গত মরসুমে খরায় বিঘার পর বিঘা জমির ফসল শুকিয়ে গিয়েছে মাঠেই। এ দিকে চাষের জন্য ব্যাঙ্ক থেকে নেওয়া ঋণ আরও ভারী হয়ে উঠেছে চাষিদের কাঁধের উপর। এ বারের ছবিটা অবশ্য অন্য রকম হতে পারে। রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু জানান, এই বছর থেকে প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনার অন্তর্ভুক্ত হবেন রাজ্যের চাষিরা। শুধু তাই নয়, মন্ত্রী বলেন, ‘‘এ রাজ্যে ফসলের বিমা করার জন্য চাষিদের কোনও টাকা দিতে হবে না। প্রিমিয়ামের সমস্ত খরচ বহন করবে রাজ্য সরকার।’’
কারা পাবেন সুবিধা?
জেলা কৃষি দফতর জানিয়েছে, পুরুলিয়ায় আপাতত বিমার আওতায় আসছে আমন ধান এবং ভুট্টা। এত দিন কৃষান ক্রেডিট কার্ড থাকলে তবেই চাষিরা এই সুবিধা পেতেন। এ বারে সমস্ত চাষিই বিমার সুরক্ষা পাবেন। কৃষিদফতর জানিয়েছে, জেলার তিন লক্ষ পনেরো হাজার চাষি পরিবার রয়েছে। জেলা কৃষি দফতরের উপ অধিকর্তা আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, কিষান ক্রেডিট কার্ড না থাকলেও ওই চাষিরা ফসলের বিমা করাতে পারবেন। জমির পড়চা এবং ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের নথি-সহ ব্লক কৃষি দফতরে আবেদন করতে হবে।
বিমার জন্য আবেদন করতে হলে জমি নিজের নামে না থাকলেও চলবে। দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, উত্তরাধিকার সূত্রে যাঁরা পারিবারিক জমিতে চাষ করে আসছেন তাঁরা বিমা করাতে পারবেন। ভাগচাষিরাও এই সুবিধা পাবেন। দফতরের এক আধিকারিক জানান, সে ক্ষেত্রে ওই জমিতে চাষ করার প্রমাণ হিসাবে পঞ্চায়েত প্রধানের থেকে তাঁদের শংসাপত্র নিয়ে আসতে হবে।
দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, যে সমস্ত চাষিরা চলতি বছরে চাষের জন্য ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়েছেন, তাঁদের নাম ইতিমধ্যেই বিমার আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। বিমার তালিকায় নাম উঠেছে কি না তা জানতে ওই চাষিদের ব্যাঙ্কের শাখায় গিয়ে খোঁজ নিতে হবে।
কোন পরিস্থিতিতে মিলবে ক্ষতিপূরণ?
দফতরের আধিকারিক বিধানচন্দ্র সাহানা জানান, বীজ বোনার পরে যদি বৃষ্টির অভাবে চারা না বেরোয়, ফসল মাঠে শুকিয়ে যায় বা অন্য কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফসলের ক্ষতি হয়, তাহলে ফসলের জন্য ক্ষতিপূরণ পাবেন চাষি।
ধানের ক্ষেত্রে গ্রাম পঞ্চায়েতের এক একটি মৌজায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাপ করে সেই অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। ভুট্টার ক্ষেত্রে ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হবে ব্লকের যে কোনও একটি পঞ্চায়েত এলাকার বিচারে। জেলা কৃষি দফতরের উপ-অধিকর্তা আশিসবাবু জানিয়েছেন, ফসল বিমায় আমন ধানের ক্ষেত্রে হেক্টর পিছু সর্বোচ্চ ৩৪,৭১০ টাকা এবং ভুট্টার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১৬,৯৬৮ টাকা ক্ষতিপূরণ পেতে পারেন চাষিরা।
কৃষি দফতর জানিয়েছে, ফসল বিমার সুবিধা পেতে হলে আবেদন করতে হবে চলতি মাসের ৩১ তারিখের মধ্যে। ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে দফতরের বিভিন্ন ব্লকের আধিকারিকদের নিয়ে জেলা স্তরে বৈঠকও হয়েছে।
কিন্তু আবেদনের শেষ দিন এগিয়ে এলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিমার কথা জানিয়ে যথেষ্ট প্রচার করা হয়নি বলে অভিযোগ তুলেছেন জেলার চাষিদের একাংশ। ঝালদার পুস্তি গ্রামের ক্ষুদ্র চাষি নীলাম্বর কুইরি, ভাকুয়াডি গ্রামের নরহরি মাহাতো, ডুড়কু গ্রামের উমাচরণ মাহাতো, পুঞ্চার বালকডি গ্রামের সুনীলকুমার মাহাতো, হুড়ার দুর্গাদাস কর্মকারেরা গত মরসুমে ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কেউ কোনও রকমে সেচ দিয়ে বীজটুকু বাঁচাতে পেরেছেন। কেউ তা-ও পারেননি। তাঁদের কেউই এই বিমার কথা জানেন না বলে দাবি করেছেন। জেলা কৃষি দফতর অবশ্য জানিয়েছে, ইতিমধ্যেই বিভিন্ন ব্লকে ফর্ম পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। জেলার সবর্ত্রই এই প্রকল্পের বিষয়ে প্রচার করা হবে।