকা থেকে মোট ৫১ জন ‘ওয়ান্টেড’ আসামি এসেছিলেন। তাঁরা আত্মসমর্পণ করেন। পুলিশ জানিয়েছে, আজ সোমবার তাঁদের আদালতে তোলা হবে।

Advertisement

পুরুলিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পারিজাত বিশ্বাস বলেন, ‘‘বিভিন্ন মামলায় এঁদের খোঁজ করা হচ্ছিল। প্রশাসন ও পুলিশের কথা মেনে ওঁরা আজ এখানে এসেছেন। জেলা প্রশাসন মামলায় তাঁদের আইনি সহায়তা দেবে। এ ছাড়া স্বাভাবিক জীবনে ফেরার জন্য কী ধরনের প্যাকেজ দেওয়া যেতে পারে, তা জেলা প্রশাসন দেখছে।’’

শবরদের সংগঠিত করে অনুষ্ঠানে নিয়ে আসার অন্যতম সহায়ক কলকাতা পুলিশের কর্মী অরূপ মুখোপাধ্যায় অভিযোগ করেন, এলাকায় যে কোনও অপরাধ হলেই পুলিশের একাংশ শবরদের দায়ী করেন। এই মানসিকতা ছাড়তে হবে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের আশ্বাস, কাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা চলছে তাও খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে। তেমন হলে এ বিষয়ে আলাদা অভিযোগ দায়ের হতে পারে।

Advertisement

বস্তুত ইংরেজ আমলা থেকেই শবরদের উপরে ‘অপরাধপ্রবণ’ তকমা পড়ে গিয়েছিল। দরিদ্র শবরদের এই বদনাম ঘোচাতে যাঁরা এগিয়ে এসেছিলেন, তাঁদের মধ্যে লেখিকা মহাশ্বেতাদেবী অন্যতম। তিনি শহরদের স্বাবলম্বী করার চেষ্টাও করে গিয়েছিলেন। সে কারণেই তাঁকে সবাই ‘শবর জননী’ নামে ডাকেন।

শবরদের পাশে দাঁড়ানোর পুলিশ ও প্রশাসনের এই চেষ্টাকে তাই অনেকে ভাল চোখেই দেখছেন। আশাবাদী শবরদের অনেকেও। পুঞ্চা থানার দামোদরপুর গ্রামের বাসিন্দা তপন শবর বলেন, ‘‘২০০৮ সালে আমার নামে ডাকাতি, ছিনতাইয়ের অভিযোগ দায়ের হয়। জামিনে ছাড়া পেয়ে জেলখাটার ভয়ে শ্রমিকের কাজ নিয়ে চেন্নাই পালিয়েছিলাম। পুলিশ এসে বাড়িতে খোঁজখবর নিত। কিন্তু বাইরেও আর পালিয়ে থাকতে ভাল লাগছিল না। সম্প্রতি বাড়ি ফিরেছি। সবাই বলল, আমার মামলা নতুন করে দেখা হবে। যদি ওই মামলা থেকে রেহাই পাই, তাই ধরা দিলাম।’’ তিনি জানান, পুলিশ-প্রশাসন তাঁকে আশ্বাস দিয়েছে, এখানেই যাতে কাজ করে তিনি খেতে পারেন, সে ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।

পুঞ্চার কৈড়া গ্রামের সীতারাম শবরকে নদী থেকে পাম্প মেশিন চুরির অভিযোগে পুলিশ ধরেছিল। তাঁর অভিযোগ, পুলিশ তাঁকে অন্য একজনের নামে জোর করে সই করায়। সেই মামলায় তাঁর নাম জডিয়ে গিয়েছিল। মামলা থেকে অব্যাহতি পেতে তিনি এ দিন থানায় এসেছিলেন। তাঁকেও একই আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

এ দিনের অনুষ্ঠানে মানবাজারের বিধায়ক তথা অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরের প্রতিমন্ত্রী সন্ধ্যারানি টুডু, ডিএসপি (ডিইবি) অনিমেষ ঘটক, মানবাজারের সিআই সুবীর কর্মকার, পুঞ্চার বিডিও অজয় সেনগুপ্ত প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা উপস্থিত শবরদের হাতে ব্যাগ, কম্বল, চাদর প্রভৃতি তুলে দিয়ে সমাজের মূলস্রোতে ফেরার ডাক দেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন