BLO in West Bengal

এক পা নেই, অন্য পায়ে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ি বাড়ি ঘুরে ৯৯% কাজ সেরে ফেললেন বাঁকুড়ার বিএলও!

এসআইআরের কাজের জন্য বহু বিএলওর যখন গলদঘর্ম অবস্থা, তখন নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই কাজ প্রায় শেষ করে ফেলেছেন বাঁকুড়ার এক বিএলও, শোভানারা বায়েন।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০২৫ ১৮:০০
Share:

এ ভাবেই গণনাপত্র বিলি এবং সংগ্রহের কাজ করে চলেছেন শোভনারা বায়েন। —নিজস্ব চিত্র।

ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন বা এসআইআরের কাজ করতে গিয়ে কোথাও ‘কাজের চাপে’ বিএলও আত্মহত্যা করছেন। কোথাও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। কোথাও কাজ থেকে অব্যাহতি চেয়ে চলছে ধর্না। কোথাও কেঁদে ভাসাচ্ছেন ‘অসুস্থ’ বিএলও। তবে ব্যতিক্রম আছে। এমনই এক ‘ব্যতিক্রমী’ বুথ স্তরের আধিকারিক শোভানারা বায়েন।

Advertisement

জন্ম থেকে এক পা নেই শোভানারার। এক পায়ে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ি বাড়ি ঘুরে তিনি এসআইআরের কাজ প্রায় শেষ করে এনেছেন। বিশেষ ভাবে সক্ষম আইসিডিএস কর্মীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ প্রশাসনিক কর্তারা।

বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর ব্লকের বেলশুলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের জামশুলি গ্রামের শোভানারা জন্ম থেকে বিশেষ ভাবে সক্ষম। তাঁর একটি পা হাঁটুর নীচ থেকে নেই। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা তাঁকে দমিয়ে রাখতে পারেনি কখনও। স্নাতকোত্তরের পরে বিএড করেছেন। এখন পেশায় তিনি আইসিডিএস কর্মী। এসআইআরের কাজের জন্য বহু বিএলওর যখন গলদঘর্ম অবস্থা, তখন নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই কাজ শেষ করে এনেছেন শোভানারা।

Advertisement

বাড়ি বাড়ি ঘুরে কাজ করতে হবে জেনে প্রথমে সংশয়ে ছিলেন ওই আইসিডিএস কর্মী। শারীরিক কারণ দেখিয়ে অব্যাহতিও চেয়েছিলেন। কিন্তু প্রশাসনের তরফে সবুজ সঙ্কেত না পেয়ে আর দেরি করেননি। রাজ্য জুড়ে এসআইআরের কাজ শুরু হতেই কোমর বেঁধে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। দায়িত্ব পাওয়ামাত্র নিজের গ্রাম জামশুলির ২৩৮ নম্বর বুথের ১০৩৯ জন ভোটারের বাড়ি বাড়ি ঘুরে গণনাপত্র (এনুমারেশন ফর্ম) বিতরণ করেছেন তিনি।

গত কয়েক দিন ধরে শোভানারার রুটিন হল, সকালে আইসিডিএস কেন্দ্রে কাজ। দুপুরে গ্রামে ঘুরে ঘুরে গণনাপত্র বিলি এবং সংগ্রহ। বিকেলে বাড়ি ফিরে শুরু করেন বিএলও পোর্টালে তথ্য আপলোডের কাজ। কাজ শেষ করতে করতে প্রতি দিনই গভীর রাত হয়ে যায়। দিনের কাজ দিনে শেষ করে ফেলেন। তা-ই ইতিমধ্যে ৯৯ শতাংশ ভোটারের কাছ থেকে গণনাপত্র সংগ্রহ করে তা কমিশনের পোর্টালে আপলোডও করে ফেলেছেন ওই বিএলও।

এসআইআরের ‘কাজের চাপে’ যেখানে শারীরিক ভাবে সুস্থ এবং স্বাভাবিক বিএলওরা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন, সেখানে শোভানারা শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে অজুহাত হিসাবে খাড়া না করতে নারাজ। তিনি বলেন, ‘‘আমার শারীরিক সমস্যা রয়েছে। কিন্তু সে সব ভেবে আমি পিছিয়ে যাইনি। নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব দিয়েছে। সেই কাজটা শেষ করা আমার দায়িত্ব।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘বুথের প্রতিটি বৈধ ভোটার যাতে এসআইআরের ফর্ম পূরণ করে জমা দিতে পারেন এবং তাঁদের তথ্য যাতে নির্দিষ্ট পোর্টালে সময় মতো আপলোড করতে পারি, তার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছি। ৯৯ শতাংশ কাজ শেষ। বাকি কাজ সময়ের আগে শেষ করে ফেলব বলে আশা করছি।’’

শোভানারাকে কুর্নিশ জানিয়েছেন সহকর্মীরা। পার্শ্ববর্তী বুথের বিএলও আবু আলি বায়েন বলেন, ‘‘শারীরিক সমস্যা সত্ত্বেও তিনি যে দ্রুততা এবং দক্ষতার সঙ্গে এসআইআরের কাজ করেছেন তা নিঃসন্দেহে দৃষ্টান্ত।’’ একই কথা বলছেন জামশুলি ২৩৮ নম্বর বুথের বাসিন্দা ইউসুফ শেখও। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের গ্রামেরই মেয়ে। ছোট থেকেই ওকে দেখেছি। ওর লড়াই জানি। বরাবরই ওর ইচ্ছাশক্তির কাছে হার মেনেছে শারীরিক সমস্যা। এ বারেও তা-ই হল।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement