patrasayer

বন্যায় ভাঙা ঘরে ম্লান আনন্দ

পঞ্চমীর সকাল। ঝিঁটেবেড়ার দেওয়ালে মাটি দিচ্ছিলেন হাজরাপাড়ার রবি হাজরা। মাঝে উঠে এক বার শক্ত করে বাঁধলেন ত্রিপলটা। চোখে-মুখে যেন লেগে গত বছরের ভয়াবহ স্মৃতি।

Advertisement

তারাশঙ্কর গুপ্ত

পাত্রসায়র শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০২২ ০৮:৩৯
Share:

পুজোর আগে ভাঙা ঘরের ভরসা ত্রিপল ঠিক করছেন বেলুট হাজরা পাড়ার রবি হাজরা। নিজস্ব চিত্র

মণ্ডপে মা আসার অপেক্ষা। আর এ দিকে অপেক্ষা নিরাপদ ঠাঁইয়ের।

Advertisement

গত বছর পুজোর মুখে শালি নদীর বন্যায় ঘর ভেঙেছিল। আশ্রয় হয়েছিল গ্রামের স্কুলঘর। বছর পেরিয়েছে, তবে ত্রিপল ছাড়া সে ভাবে কোনও ক্ষতিপূরণ মেলেনি বলে অভিযোগ। পাত্রসায়রের বেলুট-রসুলপুর পঞ্চায়েতের বেলুট হাজরাপাড়া, বাগদিপাড়ার ক্ষতিগ্রস্তেরা শারদোৎসবেও ভাঙা ঘরের ক্ষত সারানোয় ব্যস্ত।

পঞ্চমীর সকাল। ঝিঁটেবেড়ার দেওয়ালে মাটি দিচ্ছিলেন হাজরাপাড়ার রবি হাজরা। মাঝে উঠে এক বার শক্ত করে বাঁধলেন ত্রিপলটা। চোখে-মুখে যেন লেগে গত বছরের ভয়াবহ স্মৃতি। বলেছিলেন, “আবহাওয়া খারাপ ছিল। হঠাৎই এক রাতে ফুঁসে উঠল শালি নদী। বাড়িতে জল ঢুকতে শুরু করল। কাছের স্কুলবাড়িতে গিয়ে উঠেছিলাম। বাড়ি পুরোটাই ভেঙে গিয়েছিল। বেঁচে যাওয়া অ্যাসবেস্টস আর সরকারি ত্রিপল দিয়ে কোনও মতে ঘরটা দাঁড় করিয়েছি। পুজোর আগে এই যে দেওয়ালে এক প্রস্ত মাটি দিতে পেরেছি, এটাই অনেক।”

Advertisement

ভাঙা ঘরে কোনও মতে মাটি দিয়ে বাবা-মা, স্ত্রী ও শিশুসন্তানকে নিয়ে দিন কাটছে সম্রাট হাজরারও। নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য সরকারি ক্ষতিপূরণের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন জানিয়ে সম্রাট বলেন, “বন্যায় সব গিয়েছে। পুজোর আনন্দ বলে কিছু নেই। সরকারি ক্ষতিপূরণ তাড়াতাড়ি পেলে বাচ্চাটাকে নিয়ে একটা নিরাপদ মাথা গোঁজার ঠাঁই পাব। আপাতত সেটাই প্রার্থনা।”

ফি বছরের মতো এ বারেও দুর্গাপুজো হচ্ছে বেলুট গ্রামে। গত বছর অভিমানে ওঁদের কেউ কেউ মণ্ডপের দিকে যাননি। এ বার হয়তো যাবেন। বাগদিপাড়ার দিনমজুর শীতল দিগের আক্ষেপ, “ভাঙা ঘরের দেওয়াল দিয়ে রোদ-বৃষ্টি এলেও পুজোর আনন্দ আসে কই? ছোট নাতি-নাতনিগুলোর মুখ চেয়ে পুজো দেখতে যাব। বছর পেরিয়ে গেল। অথচ ত্রিপল ছাড়া এখনও কোনও সরকারি ক্ষতিপূরণ এল না।”

বেলুট-রসুলপুর পঞ্চায়েতের প্রধান তাপস বাড়ি বলেন, “ব্লকে সব জানানো হয়েছে। ত্রিপল দেওয়া হয়েছিল। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির পাশে আমরা রয়েছি।” বিডিও (পাত্রসায়র) নিবিড় মণ্ডলের বক্তব্য, “বন্যায় আংশিক ও সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িগুলির রিপোর্ট জেলায়পাঠানো হয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন